পণপ্রথা vs তিন তালাক

কিছু তথাকথিত সেকুলার তিন তালাক প্রথা ban হওয়ায় মানুষের উল্লাস দেখে তিন তালাক প্রথার সঙ্গে হিন্দুদের পণপ্রথার তুলনা করেছেন। তাঁরা বলছেন, যারা নিজেরা বিয়ের সময় বরপণ নেন, তারা আবার তিন তালাকের বিরোধিতা করেন কেন? 

তাদের উদ্দেশ্যে বলি, পণপ্রথার সঙ্গে তিন তালাকের তুলনা সর্বৈব ভুল। এবং অসার।

এ কথা অনস্বীকার্য যে পণপ্রথাও একটি ন্যক্কারজনক প্রথা, discriminatory against women এবং এই প্রথা মানুষের নির্লজ্জ অর্থলোভকে প্রশ্রয় দেয়। পণপ্রথা নিঃসন্দেহে হিন্দু সমাজের লিঙ্গবৈষম্যকেও প্রকটভাবে highlight করে। এবং একজন হিন্দু হিসেবে I strictly oppose this atrocious social custom. যিনি আমার এই ব্লগ পড়ছেন, তিনি আমার এই প্রতিবাদ করা থেকেই বুঝতে পারবেন যে হিন্দুধর্ম উদার ও বহুমাত্রিক। আমি আমার ধর্ম ও জীবনচর্যার যেকোন গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারি। আমার ধর্ম সেই বিষয়ে আমাকে চোখ রাঙায় না। দশহাজার বছরের পুরোনো ঐতিহ্যশালী হিন্দুত্বেরই বৈশিষ্ট্য সেটা।

পণপ্রথার সাথে তিনতালাকের তুলনা করা সেই জন্যই চরম ভুল। দুটো অপরাধ categorically ই আলাদা। হিন্দুসমাজে যে সমস্ত বিয়ে অবৈধভাবে পণের বিনিময়ে হয়, তার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে বিয়ের পর মেয়েরা শ্বশুরবাড়িতে বা নিজের বাড়িতে গুছিয়ে সংসার করে। অর্থাৎ পণের টাকার benefit মেয়েটি ব্যক্তিগতভাবে নিজেও ভোগ করে। ফলে পণপ্রথার জন্য হিন্দু পুরুষকে শুধু দায়ী করা চলে না। হিন্দু সমাজে এমন উদাহরন বহু আছে যেখানে পণ নিয়ে দরে না পোষানোতে বিয়ে বাতিল হয়েছে এবং অন্যত্র বিয়ে হয়েছে। বহু হিন্দু মেয়ে পণপ্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এবং স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে লোভী ছেলের সঙ্গে নিজের বিয়ে বাতিল করেছে। হিন্দু ছেলেরা নিজের এবং অন্যের বিয়ের ক্ষেত্রে পণপ্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, এমন উদাহরণও অজস্র আছে। অর্থাৎ পণপ্রথা যেমন আছে, তেমনই তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদও আছে। দুই -ই হিন্দুসমাজচিত্র! 

পণপ্রথার ফলে বধূনির্যাতনও হিন্দুসমাজে হয়। কিন্তু সেও অবশ্যই হিন্দুসমাজের predominant general চিত্র নয়। কিন্তু তিন তালাক মুসলমান সমাজে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের মতই স্বাভাবিক। সেই কারণেই কপিল সিব্বলের মত আইনজীবীও এই বর্বর প্রথার সপক্ষে সওয়াল করতে বিন্দুমাত্র লজ্জিত হন নি! তিনি একথা বলতে একটুও কুণ্ঠিত হন নি যে এই প্রথা ১৪০০ বছর ধরে চলে আসছে, ফলে একে নাকি অসাংবিধানিক বলা চলে না! অর্থাৎ
 মুসলমান সমাজ তাদের মেয়েদেরকে প্রতিবাদের অধিকারটুকু পর্যন্ত দেয় নি। অর্থাৎ যন্ত্রণা পাও, তোমাদের জীবন অনিশ্চিত হয়ে যাক্, কিন্তু চিৎকার করতে পারবে না!

উপরন্তু পণপ্রথা হিন্দুসমাজেই যথেষ্ট নিন্দিত ও already বহুদিন যাবৎ অবৈধ। এবং যাঁরা বিয়ের সময় বরপণ আদায় করে বিয়ে করেন তাদের মনের মধ্যেও সেই নিয়ে একটা সুপ্ত অপরাধবোধ, একটা জ্বালা থাকে যার ফলে তাঁরা সর্বজনসমক্ষে সেটা স্বীকার করতে ভয় ও লজ্জা পান। এর অর্থ হল পণপ্রথা হিন্দুসমাজের একটা ন্যক্কারজনক open secret! আর secret যখন, তখন তার দ্বারা এ-ই প্রমাণিত হয় যে হিন্দুসমাজও তাকে theoretically turn down ই করে, uphold করে না, যে কারণে পণপ্রথা বহুদিনই বেআইনি। কেউ পণ দেওয়া নেওয়ার মাধ্যমে বিয়ে করছে জানাতে পারলেই তার জেলযাত্রা নিশ্চিত। 

কিন্তু তিন তালাক? তিন তালাকের বিষয়ে মুসলমানদের largest majority এতদিন কোন প্রতিবাদই করেন নি। তাঁরা দাপটের সঙ্গে rightfully এই জঘন্য অধর্মকে practice করে এসেছেন। কেউ লজ্জা মাত্র পান নি। এমন কি এখনও তাদের মনে সংশয় এবং প্রতিবাদ যে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের রায় মানবেন না কি AIMPLB র। মহাজাতি সদন ভাড়া করে তাঁরা সেই নিয়ে মিটিং করছেন! কত দূর নির্লজ্জতা এঁদের চরিত্রে!

তিন তালাক ব্যবহারকারীরা তিন তালাকের মত জঘন্য কাজকেও তাদের ন্যায্য অধিকার বলেই মনে করতেন। আর তিন তালাকের ফলে মহিলাটির মানবাধিকার, সম্মান, মর্যাদা সব ধূলিস্মাৎ। পছন্দ না হলেই 'get out'! স্ত্রী কে vendor বা supplier এর মত treat করা! এই কি মনুষ্যসমাজ? 

পণপ্রথার টাকার লোভের সঙ্গে কখনও এই ঘৃণ্য বর্বরতার তুলনা চলে? পণপ্রথা প্রকট করে মানুষের অর্থলোভ, আর তিন তালাক? বর্বরতা! একটা হল মানবিক দোষ যা নিন্দনীয়, আর একটা অমানবিক বর্বরতা, যাকে নিন্দা করার ভাষা খুঁজে পাওয়া যায় না! 

Comments

Popular posts from this blog

রথযাত্রা: কুমুদরঞ্জন মল্লিক

কোভিশিল্ড কাহিনী

নব্য কথামালা: শেয়াল ও সারসের গল্প

SSC চাকরি বাতিল: যোগ্য - অযোগ্য বিভাজন আদৌ সম্ভব?