লিবার্টারিয়ান পেটারনালিজম্ ভিত্তিক জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের নব্য দৃষ্টিভঙ্গি

Out-dated Concept of Liberalism: (পোস্টটা একটু চিন্তামূলক, পড়তে পারেন, জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণ বিষয়কও)

♦️এ জগতে কোনো তত্ত্বই ধ্রুব নয়। এবং তাই স্বাভাবিক। নিয়ত পরিবর্তনশীল চলমান পৃথিবীতে তত্ত্বকে তথ্যের নিরিখে বার বার revisited হতে হবে, এ-ই স্বাভাবিক। এ বছর রিচার্ড থেলার সাহেবের Libertarian Paternalism এর তত্ত্বকে নোবেল প্রাইজ দেওয়ার সাথে সাথেই বোঝা যাচ্ছে এবং সেই সূত্রে বলাই যায় যে নির্বিচার উদারবাদ এই মুহূর্তে already back dated. ঠিক এই সময়ে দাঁড়িয়ে, নির্বিচার উদারবাদকে আর অত্যাধুনিকতা বলা যাবে না, বরং একদম আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গীর নিরিখে সেটি হল পিছিয়ে পড়া মানসিকতার উদাহরণ।

🔷এর ফলে লিবারেলরাই যে প্রাচীনপন্থী হয়ে পড়লেন, সেটা কি তাঁরা realize করতে পারছেন? অর্থাৎ লিবারেলিসম্-এর উত্তর-আধুনিক রূপটিকে হৃদয়ঙ্গম করতে লিবারেলরা পেরেছেন কি?

♦️Libertarian Paternalism... অর্থাৎ কোনো একটি পরিস্থিতিতে মানুষের মনন ও পছন্দকে paternal অর্থাৎ অভিভাবকের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রভাবিত করার তত্ত্ব।

🔷নির্বিচার উদারপন্থীরা বলেন প্রতিটি মানুষ নাকি নিজেই জানেন যে তাঁর নিজের জন্য সবচেয়ে ভালোটা কি! ফলে তাঁর যা ইচ্ছা করবে তিনি তাই করতে পারেন। তাতে বাধা দেওয়া আধুনিক সভ্যসমাজের নীতিবিরুদ্ধ।

♦️থেলার সাহেব বলছেন, প্রতিটি মানুষই যে নিজেই জানেন যে তাঁর নিজের জন্য সবচেয়ে ভালোটা কি, এটাও একটি বহুচর্চিত কিন্তু বিতর্কসাপেক্ষ বিষয়, ধ্রুবসত্য কিছু নয়। তবে নিজের পছন্দ নিজে বেছে নেওয়ার অধিকার একটি মৌলিক অধিকার এবং তা প্রতিটি মানুষেরই অবশ্যই থাকা উচিত। থেলারের তত্ত্ব, মানুষ নিজের পছন্দ নিজেই বেছে নেবে, কিন্তু তার সেই পছন্দকে প্রভাবিত করা যেতেই পারে for his/her well being!

🔷না, নিজেদের পছন্দকে অন্যের উপর চাপানোর কথা থেলার সাহেব বলেন নি, বরং তাদের পছন্দকেই প্রভাবিত করার কথা বলেছেন। অর্থাৎ প্রভাবিত করতে হবে মানুষের মনোজগৎকে যাতে তার পছন্দই পরিবর্তিত হয় from within his or her own self.

♦️এই তত্ত্বকে সম্মানিত করার সঙ্গে সঙ্গে, ভেবে দেখুন, জীবন, পৃথিবী এবং উদারবাদের প্রকৃত সংজ্ঞা কি, সেই সব বিষয়েই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী বদলে যেতে বাধ্য।

🔷আমি বলতে চাইছি, পুরোনো লিবারেলিসম্ এর নামে "যা ইচ্ছা করছে তাই" করার নীতিটিকে uphold না করে মানুষের  ইচ্ছাগুলিকেই influence করার চেষ্টা করা উচিত। অর্থাৎ মানুষের রুচি, পছন্দ, যুক্তিশীলতা ও নৈতিকতাবোধের অভিঘাতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে হবে। অবশ্যই paternally, অর্থাৎ অভিভাবকসুলভ শুভাকাঙ্খা নিয়ে, কিন্তু একই সঙ্গে Libertarian মানসিকতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

♦️অর্থাৎ মানুষের মনকে অর্থাৎ মস্তিষ্ককে rationally & convincingly প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে হবে; কিন্তু চেষ্টা সত্ত্বেও কেউ যদি অন্য কোনরকম পছন্দকে বেছে নেয়, তাহলেও তার পছন্দকে সম্মান জানানোর Libertarianism ও থাকতে হবে আমাদের। তাহলেই, এমনকি অত্যাধুনিকতার পরিভাষাতেও, তাকে আর গোঁড়ামি বা intrusiveness বলা যাবে না।

🔷ঠিক এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, বাংলাদেশ যে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়শিবিরে তাদেরকে নাশবন্দী করানোর wilful option দিচ্ছে, এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

♦️বর্তমান পৃথিবীতে জনসংখ্যা একটি glaring challenge.  এমতাবস্থায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের option দেওয়া অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত ও সময়োপযোগী, বিশেষতঃ সেইসব ভৌগোলিক অঞ্চলগুলিতে যেখানে জনঘনত্ব অত্যধিক এবং সেই সব anthropological origin এর মানুষের মধ্যে যাদের fertility ও জন্মহার অত্যধিক। এবং সেই option এর যুক্তিগ্রাহ্যতা সাধারণ জনমানসের সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ বিশ্বনাগরিকমঞ্চেরই নেওয়া উচিত।

🔷হ্যাঁ, পুরাতনপন্থী উদারবাদীরা হয়ত বলবেন যে সন্তানধারনের অধিকার মানুষের মৌলিক ও ব্যক্তিগত অধিকার, তাতে হস্তক্ষেপ করা চলে না। Back dated ভাবধারায় চিন্তা করলে তা মিথ্যেও নয়। কিন্তু উত্তর-আধুনিককালে এ কথা অবশ্যই ভাবতে হবে যে যাঁরা অগুন্তি সন্তানধারণ করছেন তাঁদের এবং তাঁদের close neighbourhood এর জীবনমাত্রার মানের যে ক্রমঅবনমন ঘটছে সেই বিষয়ে তাদের চেতনাকে জাগ্রত করার কোনো চেষ্টা আমরা করছি কি? এই awareness building এর জন্য তো সর্ববিধ আন্তর্জাতিক প্রয়াসের প্রয়োজন! তবেই গিয়ে প্রকৃত অর্থে তাদের মানবাধিকার সংরক্ষিত হতে পারে।

♦️উত্তর-আধুনিককালে আমাদের ভাবতেই হবে যে, যে মানবাধিকার প্রয়োগ করলে মানুষ নিজের ধ্বংসকেই ত্বরান্বিত করবে সেই অধিকার প্রয়োগ না করাই উত্তর-আধুনিকতা। এবং এই উত্তর-আধুনিক চিন্তায় জনমানসকে উদ্বুদ্ধ করাও, আমার মতে, হবে Libertarian Paternalism এর আর একটি বাস্তব প্রয়োগ।

🔷গোটা বিশ্বে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে যে কোনো মহিলা সর্বাধিক কটি সন্তান জন্ম দিতে পারে তা নির্ভর করা উচিত on her own health conditions, financial conditions, provision of space for the newborn population & ability to assure them the minimum required quality of life by the parents as well as by the State  এবং এই নিয়মটা should be standardized depending on which global locality the concerned woman belongs to! বৈজ্ঞানিক বহুমাত্রিক মূল্যায়নের মাধ্যমে স্থির করা উচিত একটি মহিলা তার পূর্ণ প্রজননক্ষম জীবদ্দশায় সর্বাধিক ঠিক ক'টি সন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম। এই সংখ্যাটি অবশ্যই আলাদা আলাদা মহিলার ক্ষেত্রে আলাদা হবে কারণ বহুমাত্রিক মূল্যায়নে তাদের প্রত্যেকের পরিস্থিতি আলাদা। এবং যে কোন মহিলার তার জীবনে সেই scheduled maximum number or lesser সংখ্যায় বাচ্চা জন্ম দিতে পারার জন্য entitled হওয়া উচিত।

♦️যদি বলেন যে কার কটা বাচ্চা হতে পারবে সেটা অন্য কেউ হিসেব করে বলবে এটা অমানবিক বা মৌলিক মানবাধিকারবিরোধী, তবে বলব যে মোটেই সেটা সেরকম নয়, বরং বৃহত্তর অর্থে মানবাধিকারের সম্প্রসারণ ঘটছে এক্ষেত্রে। কারণ এক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষকে তার অধিকার প্রয়োগের ঠিক পূর্বে নিজ দায়িত্ব সম্বন্ধেও সচেতন হয়ে ওঠার প্রয়োজন হচ্ছে।

🔷যৌনতার অধিকার জৈবিক ও শারীরবৃত্তীয় অধিকার। কিন্তু সন্তান উৎপাদনের অধিকার বৃহত্তর সমাজের স্বীকৃতিসাপেক্ষ হওয়াই বাঞ্ছনীয়; সন্তানদের স্বার্থেই। আর যে সমাজে মানুষ তার অধিকার ও দায়িত্ব উভয় বিষয়েই সমান সচেতন, সেই সমাজ প্রকৃত অর্থেই উত্তর-আধুনিক সমাজ।

♦️রোহিঙ্গারা যদি ভারতে আশ্রয়প্রার্থী হয়, তবে ভারতেরও উচিত একমাত্র বাধ্যতামূলক নাশবন্দী ও লাইগেশনের পরিবর্তেই তাদের আশ্রয় দিতে রাজি হওয়া। রোহিঙ্গাদেরও তাতে রাজি না হওয়ার পূর্ণ অধিকার ও স্বাধীনতা রয়েছে এবং তারা যদি সেই শর্তে ভারতে আশ্রয় গ্রহন করতে রাজি না হয়, তবে তারা অনায়াসে ভারতবর্ষ ত্যাগ করে অন্যত্র যেতে পারে। তবে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষিত ভবিষ্যতের স্বার্থেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বিশ্বনাগরিকমঞ্চের সক্রিয় হয়ে ওঠা প্রয়োজন। কারণ তা না হলে শুধু মানবসভ্যতার নয় পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হওয়া অনিবার্য।

🔷থেলার সাহেবের তত্ত্বের সময়োপযোগী ও সত্যনিষ্ঠ প্রয়োগ উত্তর-আধুনিক মানবসভ্যতাকে উজ্জ্বলতর দিশা দেখাতে পারে, বিশ্বের মানবসম্পদের সার্বিক ও মেধাশক্তির প্রকৃত উন্নতি ঘটাতে পারে।

♦️সময় এসেছে প্রাচীনপন্থী Libertarianism এর হাত ছেড়ে অত্যাধুনিক Libertarian Paternalism এর হাত ধরার।

Comments

Popular posts from this blog

রথযাত্রা: কুমুদরঞ্জন মল্লিক

নব্য কথামালা: শেয়াল ও সারসের গল্প

Karnataka Election Result 2023: Observations

এত প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে শিল্প-খরা: কেন?