গুষ্টির গুপ্তকথা (গুষ্টি অর্থাৎ GST : Goods and Services Tax)


বিগত কয়েকমাস যাবৎ যে বিশেষ বিষয়টি আসমুদ্র হিমাচলকে আলোড়িত করে তুলছে তা হল GST। এতদিনে অবশ্য আমরা সকলেই GST-র বিষয়ে অল্পবিস্তর জেনে ফেলেছি আর তাই এই লেখাটিতে আমি সেই জানা কথাগুলির চর্বিতচর্বন করা থেকে বিরত থাকছি। তবে যে প্রশ্নটির উত্তর হয়ত আমরা অনেকেই বারবার জ্ঞাতে অজ্ঞাতে খুঁজেছি কিন্তু সদুত্তর পাই নি তা হল এই, যে GST যদি এতই ভাল, তাহলে আমাদের রাজ্য সরকারের তা দ্রুত বলবৎ করতে এত অনীহা কেন? কেন তৃণমূল তা defer করতে এত মরিয়া? চালু করতে যখন আপত্তি নেই তবে পয়লা জুলাই-এর বদলে একমাস, দুমাস বা নিদেনপক্ষে কয়েকদিন বাদে থেকে তা বলবৎ করলে তাদের কী এমন সুবিধা হবে? আবার কেন্দ্রীয় সরকারই বা এই বিশেষ date থেকেই তা চালু করতে এত adament কেন? তাদেরই বা তাতে কী এমন বাড়তি সুবিধা হবে? মোট কথা, what's so special about the particular date of July 1? আমি আজ মূলতঃ সেই প্রশ্নটিরই উত্তর খুঁজতে কলম ধরেছি।


প্রথমেই লিখি যে, উপরোক্ত প্রশ্নটির সঠিক উত্তর পেতে গেলে আমাদেরকে সময়ের সরনি বেয়ে একটু পিছিয়ে যেতে হবে। বুঝতে হবে GST-র পরিপ্রেক্ষিতকে, সংক্ষেপে হলেও জানতে হবে তার উদ্ভবের বর্ণময় ইতিহাসকে। আবার কখনো কখনো হয়তো এমন কিছু কিছু ব্যাপারের উপর বিশেষভাবে দৃষ্টিপাত করতে হবে যা আমাদের, তাৎক্ষনিকভাবে, জানা কথার পুনরুক্তি মনে হয়ে কিঞ্চিৎ বিরক্তিরও উৎপাদন করতে পারে। তাই শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আর পাঠকদের অনুরোধ করছি একটু ধৈর্যশীল হয়ে শেষ পর্যন্ত পড়ার আগেই কোন সিদ্ধান্তে উপনীত না হতে। However, ভনিতা শেষ, আসল কথা শুরু।

GST-র পরিপ্রেক্ষিত ও সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত 


আবহমান কাল থেকে, অর্থাৎ কৃষিযুগের গোড়ার থেকে, মানুষ রাজস্ব বলতে বুঝতো কৃষিজ উৎপাদন থেকে শাসককে দেয় অংশভাগকে। অর্থাৎ land revenue-কে। কিন্তু পরিবর্তনশীল সামাজিক কাঠামোয় ক্রমশঃ যখন শিল্প ( অবশ্য তেলেভাজা শিল্প নয় ) তার স্থান করে নিতে আরম্ভ করে আর সময়ের দাবী মেনে কৃষিকেন্দ্রীক অর্থব্যবস্থা ক্রমশঃ শিল্পকেন্দ্রীক হয়ে উঠতে থাকে, তখন ক্রমশঃ শাসকশ্রেণীও বুঝতে পারে যে রাজস্বেরও একটা কোনো সময়োপযোগী চরিত্রপরিবর্তন জরুরী। সেই প্রেক্ষাপটে আর বিশ্বযুদ্ধের বিপুল খরচের সামাল দিতে জন্ম নেয় বিক্রয়কর নামের এক নতুন করব্যবস্থা। তৎকালীন ভারতবর্ষ যেহেতু বৃটিশ-শাসনাধীন ছিল, তাই মানবসভ্যতায় এই নতুন করব্যবস্থার আগমনের প্রায় সাথে সাথেই ভারতেও তার আবির্ভাব ঘটে। এই ঘটনার অনতিকালের মধ্যেই ভারতবর্ষ স্বাধীনতালাভ করে। কিন্তু তখনো যেহেতু বিক্রয়করের শৈশবাবস্থা কাটেনি, তাই স্বাধীন ভারতের শাসককুল এই নতুন করব্যবস্থাকে বিশেষ গুরুত্ত্ব দেবার প্রয়োজন বোধ করেননি। রাজ্য সরকারগুলির আয়ত্বাধীন হয়েই থেকে গিয়ে সে যেন কিছুটা neglected child-এর মতো ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে থাকে। তারপর গঙ্গা-গোদাবরী দিয়ে বয়ে যায় অনেক জল। কালের নিয়মে একদিকে যেমন একদা প্রবল impact-শালী land revenue তার ক্রমশঃ ক্ষীয়মান আদায়ীকৃত পরিমানের কারনেই রাজস্ব হিসাবে তার গুরুত্ত্ব হারিয়ে কেবলমাত্র জমির মালিকানাস্বত্ত্বের প্রমানপত্রে পরিণত হয়, অপরদিকে কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় আওতাভুক্ত থাকার সুবিধার কারনে এবং সম্পূর্ন দেশে সমানভাবে প্রয়োগযোগ্য হওয়ায় আয়কর ক্রমশঃ প্রবলগুরুত্ত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। অথচ বিক্রয়কর তার আদায়ীকৃত পরিমানের নিরিখে স্বাভাবিকভাবেই ক্রমশঃ স্ফীতিলাভ করতে করতে বিপুলকায় ধারণ করলেও জনমানসে থেকে যায় অবহেলিত ও কেবলমাত্র মুষ্টিমেয় কিছু ব্যবসায়ীর concern হিসাবে। সাধারন ভারতবাসী যেমন "কর" বলতে বোঝেন শুধু "আয়কর", আর "করদাতা" বলতে মনে করেন শুধু সেইসব তথাকথিত "বড়লোকদের" যাঁদের আয়কর দিতে হয়, তেমনি বিক্রয়কর থেকে যায় শুধু বিভিন্ন রাজ্যসরকারের খেয়ালখুশীর খেলনা হিসাবে। সাধারন দরিদ্র মানুষ তাঁদের কষ্টার্জিত অর্থের একটা বৃহদাংশকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে গিয়ে বিক্রয়কররূপে সরকারের হাতে তুলে দিয়েও নিজেদের করদাতা হিসাবে বিশ্বাস করতে ব্যর্থ হন। এই কারণেই দশকের পর দশক স্বাধীন দেশের নাগরিকত্ব ভোগ করেও সরকারী সম্পত্তির উপর তাঁদের কোনো মায়া বা ownership গড়ে ওঠে না। আজও তাই সাধারন ভারতবাসী তাঁদের নিজেদের নির্বাচিত সরকারকে যেন বিজাতীয় জ্ঞানে ঠেলে রাখেন নিজেদের থেকে দূরে আর আশ্চর্যজনকভাবে নিজেদেরই অর্থে অর্জিত সরকারী সম্পত্তিকে নিজেদেরই নির্বাচিত সরকারের কোনো কোনো কাজের প্রতি বিরক্তি বা অসন্তুষ্টির প্রকাশ হিসাবে নির্দ্ধিধায় নষ্ট করতে কোনো কষ্ট বা লজ্জা বোধ করেন না।

এইভাবেই কেটে যায় দীর্ঘ অর্ধশতাব্দী। আসে নতুন সহস্রাব্দ, আসে ২০০০ সাল। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর নজর পড়ে এই অবহেলিত অথচ বিপুল সম্ভামনাময় রাজস্বের দিকে। প্রয়োজন বোধ করেন তিনি এই করব্যবস্থাকে সমগ্র দেশে সুসমভাবে প্রয়োগযোগ্য করে তুলে তার সম্পূর্ণ বিকাশের পথ সুগম করতে আর তার মাধ্যমে দেশ থেকে অসৎব্যবসাকে ক্রমশঃ কোনঠাসা করে তুলে দেশকে নতুন অর্থনৈতিক দিশা দেখাতে। জন্ম হয় GST নামক সম্ভাবনার।

ইতিমধ্যে অবশ্য ভারতের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে আরেকটি এমন যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে গেছে, এখানে যার উল্লেখ না করলে সত্যের অপলাপ হবে আর এই প্রবন্ধের মূল প্রতিপাদ্যও পরিষ্কার হবে না। বিংশ শতাব্দীর অন্তিম দশকের গোড়ায় নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন এক মর্মান্তিক সন্ত্রাসবাদী হামলায় তৎকালীন কংগ্রেস কর্ণধার ( যদিও তখন আর তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না তবুও সেকথা বর্তমানে অনেক কংগ্রেস তথা গান্ধীপরিবার ভক্ত অগ্রাহ্য কোরে তাঁকে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী হিসাবে উল্লেখ করতে এবং এইভাবে তাঁকে জওহরলাল নেহেরু, লালবাহাদুর শাস্ত্রী ও ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে একই পংক্তিতে বসাতে পছন্দ করেন যেখানে বাস্তবে তাঁর স্থান হওয়া উচিত মোরারজী দেশাই, চৌধুরী চরন সিং, বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ, চন্দ্রশেখর, পি ভি নরসিমহা রাও, এইচ ডি দেবগৌড়া, ইন্দ্রকুমার গুজরাল ইত্যাদি প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে একাসনে, সেই ) রাজীব গান্ধীর অকালমৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেস দলটি সাময়িকভাবে তার পরিবারতান্ত্রিকতার চরিত্র ত্যাগ কোরে প্রধানমন্ত্রী পদে অভিষিক্ত করে পি ভি নরসিমহা রাও নামক এক বর্ষীয়ান নেতাকে যিনি আবার দেশের অর্থনীতির ভার অর্পন করেন এমন একজন ব্যক্তির উপর যিনি তখনো পর্যন্ত বোধহয় মনে মনে তাঁর অর্থনীতিবিদ পরিচয় ত্যাগ করে পুরোপুরি কংগ্রেসি আদর্শে ( অর্থাৎ গান্ধী পরিবারের অনুগত দাসত্বে ) নিজেকে বিলীন করে উঠতে পারেননি। তাই সেই অর্থনীতিবিদ অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিংহের হাত ধরে ভারতবর্ষ তার প্রায় অর্ধশতাব্দীপ্রাচীন বদ্ধ ও রক্ষণশীল অর্থনীতির পথ থেকে সরে এসে উদার অর্থনীতির পথ ধরে যার ফলশ্রুতি হিসাবে আধুনিক পৃথিবীর খোলা হাওয়া ঢুকে পড়ে ভারতীয় অর্থনীতিতে। তখনই আধুনিক প্রযুক্তির হাত ধ'রে ( যদিও তখনও সম্ভাব্য কাল্পনিক কর্মসংকোচনের ভয় দেখিয়ে তথাকথিত বামপন্থীরা সেই আধুনিক প্রযুক্তির যথেষ্ট বিরোধিতা করেছিলেন কিন্তু দেশের সৌভাগ্যবশতঃ তাকে আটকাতে পারেননি ) ভারতীয় সমাজে এক নতুন কুশলী কর্মী বা skilled labour শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে এবং মূলতঃ তাঁদের মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে পণ্যকে ছাপিয়ে পরিষেবা ক্ষেত্র বিস্তার লাভ করতে আরম্ভ করে। ১৯৯৪ সালে এই ক্রমপ্রসারমান পরিষেবাক্ষেত্রকে করের আওতায় আনা হয়। পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী যখন ভারতের indirect tax ব্যবস্থার সংষ্কার সাধনের প্রয়োজন অনুভব করেন তখন তাঁর দূরদৃষ্টিতে এই নবগঠিত পরিষেবা করের বিপুল সম্ভাবনাও অবহেলিত হয় নি আর তাঁর সেই দূরদৃষ্টিরই ফলশ্রুতি হল আজকের এই বহুআলোচিত পণ্য-পরিষেবা কর বা GST ।

কিন্তু হায় রে আমার দেশ! হায় রে ভারতবাসী! আবারও ঘুরতে থাকে রাজনীতির ( না কি বলব সুবিধাবাদী নীতির ) চাকা। নতুন শতাব্দীর প্রথম দশকেই আবারও পালাবদল ঘটে রাজনৈতিক ক্ষমতার। এদিকে এতদিনে গত শতাব্দীর সেই অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিংহ ক্ষমতার মোহে তাঁর অর্থনীতিবিদ পরিচয় হারিয়ে পুরোপুরি রাজনীতিবিদে তথা গান্ধী-পরিবারের বিশ্বস্ত দাসে রূপান্তরিত হয়েছেন আর যাঁরা সেই গত-শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকেই ভারতবাসীর মনে "স্বাধীনতা" আর "ধনাঢ্যের স্বেচ্ছাচার"-কে একাসনে বসিয়ে রেখেছেন, সেই গান্ধী-পরিবারের সদস্য হিসাবে নিজের পরিচয়কে ভাঙিয়ে, আর জনগনকে ধোঁকা দিতে ভারতে উদার অর্থনীতির রূপকার হিসাবে পরিচিত অধুনা রূপান্তরিত মনমোহন সিংহকে মূক প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শিখণ্ডী খাড়া ক'রে, আবারও নির্বাচনের তরী বেয়ে বিদেশিনী সনিয়া গান্ধী এসে বসে পড়েছেন ভারতভাগ্যবিধাতা রূপে। তাই চলতে থাকে অজস্র টালবাহানা। ২০০৫ সালে GST-র prelude হিসাবে ভারতে introduced হয় VAT। বারবার দেশবাসী শোনে যে GST আসবো আসবো করছে। কিন্তু বারবারই তা পিছিয়ে যেতে থাকে। সাধারন মানুষের অবশ্য তাতে থোড়াই আসে যায়। তাঁরা তো জানেনই না GST খায়, না মাথায় মাখে। তাঁরা ব্যস্ত থাকেন তাঁদের রোজকার জীবনসংগ্রামে, আর তাঁদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে রাজনীতির কারবারীরা ব্যস্ত থাকেন উপায় খুঁজতে কিভাবে সাপও মরে আবার লাঠিও না ভাঙ্গে। অর্থাৎ GST চালুও করা যায় আবার তাঁদের ব্যক্তিস্বার্থে আঘাতও না লাগে। কিন্তু মুশকিল হল এই, যে এই নতুন GST করব্যবস্থা একাধারে বড়ই সরল আবার বড়ই জটিল। এখানে যেমন সরল কথা হল এই, যে 'সাধারন মানুষের কাছ থেকে করের নাম করে সংগৃহিত অর্থ সরকারের ঘরে জমা না দিয়ে ফাঁকি দেওয়া যাবে না', তেমনি জটিল সত্যতাও তো আবার সেটাই যে, 'কোনো ব্যক্তি, তা তিনি যত বড় প্রভাবশালী, বা রাজনৈতিকভাবে অথবা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতাবানই হোন না কেন, কর ফাঁকি দেবার কোনো ছিদ্রপথের সন্ধান পাওয়া যে কোনো কারোর পক্ষেই দুষ্কর ( হয়তো বা প্রায় অসম্ভবও বটে )'। তাই বছরের পর বছর জুড়ে আলোচনার পর আলোচনা, মিটিং-এর পর মিটিং চলতে থাকে। সমাধান থাকে অধরা, তাই GST চালু হবার স্বপ্নও স্বপ্ন হয়েই রয়ে যায়, বাস্তব হওয়ার পথ মেলে না। যদিও বা অতি কষ্টে প্রভাবশালীদের বাঁচিয়ে GST-র compromised version চালু করবার দুই-একটা পন্থা বার করবার চেষ্টা হয় তবু সেই প্রচেষ্টাও ভেস্তে যায় তৎকালীন বিরোধীদের সতর্কতায়। সামান্যসংখ্যক প্রভাবশালীর স্বার্থে আপামর দেশবাসীর স্বার্থ পড়ে থাকে অন্ধকারে। আসে ২০১৪ সাল।

"আচ্ছে দিন" নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, স্বাধীনতার পর থেকে ভারতীয় অর্থনীতিকে পঙ্গু করে রাখার মূল কারনস্বরূপ "কালো টাকা"-র বিরূদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা ক'রে, আর প্রবল জনসমর্থনকে সহায় ক'রে রাজধানী দিল্লীর ক্ষমতায় আসীন হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদী। ইনি এমন একজন ব্যক্তি ঠিক যেরকমটা ভারতবাসী আগে কখনোই দেখে নি। এমনও নয় যে তিনি সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী বা তিনি সম্পূর্ণ নির্লোভ মুনি। আবার তাঁর পূর্বসূরিদের মতো তিনি সাধারন জাগতিক বস্তুসমূহ, যেমন টাকাপয়সা, ধনসম্পত্তির বা এমনকি 'সাধারন' রাজনৈতিক ক্ষমতার লোভেও লালায়িত নন। আর ঠিক এইখানেই আমার মনে হয় তাঁকে বা তাঁর উদ্দেশ্যকে বুঝতে সাধারন মানুষের, তাঁর বিরোধীদের, বা এমনকি কখনো কখনো তাঁর নিজের follower-দেরও ভুল হয়। তবে তিনি কী ? তিনি কি পাগল ? হ্যাঁ, একহিসাবে তাঁকে পাগল তো বলাই যায়। যদিও এ আমার একান্ত ব্যক্তিগত মত, তবু তাঁর কার্য পরম্পরা বিশ্লেষন করে আমার মনে হয়েছে যে তাঁর লোভ একেবারে চরম পর্যায়ের। তাঁর লোভ অমরত্বের। অনেকটা সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "পরশপাথর" কবিতার "খ্যাপা"-র মতন। সেই যে সেই - "সোনা-রূপা তুচ্ছজ্ঞান, রাজসম্পদের লাগি নহে সে কাতর। দশা দেখে হাসি পায়, আর কিছু নাহি চায়, একেবারে পেতে চায় পরশপাথর।", অনেকটা সেইরকম। এই ভদ্রলোকের সমগ্র জীবনবৃত্তান্ত খতিয়ে দেখলে, সে-ই চা বিক্রী করা থেকে শুরু করে, যথেষ্ট অল্প বয়সে বিয়ে করা, অথচ নববিবাহিত বউ-এর সঙ্গে সংসার না ক'রে বাড়ি থেকে পালিয়ে বেলুড়ে রামকৃষ্ণ মিশনে বসবাস করা, আবার ব্রহ্মচারী জীবন থেকে রাজনীতি, গুজরাটে দাঙ্গার সময় সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সুবাদে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছ থেকে "দাঙ্গার মুখ" অপবাদ নিয়েও অবিচলিত থাকা, এই সব কিছুর মধ্যে থেকে এই অনুমানটাই মাথায় আসে যে ভদ্রলোকের ultimate লোভ হল ভবিষ্যতের মানুষের কাছে নিজের ভাবমূর্তিকে সম্রাট বিক্রমাদিত্য, সম্রাট অশোক বা হয়তো এমনকি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বা পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্রের সমপর্যায়ে অধিষ্টিত করা। তাই একে পাগলামি বলব না তো কী বলব ? তবে এই পাগলামি হ'ল benevolent পাগলামি। কারন দেশের মানুষের সত্যিকারের ভালো করবার মধ্যে দিয়ে তিনি তা achieve করতে চান। আর তাই ওনার কার্যাবলীর কারন হিসাবে আমাদের পরিচিত রাজনৈতিক ক্ষুদ্রস্বার্থ খুঁজতে যাওয়া বৃথা। আর ওনার সবচাইতে বড় গুন ( বা দোষ, যা-ই বলুন না কেন ) হ'ল এই, যে উনি ওনার পূর্বসূরীদের মতো politically correct থাকার জন্য responsibility avoid করার বা অন্য কারোর ঘাড়ে shed-off করার রাস্তায় না গিয়ে বরং নিজের সমস্ত সিদ্ধান্ত ও কাজের সব ভাল ও মন্দ উভয়প্রকারের কৃতিত্ব বা দায়ই নিজের একলার চওড়া কাঁধে তুলে নিতে দ্বিধা করেন না। সেই হয়তো বা হঠকারী, আবার হয়তো বা যুগান্তকারী, অকুতোভয় চরিত্রেরই পরিচয় বহন করে ওনার সাম্প্রতিকতম দুটি আপাত unrelated সিদ্ধান্ত - প্রথমে গত ৮ই নভেম্বর ২০১৬-র আচমকা demonetization আর তারপর তার অব্যবহিত পরের আর্থিক বছর থেকেই GST চালু করতে desparate হয়ে ওঠা। আপাতদৃষ্টিতে সিদ্ধান্ত দুটি unrelated মনে হতে পারে কিন্তু আমার মনে হয় সিদ্ধান্ত দুটির মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক আছে। কেন, তা ব্যাখ্যা করার আগে বরং আমরা একটু বুঝে নিই ( অথবা যাঁরা ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরে গিয়েছি তাঁরা ঝালিয়ে নিই ) GST তে এমন কী বিশেষত্ব আছে যা কিনা ভারতীয় পরোক্ষ করব্যবস্থায় একেবারে নতুন বা অভিনব?

GST-র অভিনব বিশেষত্ব এবং demonetization-এর সঙ্গে তার সম্পর্ক

এতক্ষণ যাঁরা ধৈর্য ধরে এই প্রবন্ধটি পড়ছেন আর মনে মনে ভাবছেন যে 'GST-র এতসব ইতিহাস-ভুগোল জেনে কি হবে ? আসল প্রশ্নটার উত্তর কোথায় ? পয়লা জুলাই GST চালু হওয়ার সঙ্গে কালো টাকার কী সম্পর্ক ?', তাঁদের অনুরোধ করব, এতক্ষণ যখন ধৈর্য্যই ধরেছেন তখন না হয় দয়া করে আরেকটু ধৈর্য্যই ধরুন না। মূল প্রশ্নের উত্তরে যাওয়ার আগে আমাদের এটুকু জেনে নেওয়া অত্যন্ত আবশ্যক যে GST-র এমন কী অভিনব বিশেষত্ব আছে যা কিনা ভারতীয় পরোক্ষ করব্যবস্থায় একেবারে নতুন।

আসলে এতদিন পর্যন্ত কী VAT, কী Service Tax, কোথাওই কর সংগ্রহকারী (অর্থাৎ প্রদানকারী) ব্যবসায়ীকে তাঁর প্রতিটি কেনাবেচার detailed তথ্য বা আরো বিশদ করে বলতে গেলে, individual bill গুলির detail (অর্থাৎ কবে, exactly কাকে, কী পণ্য বা পরিষেবা, কত দামে বিক্রী করা হল ? ইত্যাদি ) কোনো সরকারী দফতরে জমা করতে হত না। শুধু quarter শেষে return দাখিল করবার সময় "মোট ব্যবসায়ের পরিমান" জানালেই চলত। তেমনি দফতরগুলিরও সেই "পরিমান" যাচাই করবার সুযোগ ছিল সীমিত। সেই সুযোগে অসৎ ব্যবসায়ীদের জন্যও ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য জানিয়ে পার পেয়ে যাওয়াও কঠিন ছিল না। কিন্তু GST- তে registered প্রত্যেক ব্যবসায়ী তাঁর প্রতিটি বিক্রীর invoice-wise absolute details কম্পিউটার-এর মাধ্যমে upload করতে বাধ্য থাকবেন। "একজনের বিক্রয় মানেই আরেকজনের ক্রয়" এই principle এর উপর নির্ভর করে system নিজে থেকেই এইসব upload করা sales বা supply invoice থেকে ক্রেতার হদিশ ও তাঁর registration number খুঁজে নিয়ে সেই ক্রেতার account-এ purchase হিসাবে auto-populate করবে। এখন যখন সেই ক্রেতা তাঁর নিজের দেয় ট্যাক্স হিসাব করতে বসবেন তখন তিনি কেবলমাত্র সেই auto-populated purchase-এর উপরই set off বা input credit পাবেন। অর্থাৎ এতদিন যে একজন ক্রেতা কেবলমাত্র তাঁর নিজের করা দাবীর ভিত্তিতেই অবাধে input credit ভোগ করতেন, তাঁর supplier বা বিক্রেতা আদৌ তাঁর সেই দাবীকে মান্যতা দিলেন কিনা সে ব্যাপারে যে কোনোরকম দায়বদ্ধতা তাঁকে স্বীকার করতে হ'তো না সেই যুগের সমাপ্তি ঘটবে GST জমানায়। স্বাধীনতা উত্তর কালে এতদিন যে করব্যবস্থা, বা বলা ভালো সম্পূর্ণ শাসনব্যবস্থা, ভারতীয় জনগন দেখে এসেছে তাতে সাধারন নাগরিককে যেন অপ্রাপ্তবয়ষ্ক শিশু আর সরকারকে তার কল্যাণকামী দায়িত্বশীল অবিভাবক হিসাবে মনে করাটাই ছিল tradition । তাই সাধারন করদাতা যখনই দাবী করতেন যে তিনি তাঁর ব্যবসার জন্য কোনো নির্দিষ্ট অঙ্কের ক্রয় করেছেন এবং তা করতে গিয়ে তিনি বিক্রেতাকে কিছু টাকা কর বাবদ দিয়েছেন, তখন আদৌ সেই টাকা সরকারের ঘরে জমা পড়ল কিনা তা নিশ্চিত করার কোনো দায় তাঁর থাকতো না। সরকারও সেই দাবীর সত্যাসত্য যাচাই করার আগেই অভিভাবকসুলভ বদান্যতায় দাবীদারকে allow করতেন input credit ভোগ করতে। GST যুগে এই দায় ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটতে চলেছে। 

আচ্ছা, ব্যাপারটা আরও ভালভাবে পরিষ্কার করবার জন্য প্রবন্ধের এই জায়গায় পৌঁছে আমাদের একবার একটু বুঝে নেওয়া দরকার যে input credit আসলে কী। অনেকেই হয়তো জানেন, তবু যাঁরা জানেন না তাঁদের জন্য একটা উদাহরণ দিয়ে বলছি। বর্তমানে চালু যুক্তমূল্য কর ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হল input credit। মনে করা যাক কোনো পণ্যের উপর করের হার হল ১০% । অর্থাৎ কেউ যদি সেই পণ্য ১০০ টাকা মূল্যে বিক্রয় করেন তাহলে তিনি তার উপর ১০ টাকা কর যোগ করে ক্রেতার কাছ থেকে ১১০ টাকা আদায় করবেন এবং নিজের ১০০ টাকা নিজের কাছে রেখে দিয়ে কর বাবদ আদায়ীকৃত ১০ টাকা সরকারের ঘরে জমা দেবেন। এই পর্য্যন্ত হল সাধারন পরোক্ষ করব্যবস্থা। কিন্তু যদি সেই বিক্রেতা একজন পাইকারী ব্যবসায়ী এবং ক্রেতাও একজন খুচরো ব্যবসায়ী হন আর সেই খুচরো ব্যবসায়ী সেই পণ্য ব্যবসার জন্য কিনে থাকেন তখনই problem শুরু। ধরা যাক সেই ক্রেতা বা খুচরো ব্যবসায়ী ২০% লাভ করে পণ্যটিকে আবার একজন end user-কে বিক্রী করতে চান। তখন কী হবে ? তিনি যদি তখন simple পদ্ধতিতে ১১০ টাকা ক্রয়মূল্যের উপর ২০% অর্থাৎ ২২ টাকা লাভ রেখে ১৩২ টাকা মূল দামে উপভোক্তার কাছে বিক্রী করেন তাহলে উপভোক্তাকে আবার তার উপর ১০% কর অর্থাৎ ১৩.২০ টাকা যোগ করে পণ্যটিকে ultimately ১৪৫.২০ টাকায় কিনতে হবে। এর মধ্যে দুই step মিলিয়ে মূল দাম যদিও ১০০ + ২২ = ১২২ টাকা কিন্তু কর হল ১০ + ১৩.২০ = ২৩.২০ টাকা। তার মানে যদিও ঘোষিত করের হার ১০% কিন্তু সাধারন উপভোক্তাকে ultimately প্রায় ১৯.০২% কর গুনতে হচ্ছে। দুই step-এ তাই, কিন্তু যত step বাড়বে ততই করের effective হার বাড়বে। এই cascading effect রুখতেই input credit-এর concept। এক্ষেত্রে নিয়ম হ'ল যদি কোনো ব্যবসায়ী কোনো পণ্য ব্যবসার জন্য কিনে থাকেন এবং সেই পণ্যের বিক্রীর উপর কর দিতে প্রস্তুত থাকেন তাহলে তিনি তাঁর বিক্রয়ের উপর দেয় কর থেকে সেই পণ্য কেনার সময় already paid কর বাদ দিয়ে শুধু তাঁর হাতে পণ্যটির যে পরিমান মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে সেইটুকুর উপর কর জমা দেবেন। এক্ষেত্রে উপরোক্ত উদাহরণটির খুচরো ব্যবসায়ী যেহেতু তাঁর কেনার সময় পাইকারী ব্যবসায়ীকে করবাবদ দেওয়া ১০ টাকা ফেরত পাবেন তাই তাঁর effective ক্রয়মূল্য হবে ১০০ টাকা অর্থাৎ পাইকারী ব্যবসায়ীর মূল বিক্রয়মূল্য। তার উপর তাঁর লাভ আগের মতো ২২ টাকা রেখেও তিনি সেক্ষেত্রে তাঁর মূল বিক্রয়মূল্য ধার্য্য করতে পারবেন ১২২ টাকায়। তার উপর ১০% অর্থাৎ ১২.২০ টাকা কর যোগ করে যদিও তিনি উপভোক্তার কাছে পণ্যটিকে ১৩৪.২০ টাকায় বিক্রী করবেন কিন্তু সরকারের ঘরে তাঁর দেয় কর তাঁর আদায়ীকৃত ১২.২০ টাকা না হয়ে হবে ১২.২০ - ১০ = ২.২০ টাকা মাত্র। তার মানে সরকার দুই ধাপ মিলিয়ে কর পাবে ১০ + ২.২০ = ১২.২০ টাকা অর্থাৎ মূল বিক্রয়মূল্য ১২২ টাকার ঠিক ১০%। এই ব্যবস্থায় পাইকারী বা খুচরো কোনো ব্যবসায়ীরই প্রাপ্য অর্থের কোনো তারতম্য না ঘটিয়েও উপভোক্তার কাছে পণ্যটির দাম ১৪৫.২০ - ১৩৪.২০ = ১১ টাকা কম পড়ে। এই ব্যবস্থায় খুচরো ব্যবসায়ী তাঁর সরকারকে দেয় কর হিসাব করবার সময় তাঁর আদায়ীকৃত ১২.২০ টাকা করের থেকে যে ১০ টাকা বাদ দেবার অধিকার ভোগ করেন সেই ক্রয়কালীন সময়ে পাইকারী ব্যবসায়ীকে দেওয়া তাঁর করের টাকাকেই বলে input credit ।

যদিও আলোচিত যুক্তমূল্য কর ব্যবস্থার উপকারিতা যথেষ্ট কিন্তু এই ব্যবস্থার একটি important drawback-ও আছে। সেই দুর্বলতা হল এই যে, যদিও সরকার উপরোক্ত উদাহরণটির খুচরো ব্যবসায়ীকে ১০ টাকা input credit allow করেন এই assumption-এ যে তাঁর ক্রয়কালীন দেওয়া ১০ টাকা কর পাইকারী ব্যবসায়ীটি আদায় করবার পর যথানিয়মে already সরকারের ঘরে জমা করেছেন, কিন্তু বাস্তবে পাইকারী ব্যবসায়ীটি আদৌ তা করেছেন কিনা সে ব্যাপারে খুচরো ব্যবসায়ীটিকে সবরকম দায় থেকেই মুক্ত রেখেছেন। খুচরো ব্যবসায়ীর দিক থেকে দেখতে গেলে এ যেন অনেকটা এইরকম - " আমি বলছি আমি অমুকের হাতে তোমাকে দেবার জন্য ১০ টাকা দিয়েছিলাম, তারপর সে সেই টাকা নিয়ে কী করেছে, তুমি সেই টাকা পেয়েছো কি পাওনি, এমনকি তুমি তাকে আদৌ চেনো কি চেনো না কিছুই আমি জানিও না জানতে চাইও না কিন্তু এখন তোমাকে সেই টাকা ফেরত দিতে হবে কারন তুমি আমার অভিভাবক আর আমি নিতান্তই ছেলেমানুষ।" স্বাধীন দেশের প্রাপ্তবয়ষ্ক নাগরিকদের এইরকম দায়িত্বমুক্ত নাবালক মনে করবার ধৃষ্টতা ও পরাধীনযুগের hangover থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে সাদা-কে সাদা, কালো- কে কালো ও adult-কে adult মনে করবার খোলা দৃষ্টিই GST-র বিশেষত্ব।

এই কারনে GST-তে একজন ব্যবসায়ী ( উপরোক্ত উদাহরণের খুচরো ব্যবসায়ী ) কেবলমাত্র তখনই input credit ( উপরোক্ত উদাহরণে ১০ টাকা ) claim করতে পারবেন যখন তাঁর supplier ( উপরোক্ত উদাহরণের পাইকারী ব্যবসায়ী ) স্বীকার করবেন যে তিনি পূর্বোক্ত ব্যবসায়ীকে ঘোষিত মূল্যের ( উপরোক্ত উদাহরণে ১০০ টাকার ) পণ্য বিক্রী করেছেন এবং সেই সময় করবাবদ পূর্বোক্ত ব্যবসায়ীর কাছ থেকে claimed input credit-এর সমপরিমান টাকা আদায় করেছেন যা তিনি সরকারকে দিতে বাধ্য থাকবেন। এইভাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না বিক্রেতা স্বীকার করছেন ততক্ষণ ক্রেতার দাবী মান্যতা পাবে না আর ক্রেতাও input credit পাবেন না। তাই এই ব্যবস্থায় ক্রেতাকে তাঁর নিজের স্বার্থেই দায়বদ্ধ থাকতে হয় যাতে বিক্রেতা করফাঁকি না দেন। এইভাবে GST সাধারন নাগরিকদেরও বিশ্বাস করতে বাধ্য করে যে করের টাকা তাঁর নিজেরই টাকা আর তাই করফাঁকি রোধ করা তাঁরও ব্যক্তিগত স্বার্থেই জরুরি।

উপরোক্ত আলোচনা থেকেই স্পষ্ট যে GST-র অভিনবত্ব এইখানে যে এর মাধ্যমেই ভারতীয় নাগরিক প্রথমবার সরকারকে তাঁদের স্বার্থবিরোধীর বদলে তাঁদের অভিন্নস্বার্থ ভাবতে শিখবেন।

কিন্তু প্রবন্ধের এইস্থানে পৌঁছে যে প্রশ্নটি দেখা দেয় বা দেখা দেওয়া উচিত তা হল এই যে GST চালু হওয়ার পর থেকে আমি একজন ব্যবসায়ী হিসাবে যা কিছু কিনবো তার উপর তো input credit পাবো আর তাই তার ক্রয়মূল্য হিসাবে তার base purchase price-কে গণ্য করতে অসুবিধা নেই; কিন্তু আমার ব্যবসা তো আর GST চালুর অপেক্ষায় stock খালি করে অপেক্ষা করবে না। তাই GST চালুর দিনটিতে আমার ঘরে যে stock আছে, যা কিনা আমি VAT বা CST দিয়েই কিনেছিলাম তার উপর যদি কেবলমাত্র GST দিয়ে কিনিনি বলে input credit না পাই তাহলে তো আমার কাছে তার ক্রয়মূল্য বেড়ে যাবে। আর সেক্ষেত্রে তো শুধু সরকারী সিদ্ধান্তের দাম চোকাতে আমাকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে বাধ্য করা হবে। না, তা হবে না। GST আইনে এই সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে যে যদি কোনো ব্যবসায়ীর ঘরে GST চালুর দিনটিতে কোনো stock থাকে এবং যদি সেই ব্যবসায়ী তার সমস্ত details (যেমনটা GST চালুর পরে কেনা পণ্যের ক্ষেত্রে আবশ্যক ঠিক সেইভাবে) upload করে দেখাতে পারেন যে সেই পণ্য তিনি বিগত ছয় মাসের মধ্যে তখনকার চালু পুরোনো নিয়মানুসারে সঠিক কর দিয়ে কিনেছিলেন, তবে সেই stock-এর উপরেও তিনি input credit দাবী করতে পারবেন। এর মানে এই দাঁড়ালো যে যদি কোনো ব্যবসায়ী GST চালু হবার পরে হঠাৎ আবিষ্কার করেন যে GST চালুর দিন থেকে হিসাব করে তার আগের ছয় মাসের মধ্যে করা তাঁর কোনো ক্রয়ের ব্যাপারে তিনি সচেতন ছিলেন না আর তাই তেমন কোনো ক্রীত পণ্যকে তিনি স্বাভাবিক যুক্তিতেই আগে বিক্রিও করেন নি তাহলেও সেই একই যুক্তিতে (যার অস্তিত্ব সম্পর্কেই তিনি অবহিত ছিলেন না সেই পণ্যকে বিক্রি করা নিশ্চয় তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়) যেহেতু তা তাঁর stock-এ রয়ে গেছে (যা কিনেছি অথচ বিক্রি করি নি তা stock-এ না থেকে আর যাবে কোথায় ?) তাই সেই পণ্যের উপরও তিনি input credit পাবেন। অবশ্য এক্ষেত্রে তাঁকে সেই ক্রয়কালীন transaction-এর সমস্ত detail-কে system-এ upload করতে হবে। যদি এক্ষেত্রে শুধু detail upload করার ভয়ে তিনি input credit-কে forego করে এমনকি loss bear করতেও রাজি হয়ে যান তাহলে তা হবে স্বাভাবিক ব্যবসায়ীক ব্যবহারের পরিপন্থী এবং তাই সন্দেহজনক। আর যদি তিনি detail upload করেন তাহলে সেই transaction তৎক্ষণাৎ সম্পূর্ণ traceable হয়ে পড়বে আর সহজেই প্রমাণিত হবে যে তা genuine transaction, তা fake transaction নয়।

এবার আমরা দ্রুত কিছু তারিখের উপর চোখ বুলিয়ে নিই। ২০১৬ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর রাজ্যসভায় পাশ হ'ল GST-র জন্য আনা সংবিধান সংশোধনী বিল। প্রথমে GST চালুর দিন ঠিক করা হ'ল ২০১৭ সালের ১লা এপ্রিল। সেইদিন থেকে ছয় মাস আগের দিনটি হ'ল ২০১৬ সালের ১লা অক্টোবর। ঠিক এর একমাস আট দিন পরে ২০১৬ সালের ৮ই নভেম্বর নোটবন্দী বা demonetization করা হ'ল। সকলকে নির্দেশ দেওয়া হ'ল ২০১৬ সালের ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে সব পুরোনো সদ্য বাতিল হওয়া নোটগুলিকে ব্যাঙ্কে জমা করতে বা negligible পরিমানে হ'লে ব্যাঙ্ক থেকে তা পাল্টে নিতে। নোট bank account-এ জমা করার এই শেষ দিনটির ঠিক পরের দিনটিই হ'ল ২০১৭ সালের ১লা জানুয়ারী অর্থাৎ ঠিক সেই দিনটি যা কিনা GST চালু হবার নির্দিষ্ট দিনের exactly তিন মাস আগে। এমনকি যদি বিরোধীদের চাপে GST চালু করাকে সর্বাধিক তিন মাস বা একটি পুরো return quarter পিছিয়েও দিতে হয় তাহলেও এই ১লা জানুয়ারী ২০১৭ তারিখটি হবে ঠিক সেই দিন যে দিন থেকে করা যে কোনো ক্রয়ের উপর bonafide ক্রেতা তার সমস্ত details-কে GST website-এ upload করে input credit পেতে পারেন। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে প্রায় ন'মাস আগে বুঝতে পারা সরকারের সেই assumption-টাই সঠিক। GST চালু হওয়ার দিনটি ঠিক তিন মাসই পিছিয়েছে। সরকারপক্ষ তাঁদের বিরোধীদের বিলক্ষণ চিনেছিলেন অথচ বিরোধীরা তখন সরকারের পরিকল্পনার সম্বন্ধে কোনো ধারনাই করতে পারেন নি। আর এখানেই কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত "কালো টাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ"-র মাস্টারস্ট্রোক। এখানেই demonetization আর GST পরষ্পর সম্পর্কিত। What a plan Sir-ji !!!


What's the relevance of the particular date of July 1 ?

এতক্ষণ আমরা যা আলোচনা করলাম তার নিরিখে একথাটা বুঝতে আশা করি আর কারও অসুবিধা নেই যে GST যেদিন থেকে রোল আউট করবে সেই দিন থেকে এবং তার ছয় মাস আগের date থেকে দেখানো কোন sale বা purchase -এর ক্ষেত্রে কোন জল মেশানো ব্যবসায়ীদের পক্ষে দুরূহ হয়ে পড়বে। কারন সেই period-এর প্রত্যেকটি bonafide transaction তিনি GST database-এ upload করতে কার্যতঃ বাধ্য হবেন। একথা নিশ্চয় বিশ্বাসযাগ্য হবে না যে তিনি সেই transaction-এর উপরে তাঁর প্রাপ্য credit-কে forego করবেন। এখন, আমরা সকলেই জানি, পয়লা জুলাই-এর ঠিক ছয় মাস আগের date হল পয়লা জানুয়ারী। তাই, যদি পয়লা জুলাই থেকেই GST roll out করে তাহলে, জুলাই মাসে বা তার পরে যে কোন date-এ দাঁড়িয়ে যদি কেউ বলেন যে তাঁর গত October, November বা December মাসে কেনা কোন পণ্য সেই quarter-এই তিনি ব্যবহার করে ফেলেছেন তাহলেই সরকার দেখতে চাইতে পারবে যে তার against এ উক্ত ব্যবসায়ী তখনই proper tax payment করেছিলেন কিনা কারন December quarter-এর revised return জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট তখন already over। আবার যদি কেউ বলেন যে সেই পণ্য তিনি সেই quarter -এ ব্যবহার করেন নি তাহলেই ধরে নিতে হবে যে পয়লা জানুয়ারী তারিখে সেই পণ্য তাঁর stock-এ ছিল অর্থাৎ তার পরে তিনি সেই পণ্য নিয়ে কি করলেন তা GST database-এ দেখাতে তিনি বাধ্য হবেন। নাহলেই তাঁর সেই দাবীর bonafidity নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাবে। তাই যদি কোন ব্যবসায়ী বাস্তবে পয়লা October বা তার পরে কোন পণ্য না কিনে থাকেন তবে তা তাঁর পক্ষে কিনেছেন বলে দেখানো কার্যতঃ অসম্ভব। ফলতঃ, demonetization এর ফলশ্রুতিতে যদি কেউ তাঁর কালো অর্থাৎ unaccounted টাকা bank-এ জমা করে ভেবে থাকেন যে Income Tax department প্রশ্ন করলে তিনি তা তাঁর ব্যবসা দ্বারা প্রাপ্ত বলে দেখিয়ে দিতে পারবেন, তাহলে তাঁকে অবশ্যই দেখাতে হবে যে তিনি কোন পণ্য বা পরিষেবা বিক্রী করেছেন এবং সেক্ষেত্রে তাঁকে একথারও জবাব প্রস্তুত রাখতে হবে যে তিনি সেই পণ্য বা পরিষেবা কাকে বিক্রী করেছেন। অর্থাৎ তাঁকে সেই পণ্য বা পরিষেবার একজন ভুয়ো ক্রেতাও ঠিক করে রাখতে হবে। কিন্তু আগেই বলেছি যে যদি কোন ব্যবসায়ী বাস্তবে পয়লা October বা তার পরে কোন পণ্য না কিনে থাকেন তবে তা তাঁর পক্ষে কিনেছেন বলে দেখানো কার্যতঃ অসম্ভব। তাই যদি পয়লা জুলাই থেকে GST রোল আউট করে তাহলে কালো টাকার কারবারীদের সাহায্য করতে গিয়ে কেউই ভুয়ো ক্রেতা সাজতে রাজি হবেন না। এ কথা বুঝতে কারোরই অসুবিধা থাকার কথা নয় যে কোন transaction-এর bonafidity check করতে Income tax department সহজেই GST database-এর সাহায্য নিতে পারে।

কিন্তু যদি GST roll out-এর date-কে কোনভাবে এমনকি কিছুদিনের জন্যও defer করা যায় তাহলে কি হবে? ধরা যাক জুলাই মাসের ৫ তারিখ থেকে GST roll out হল। সেক্ষেত্রে জানুয়ারী মাসের ১ তারিখ থেকে ৪ তারিখ পর্যন্ত কোন transaction-এর উপরে যেহেতু credit পাওয়া যাবে না তাই কোন ব্যবসায়ী সেই period-এর কোন transaction-কে GST database-এ upload নাও করতে পারেন। ফলে যদি কোন ব্যবসায়ী কোন পরিচিত কালো টাকার কারবারীকে সাহায্য করতে গিয়ে ভুয়ো ক্রেতা সাজেনও, investigation-এর মুখে by chance পড়তে হলেও তিনি ৪ দিনের breathing time পেয়ে যাবেন। অর্থাৎ একজন কালো টাকার কারবারী "ক-বাবু" -কে Income Tax Department যদি প্রশ্ন করে যে "demonetization -এর পরে আপনি আপনার ব্যাঙ্কে যে কয়েক কোটি টাকা জমা করেছেন, তা আপনি কোথা থেকে পেয়েছেন?" তাহলে "ক-বাবু" অনায়াসে উত্তর দেবেন যে "আমি আমার পণ্য "খ-বাবু"-কে October মাসে বিক্রী করেছিলাম এটা তারই টাকা।" আবার "খ-বাবু"-কে যখন প্রশ্ন করা হবে যে "আপনি "ক-বাবু"-র কাছ থেকে যে পণ্য কিনেছিলেন তা কি করলেন?" তখন "খ-বাবু"ও অনায়াসে বলে দিতে পারবেন যে "সেই পণ্য আমি জানুয়ারী মাসের ২ তারিখে বিক্রী করে দিয়েছি।" ব্যাস, গল্প শেষ। যেহেতু জানুয়ারী মাসের ২ তারিখের transaction, তাই December quarter-এর return-এ তা পাওয়া যাবে না। আবার জানুয়ারী মাসের ৫ তারিখের ( অর্থাৎ GST roll out date-এর ছয় মাস আগের date-এর) আগে হবার সুবাধে GST database-এ সেই transaction upload করবার জন্যও "খ-বাবু"-র কোন আগ্রহ থাকবার কারন নেই। যদি একান্তই March quarter-এর return-এ কোন অকালপক্ক অফিসার খোঁজ করে তাহলেও "খ-বাবু" বলতে পারবেন যে "ওহ্ হো, ওখানে ওটা তুলতে ভুলে গেছি, revised return-এ তুলে দেব।" আর তেমন খোঁজ না করা হলে (যার সম্ভাবনা সর্বাধিক) তো মিটেই গেল। এই ভাবে "ক-বাবু"-র কালো টাকাও সহজেই সাদা হয়ে গেল, কোন জরিমানার প্রশ্নই উঠল না।

তো, এই হল গল্প। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকার পয়লা জুলাই থেকে GST চালু করতে বদ্ধপরিকর দেশের মানুষের স্বার্থে, কালো টাকার কারবারীদের কোন জমি না ছাড়ার জন্য। আর পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার যেন তেন প্রকারেন তা অল্প কিছুদিনের জন্য হলেও পিছোতে চায় কতিপয় দল-ঘনিষ্ঠ কালো টাকার কারবারীর স্বার্থে। তাঁদের desperation দেখে একথাও সন্দেহ হয় যে এই কালো টাকার কারবারীরা তাঁরা নিজেরাই নন তো! 

তা-ই : finally, to sum up, পয়লা জুলাই তারিখটি BJP শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার এবং তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার দুইপক্ষের কাছেই অত্যন্ত important কারন একদিকে যদি এই তারিখ থেকে GST চালু করা যায় তবে আয়কর দফতরের পক্ষে কালো টাকার কারবারীদের আরো বেশী করে কোনঠাসা করে ধরতে পারবার সমূহ সম্ভাবনা; অপরদিকে যদি তা চালু না করা যায় তবে ( তৃণমূল আশ্রিত?) কালো টাকার কারবারীরা নিজেদের আয়কর জরিমানার হাত থেকে বাঁচিয়ে ফেলবার সুবর্ণ সুযোগ পেতে পারে। আর যদি দুপক্ষই তাঁদের জেদ বজায় রাখেন অর্থাৎ যদি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার কিছুতেই জুন মাসের মধ্যে রাজ্য GST Act পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাশ না করান এবং এইভাবে অন্তত পশ্চিমবঙ্গে কিছুতেই পয়লা জুলাই থেকে GST চালু করতে না দেন, অথচ কেন্দ্রীয় সরকার তার পরোয়া না করে পশ্চিমবঙ্গকে বাদ দিয়েই বাকি ভারতবর্ষে ওই তারিখ থেকেই GST চালু করে দেন তাহলে যদিও সারা দেশের মধ্যে শুধু পশ্চিমবঙ্গের কালো টাকার কারবারীরা নিজেদের আয়কর জরিমানার হাত থেকে বাঁচিয়ে ফেলবার সুযোগ পাবেন কিন্তু তা পাবেন বাদবাকি সাধারন পশ্চিমবঙ্গবাসী মানুষের (ব্যবসায়ী ও উপভোক্তা) স্বার্থের বিনিময়ে। সে আলোচনা বরং আরেকদিনের জন্য তোলা থাক।

Comments

  1. Absolutely fantastic analysis 👌👌

    ReplyDelete
  2. অনেক অনেক ধন্যবাদ এমন এক গুরুত্বপূর্ন বিষয়কে সহজ সাবলীল ভাবে তুলে ধরার জন্য।

    ReplyDelete
  3. খুব সুন্দর বর্ণনা ।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

রথযাত্রা: কুমুদরঞ্জন মল্লিক

কোভিশিল্ড কাহিনী

নব্য কথামালা: শেয়াল ও সারসের গল্প

SSC চাকরি বাতিল: যোগ্য - অযোগ্য বিভাজন আদৌ সম্ভব?