Afrazul VS Hemanta: Strike off Article 29


খুন জখম, ধর্ষণ, রাহাজানি, হিংসা ভারতবর্ষের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তারই মধ্যে কিছু কিছু ঘটনা আলোড়ন তোলে। বিশেষতঃ victim যদি মুসলমান হন, তখন দেশের গণমাধ্যম ও কিছু বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষেরা প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন। অথচ victim যদি ভারতবর্ষের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ভুক্ত হন, তখন এঁরা তত প্রতিবাদ করেন না, অন্ততঃ তেমন শোনা যায় না। তা নিয়ে আবার Right Wing পন্থী রাজনীতিকদের ক্ষোভ জাগে। তাঁদের ন্যায্য প্রশ্ন, কেন এই পক্ষপাতিত্ব?

মালদহের আফরাজুল মারা গেল রাজস্থানে; প্রতিবাদের ঝড় উঠল। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ৩ লক্ষ, রাজস্থান সরকার ৫ লক্ষ টাকা সাহায্য ঘোষণা করল। অথচ কেরালায় খুন হল পশ্চিমবঙ্গের আর এক বাঙালী ছেলে হেমন্ত রায়। মেইনস্ট্রিম মিডিয়া এবং আফরাজুলের ক্ষেত্রে যারা প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছিল, তারা এখন চুপচাপ। 

এই ধরনের তরজা চলতেই থাকে। অথচ আমরা ভেবে দেখেছি কি যে এই দ্বিচারিতার উৎস কোথায়? কেন আফরাজুলদের আর হেমন্তদের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া আলাদারকম? Please kindly note, এই দ্বিচারিতার উৎস আমাদের সংবিধানে।

যদি দেখি সংবিধানে উল্লিখিত ভারতীয় নাগরিকদের fundamental rights বা মৌলিক অধিকারগুলি কি কি, তাহলে দেখব সেগুলির মধ্যে অন্যতম প্রধান দুইটি ধারা হল Article 14. Equality before law এবং Article 15. Prohibition of discrimination on grounds of religion, race, caste, sex or place of birth. এই দুটি ধারা ভারতীয় নাগরিক মাত্রেরই দুইটি নির্দিষ্ট মৌলিক অধিকারকে সুনিশ্চিত করে। কি কি?

সংবিধানের ১৪ নং ধারা বলে ভারতের প্রতিটি নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং দেশের যে কোনো জায়গায় আইনের সমান সুরক্ষা পেতে entitled. আর ১৫ নং ধারা বলে ভারতের কোনো নাগরিকের প্রতি তার ধর্ম, শ্রেণী, জাতি, জাতপাত, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের ভিত্তিতে বৈষম্য করা অসংবিধানোচিত। এই দুইটি ধারা মিলিয়ে দেখলে ভারতের প্রতিটি নাগরিকের এখানে সমান অধিকার, সমান সম্মান, সমান recognition পাওয়া সংবিধান-উপদিষ্ট। এর কোনো ব্যত্যয় হওয়া মানে তা সংবিধান-অবমাননা।

যদিও Article15 এর শেষ অংশে এ-ও স্পষ্ট করা আছে যে সমানাধিকার প্রত্যেকের থাকলেও State চাইলে সামাজিকভাবে এবং শিক্ষাগতভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর নাগরিকদের জন্য বিশেষ সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করতেই পারে। সমানাধিকারের clause তাতে কোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না।

আশ্চর্যের বিষয় হল, Article 15 এর এই শেষ অংশটি যে Article 15 এ প্রথমে উল্লিখিত discrimination-free society র শপথকেই spiritually & practically futile করে দিতে পারে, এবং এই শেষ অংশটির যে রাজনৈতিক অপব্যবহার হতে পারে সেটা বোধহয় সংবিধান প্রণেতারা ভাবেন নি বা ভাবলেও সম্ভাবনাটিকে উপেক্ষা করেছেন।

অথচ ততোধিক আশ্চর্যের কথা হল, সংবিধান প্রণেতারা যা ভাবতে চান নি, সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। সংবিধানে Article 14 ও Article 15 এর মত দুইটি শক্তিশালী ও সাম্যের ধারা থাকা সত্ত্বেও এবং দেশের স্বাধীনতা লাভের ৭০ বছর পরেও ভারতীয় সমাজ প্রকৃত অর্থে আদৌ discrimination-free হয় নি, কিন্তু backward class এর উন্নতির clause এ, পিছিয়ে পড়া মানুষদের 'পিছিয়ে পড়া' অবস্থাতেই রেখে দিয়ে তাঁদের protection এর clause এ এইসব খাতে রাজনৈতিক বরাদ্দ শুধু দিনে দিনে বেড়েছে।

তাছাড়াও আছে Article 29. Protection of interests of minorities. ভারতীয় সংবিধানের এই ধারা বলে, ভারতের নাগরিকদের যে কোন অংশ যারা মূলধারার ভারতীয় সমাজ থেকে কোন না কোন ভাবে আলাদা এবং সংখ্যায় কম, তা সে তাদের ভাষা, লেখার হরফ বা সংস্কৃতি যে perspective থেকেই হোক না কেন, তাদের নিজস্বতাকে বজায় রাখতে পারবেন এবং সরকারি যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এইধরনের সংখ্যালঘুদেরও প্রবেশাধিকার থাকবে। (উপরোক্ত কথাগুলির সত্যাসত্য বিচার করতে গেলে সংবিধানের পৃষ্ঠা থেকে আর্টিকল্ গুলি সম্ভব হলে প্লিজ পড়ুন।)

এই যে Protection of interests of minoritie এর ২৯ নং ধারাটি, এই ধারার বলেই মুসলমানদের যে কোনোরকম সুবিধা বা অসুবিধা, দুইয়েরই ভয়ানকরকম রাজনীতিকরণ হচ্ছে। মুসলমানরা যেহেতু বিদেশী সংস্কৃতির বাহক, ফলে সঙ্গত কারণেই ধরে নেওয়া হয়েছে যে মুসলমান জনগণ তাদের সংস্কৃতির ভিত্তিতে মূলধারার ভারতীয় সমাজ থেকে পৃথক ও লঘু। ফলে Article 29 অনুযায়ী তারা তাদের পৃথক সংস্কৃতি বজায় রাখতে পারবে। দেশের মূলধারার মানুষেরা মুসলমানদের উপর তাঁদের নিজস্ব ভাবধারা চাপিয়ে দিতে পারবেন না। ফলে কোনো মুসলমান লোকের, (যেমন আফরাজুল) উপর যখনই কোনো অবিচার হচ্ছে, তখনই কিছু মানুষ গর্জে উঠছেন যে আফরাজুলের ওপর অত্যাচার হয়েছে সে minority বলেই। অর্থাৎ শুধু মাইনরিটি আইডেন্টিটি ছাড়া কেবলমাত্র মানুষ হিসাবে মুসলমানদের কোনো পরিচয় স্বীকারই করা হচ্ছে না।  আর সেই কারণেই মাইনরিটি প্রোটেকশনের কথা মাথায় রেখে আফরাজুলের মৃত্যুর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই যখন তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে, তখন দেশের সংখ্যাগুরু মানুষ ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। তাঁদের হয়ত মনে হচ্ছে, আগে একজন ভারতীয় নাগরিক হিসাবে আফরাজুলকে বিবেচনা করা হোক্, সে কি করেছিল তার বিচার হোক, শম্ভুলাল কেন আফরাজুলকে অমন নৃশংসভাবে মারল তার আগে বিচার হোক্, তারপর না হয় প্রয়োজনে মাইনরিটি প্রোটেকশনের ধারা মেনে আফরাজুলের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে। আফরাজুল নিশ্চয় আগে একজন মানুষ, তারপর একজন মাইনরিটি ব্যক্তিত্ব। তাই মানবিকতার মানদণ্ডে তার কেসটির বিচার তো আগে হোক্।

অথচ কেরালায় হেমন্ত রায়কে যখন হত্যা করা হল, তখন দেশের বহু মানুষ যেমন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন যে হেমন্তর পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর তেমন কোনো তাগিদ সরকারের দেখা যাচ্ছে না, তেমনই কোনো কোনো লোক এই প্রশ্নও তুলেছেন যে হেমন্তকে মারা হয়েছে সে হিন্দু বলে নাকি সে যা করেছিল তার জন্য? অর্থাৎ হেমন্ত রায়ের বেলায় তাঁরা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গীতে ব্যক্তি হেমন্তর অপরাধের বিচার করতে চাইছেন। অথচ এই মানবিক ন্যায়দণ্ডের বিচারটাই আফরাজুলের ক্ষেত্রেও আগে হোক, তারপর তাঁর মাইনরিটি প্রোটেকশনের কথা ভাবা হোক্, এই দাবী তাঁরা তুলছেন না।

দুইটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রত্যাশা ও আচরনের ভিন্নতা ভারতীয় সংবিধানের ১৪ ও ১৫ নম্বর ধারাকে সরাসরি violate করছে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে সংবিধান প্রণেতারা Article 29 এর এই রাজনৈতিক অপব্যবহারের সম্ভাবনার কথা সম্ভবতঃ ভাবতে চান নি বা ভাবতে পারেন নি। অতিরিক্ত প্রোটেকশন যে মুসলমানদের সামাজিক উন্নতিকে রিটার্ড করে রাখবে, তাঁদের মনুষ্যত্বকে অপমান করবে, সেটা হয়ত তাঁরা contemplate করতে পারেন নি! কারণ এটা contemplate করতে পারলে দেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন করে অপরাজনীতি করার এই সুযোগটাকে রাজনীতির কারবারিদের জন্য জিইয়ে রাখতে তাঁরা নিশ্চয় চাইতেন না!(?)

অথচ একটু চিন্তা করে দেখুন Article 14 ও 15 এর উপস্থিতিতে Article 29 এর কিন্তু কোনো প্রয়োজন ছিল না। Article 14 & 15 র উপস্থিতিতে ভারতের কোনো নাগরিকের সুরক্ষার জন্য logically & rationally আর অন্য কোনো অতিরিক্ত ধারারই কোনো প্রয়োজন ছিল না। Article 15 হল প্রতিটি ভারতীয় নাগরিককে সর্বোচ্চ মানবিক সুরক্ষা ও সম্মান দেওয়ার শপথ। আর Article 14 হল সমস্ত নাগরিকের প্রতি আইনের সমদর্শীতার শপথ। একটি মানুষ বা একটি নাগরিক তার নিজস্বতা এবং সাংস্কৃতিক মৌলিকতাগুলিকে বাদ দিয়ে নয়, এই মৌলিক সত্যটাকে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছিল বলেই ভারতের নাগরিকদের ভাষা, আঞ্চলিকতা, হরফ, সংস্কৃতি ইত্যাদির বিভিন্নতাকে স্বীকার করে নিয়েও রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে তাঁরা সবাই সমান, এই সমদর্শীতার কথা আলাদা করে বলবার প্রয়োজন হয়েছিল। প্রতিটি মানুষের নিজস্বতা এবং বিভিন্নতাকে মান্যতা দিয়েই তার অস্তিত্বের পূর্ণ সুরক্ষা দেওয়ার শপথ হল Article 14 & 15. Article 14 & 15 এই বেঁধে রাখা আছে ভারতীয়ত্বের মূল সুর। ভারতবর্ষের 'বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য'র স্পিরিট।

তার পরেও রাখা হল আরও একটি অতিরিক্ত বাঁধন, Article 29. এবং সেই কারণেই Article 14 & 15 ও Article 29 নিজ নিজ মৌলিকতার প্রেক্ষিতেই সরাসরি পরস্পরবিরোধী। প্রতি নাগরিককে তাঁর নিজস্বতাসহ গ্রহন করে তাঁর প্রতি পূর্ণ সমদর্শীতার মৌলিক অধিকার দেওয়ার পরেও আলাদা করে মাইনরিটি প্রোটেকশনের কথা বলা বাহুল্যমাত্র ও দ্বিচারিতা নয় কি? আমার স্পষ্ট observation হল Article 29 শুধু বাহুল্যই নয়, বরং Article 29 রাখার সঙ্গে সঙ্গে প্রমাণ হয়ে গেল যে Article 14 & 15 এর প্রকৃত স্পিরিটকে আসলে মান্যতা দেওয়া হচ্ছে না। 'অধিকন্তু ন দোষায়'র নীতি এক্ষেত্রে অপ্রযোজ্য।

এ প্রসঙ্গে কবিগুরুর দুটি লাইন আমার মনে পড়ছে।
"যথাসাধ্য ভালো বলে, ওগো আরও ভালো, কোন্ স্বর্গপুরী তুমি করে থাক আলো?
আরও ভালো কেঁদে বলে, আমি থাকি হায়, অকর্মণ্য, দাম্ভিকের অক্ষম ঈর্ষায়।"
'যথাসাধ্য ভালো' দুইটি ধারা থাকার পরেও 'আরও ভালো' করার জন্য Article 29 এর কোনো প্রয়োজন ছিল না।

আমরা জানি কোনো আইন যদি এমন তৈরি হয় যেটা সংবিধানের কোনো ধারার সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করে, সেক্ষেত্রে সেই আইনটিকে বলা হয় আলট্রাভাইরাস বা অসাংবিধানিক। কিন্তু সংবিধানেরই একটি ধারা যদি অপর একটি ধারার সঙ্গে সংঘাত বাধায়, তাহলে কি বলা হবে? সেক্ষেত্রে কোন্ ধারাটিকে প্রকৃত সংবিধানসম্মত বলে ধরা হবে? Article 14 ও 15 নাকি Article 29? কোন্ ধারাটি বাকি সংবিধানের স্পিরিটের সঙ্গে অধিকতর সাযুজ্যপূর্ণ? অবশ্যই Article 14 ও 15. কারণ এই দুইটি ধারার মধ্যে দিয়েই আমরা সম্পূর্ণতঃ discrimination-free একটি সমাজ গড়ার শপথ নিই। Article 29 এর কোনো প্রয়োজন নেই, বরং এই Article টির দ্বারা আমরা ভারতীয়রা নিজেদের দ্বিচারিতা ও ভণ্ডামিকে বাকি পৃথিবীর কাছে স্পষ্ট করে তুলছি।

আসুন এই মুহূর্তে আমরা সংবিধানের Article 29 repealed হোক, এই দাবী তুলি।

আমি আশা করব শিক্ষিত, সুশীল নাগরিক সমাজ, বিশেষতঃ শিক্ষিত মুসলমানরা এই দাবীকে বেশি করে সমর্থন করবেন। কারণ তাঁরা নিশ্চয় এটা বোঝেন যে Article 29 এর দ্বারা in general সাধারণ, দরিদ্র, অশিক্ষিত মুসলমানদের প্রকৃত উন্নতি ও upliftment হচ্ছে না। বরং এর ফলে তাঁদের প্রতিটা মানুষকে কেবলমাত্র এক একটি 'ভোট' করে রেখে দেওয়া হচ্ছে। এতে কি তাঁদের মনুষ্যত্বের অপমান হয় না?

আর কি অদ্ভুত coincidence দেখুন, আমার হঠাৎ খেয়াল হল, ১৪ + ১৫ = ২৯। অর্থাৎ on a lighter note আমার বলতে ইচ্ছা করছে যে সংবিধানের ১৪ আর ১৫ নং ধারা সম্মিলিতভাবে ২৯ নম্বর ধারাকে replace করতেই পারে। ১৪, ১৫ থাকার পর ২৯ এর আর কোনো প্রয়োজন নেই তা-ই শুধু নয়, বরং ২৯ থাকলে ১৪, ১৫ র স্পিরিট নষ্ট হয়ে যায়।

অনেকেই হয়ত বলতে পারেন যে সমদর্শীতার শপথ নিলেও যদি কেউ সেই শপথ ভঙ্গ করেন সেটা anticipate করে minority population এর জন্য অতিরিক্ত সুরক্ষার আগাম বন্দোবস্ত করে রাখাই Article 29 এর উদ্দেশ্য।

তাহলে আমার humble প্রস্তাব হল, তার জন্য আইনের আলাদা provision ইণ্ডিয়ান পেনাল কোডে (IPC) রাখা দরকার। যদি বিচারে দেখা যায় যে কোনো মাইনরিটি ব্যক্তির প্রতি অন্যায় করা হয়েছে সে মাইনরিটি বলেই, সেক্ষেত্রে শাস্তি দ্বিগুণ করা বা অনুরূপ কিছু করা যেতে পারে কি না তা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। একজন সাধারণ সচেতন নাগরিক হিসাবে সে বিষয়ে আমার সামান্য প্রস্তাব না হয় আর এক দিন লিখব। কিন্তু Article 29 in any case repealed হোক। জেগে উঠুক সত্যিকারের সমানাধিকারের ভারতবর্ষ! 'বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য', ভুলে গেছি কি আমরা ভারতবর্ষের এই মূল সুর?

Comments

Popular posts from this blog

রথযাত্রা: কুমুদরঞ্জন মল্লিক

নব্য কথামালা: শেয়াল ও সারসের গল্প

Karnataka Election Result 2023: Observations

এত প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে শিল্প-খরা: কেন?