সাম্প্রদায়িকতা: প্রকৃতপক্ষে কি?

ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা, এই দুইটিই এখন বহুল-প্রচারিত শব্দ। ধর্ম শব্দটি এসেছে 'ধৃ' ধাতু থেকে। ধর্ম হল তাই যা মানুষকে ধারণ করে রাখে, মনুষ্যত্বের পথে। অর্থাৎ ধর্ম একটি বিশ্বাস যা মানুষকে একটি সামান্য প্রাণী মাত্র থেকে আরো বেশী চিন্তাশীল ও সংবেদনশীল করে তোলে। পৃথিবীতে বহু আলাদা আলাদা ধর্ম আছে। তাদের আচরন গুলি আলাদা আলাদা হলেও, বিশ্বাস মূলতঃ এক। ঠাকুর যেমন বলেছিলেন, "যত মত তত পথ"। বিভিন্নতা যা কিছু আছে তা আচরনগত এবং দার্শনিকতায়। অতএব মানুষের সাথে মানুষের দৈনন্দিন আদানপ্রদানে ধর্মের খুব একটা প্রাসঙ্গিকতা নেই। না থাকাটাই স্বাভাবিক। আমরা পরস্পরের সঙ্গে মেলামেশা করি, কাজ করি, কথা বলি, মানুষ হিসেবে; ধর্মের প্রতিনিধি হিসেবে নয়। ধর্ম যাই হোক, দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ-বেদনা, চাওয়া-পাওয়া, সুবিধা-অসুবিধা গুলো আমাদের সব মানুষেরই এক। বাড়ির সামনে জল জমলে হিন্দু, মুসলমান, শিখ, জৈন, সকলেরই পা ভিজে যায়।


কোন মুসলমান বন্ধুর বাড়িতে ঈদের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গেলে আমরা হিজাব বা টুপি মাথায় দিই না। শিখ বন্ধুর বাড়িতে মাথায় পাগড়ি বা দোপাট্টার ঘোমটাও টানি না। আমরা আমাদের নিজেদের পরিচয়েই যাই। তাতেই তাদের ভালোবাসা, আদর যত্ন পাই। যদি তা না করতাম, অর্থাৎ তাদের কাছে পৌঁছতে গেলে আমরা যদি তাদের আচরন অনুকরণ করতাম, তাহলেই বরং তাদেরকে অপমান করা হত। কারণ তাতে এটাই প্রমাণিত হত যে আমাদের কাছে তাদের অস্তিত্ব কেবলমাত্র ধর্মভিত্তিক। আমাদের চোখে তারা কেবল এক একটি প্রতীক বিশেষ। তাদের ভিতরের মানুষগুলোর কোন পৃথক মূল্য আমাদের কাছে নেই। একটি মানুষকে সর্বক্ষণ কেবল তার নিজের ধর্মের একজন প্রতিনিধিমাত্র ভাবা, এটাই কি ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের বিভাজন নয়? আর তাছাড়া যে কোন ধর্মের আচরনগুলির প্রকৃত অর্থ না বুঝে কেবল সেগুলিকে অনুকরন করলে, সেই ধর্মকে সম্মান করা হয় কি?


যারা হিন্দুকে হিন্দু, মুসলমানকে মুসলমান বলে তারা সাম্প্রদায়িক, নাকি যারা মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের কেবলমাত্র 'মুসলমান', এই পরিচয়ের বাইরে ভাবতে পারে না, তারাই সাম্প্রদায়িক? ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক বিভাজন কাদের আচরনে অধিক প্রকট সেটা দয়া করে একবার ভাবুন।

Comments

Popular posts from this blog

রথযাত্রা: কুমুদরঞ্জন মল্লিক

কোভিশিল্ড কাহিনী

নব্য কথামালা: শেয়াল ও সারসের গল্প

SSC চাকরি বাতিল: যোগ্য - অযোগ্য বিভাজন আদৌ সম্ভব?