ধর্ষণ: Knowledge is power -- প্রয়োজন বৈজ্ঞানিক সচেতনতা বৃদ্ধির

জি ডি বিড়লা স্কুলে যা ঘটেছে, তা নিয়ে নিন্দা করার বা স্তম্ভিত হওয়ার বোধ হয় আর কিছু বাকি নেই। তাই এখন সময় ঘুরে দাঁড়ানোর। খোদ কলকাতা শহরের নামী গার্লস স্কুলেও যখন এই ঘটনা ঘটল, তখন তা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে একটা জিনিসই দেখায়। তা হল আমাদের সমাজে মানুষের মধ্যে প্রকৃত শিক্ষা ও বোধের প্রবল, প্রচণ্ড, কদর্য অভাব। যৌনাঙ্গ যে চোখ, নাক, হাত, পা ইত্যাদি আর পাঁচটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মতই আর একটি অঙ্গ মাত্র এই সহজ, সরল, নির্লিপ্ত সত্যিটা যতদিন পর্যন্ত না আমরা খোলা মনে, সমস্ত কুণ্ঠা ঝেড়ে ফেলে ছোট্টবেলা থেকে ছেলে, মেয়ে নির্বিশেষে সব বাচ্চাদের শেখাতে পারব, ততদিন থাকবে ধর্ষকাম। সরকারের সমাজকল্যান দপ্তরের উচিত ধর্ষণ ও ধর্ষকাম সংক্রান্ত বিষয়ে সমস্ত আড়াল সরিয়ে ফেলে, কোনো ঢাক ঢাক গুড় গুড় ছাড়াই সমাজ সচেতনতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করা।


আজকে চার বছর, কাল দু'বছর, পরশু ন' বছরের বাচ্চাকে ধর্ষণ করবে কোনো অভিষেক রায় বা কোনো মফিসউদ্দিন, আর আমাদের দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে হবে, আর বড়জোর সোশ্যাল মিডিয়ায় উত্তাল হব, এসব আর কতদিন? বরং চলুন না সমস্যার মূলে গিয়ে দেখার চেষ্টাটা অন্ততঃ করি যে সমস্যা আসলে কোথায়! 


সেটা করতে গেলে যে প্রশ্নের উত্তর সর্বাগ্রে জানতে হবে, তা হল, একটি মানুষ ধর্ষণে প্রবৃত্ত হয় কেন? অন্যতম কারণ সম্ভবতঃ এই যে তার নিজের জীবনে যৌনতা নিয়ে সে হয়ত বড্ড বেশি fantasize করে। তার কাছে জীবন হয়ত যৌনতাসর্বস্ব। সেই লোকটি হয়ত প্রতিটি মেয়েকেই তার নিজের যৌনতাকে উপভোগ করতে সাহায্য করার একটি tool মাত্র বলে মনে করে। সবসময়ই এমনই মনে করে তা যদি না-ও হয়, কিন্তু কোন কোন সময়ে যে তা মনে করে, তা হয়ত বা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। কিন্তু জীবনে যৌনতাকে এত বেশি গুরুত্ব দেওয়া বা বিষয়টিকে নিয়ে এত বেশি fantasize করার আসল কারণ যে যৌনতার বিজ্ঞান সম্বন্ধে সম্যক ও পরিষ্কার জ্ঞান না থাকা, বা আদৌ জ্ঞান না থাকা, সেটা আমরা কবে address করতে পারব? 


আমার মতে (একান্ত আমার ব্যক্তিগত মত) প্রতিটি মানুষের এটা জানা একান্তই প্রয়োজন যে ধর্ষকাম জাগ্রত হওয়ার একান্তই বৈজ্ঞানিক ও নেহাৎই শারীরবৃত্তীয় কারণ আছে। এবং সেই জন্যই তা জাগ্রত হলেই যে তাতে indulge করতে হবে তা নয়, বরং এই সাধারণ সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন যে ধর্ষকাম অনুভব করলেই তাতে প্রবৃত্ত না হয়ে যে কোন ব্যক্তির উচিত নিজের মনের কাছে প্রশ্ন তোলা যে অন্য আর একটি মানুষকে অপরিসীম যন্ত্রণা দিয়ে তার কি নিজের প্রবৃত্তি চরিতার্থ করতে যাওয়া আদৌ উচিত কাজ? ধর্ষকাম যে জাগ্রত হয়, সেই বিষয়টিকেই একটু বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে দেখলে বরং সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে আমার মনে হয়েছে। যৌনতার শারীরবিজ্ঞান যদি প্রত্যেককে শেখানো হয়, তাহলে যৌনতা নিয়ে এই fantasy উবে গিয়ে বিষয়টা একটা ঘোর কচকচিতে পরিণত হবে এবং একটি so called interesting & fantasizing বিষয় সাথে সাথেই এক প্রবল শুষ্ক বৈজ্ঞানিক বিষয়ে পর্যবসিত হবে। তখন ধর্ষকামের উদ্গম হওয়া মাত্র লোকটির মনে হতে শুরু করবে, "তার মানে এই মুহূর্তে আমার  serum androgen level খুব high, আর সেই জন্যই আমার মধ্যে এমন অনুভূতি হচ্ছে", আর এমন academic ভাবনার উদ্রেক হওয়া মাত্রই তার ধর্ষকাম বেশ খানিকটা dissolved হয়ে যাওয়াটাই প্রত্যাশিত। কারণ মস্তিষ্কের reasoning centre যদি active হয়ে ওঠে, তখন মস্তিষ্কের যে অংশ উদ্দীপিত হওয়ার ফলে ধর্ষকাম উৎপন্ন হয়েছিল, সেই অংশের উদ্দীপনা কমবে, কারণ মস্তিষ্কের অন্য একটি অংশ তখন সক্রিয় হয়ে উঠেছে। 


তাই জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে যৌনতার শারীরবৃত্তীয় পাঠ আমাদের সমাজকল্যান দপ্তর দিতে শুরু করতে পারে কিনা, সেটা ভেবে দেখার সময় এসেছে। 


যৌনতা একটা psychosomatic phenomenon. অর্থাৎ যৌনতা শুধুই শারীরিক আগ্রাসন নয় বরং ব্যক্তির psyche অর্থাৎ তার মস্তিষ্ক, অর্থাৎ তার Central Nervous System এর অন্যতম primary ভূমিকা আছে এর পিছনে। কিভাবে? চলুন সহজভাবে দেখা যাক বিষয়টিকে।


কোন ব্যক্তির মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশ যখন কোন উত্তেজক বা stimulus এর দ্বারা উদ্দীপিত হয়, (সেই stimulus কোনো দৃশ্য বা চিন্তা, যে কোনো কিছুই হতে পারে) তখন মস্তিষ্ক signal পাঠায় ব্যক্তির gonads বা জননাঙ্গে। Gonads তখন produce & secret করতে আরম্ভ করে certain hormones called androgens বা sex hormones. একটি অন্যতম sex hormone হল testosterone. এর ফলে ব্যক্তির শরীরে সেই মুহূর্তে testosterone এর মত androgen level অত্যধিক বৃদ্ধি পায়। এবং তারপর এই testosterone নামক হর্মোনটি তার characteristic manifestation exhibit করতে আরম্ভ করে। অর্থাৎ সেই ব্যক্তির মধ্যে produce করে sexual aggression. এবার যদি সেই ব্যক্তি যেন তেন প্রকারেণ সেই aggression express করে, তাহলে তার immediate পরেই testosterone level fall করে যায়। কিন্তু এর ফলে মস্তিষ্কের কাছে এই signal ই পৌঁছয় যে আবার যখন কোনো কারণে মস্তিষ্কের সেই বিশেষ অংশ উদ্দীপিত হয়, তখন আবার সেটি একই cyclic process এ সেই ব্যক্তিকে sexually stimulate করে। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি যদি sexual stimulus feel করা মাত্রই তাতে indulge করে, তাহলে তার সেই indulge করার প্রবনতাও উত্তরোত্তর বাড়বে। 


এটা বোঝা দরকার যে আমাদের শরীরের হর্মোন সিস্টেম(endocrinal system) কাজ করে একটা মস্তিষ্ক-নিয়ন্ত্রিত feedback system হিসেবে। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি sexual stimulus এ যত বেশি করে indulge করবে, তার hormonal system ও ততটাই promptly তাকে সঙ্গত করবে। অর্থাৎ প্রয়োজন এই বৈজ্ঞানিক চেতনার যে যে কোনো মুহূর্তে sexual stimulus অনুভূত হতেই পারে, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে সাথে  সাথে তাতে indulge করতে হবে। 


মনে রাখতে হবে যে Stimulus feel করাকেই অন্যায় বলে দাগিয়ে দিলে কিন্তু সমস্যা কমবে না, বরং বাড়বে। কারণ মস্তিষ্ক উদ্দীপিত হতেই পারে, তা প্রাকৃতিক। কিন্তু Stimulus feel করা সত্ত্বেও তাতে indulge না করার শিক্ষা প্রতিটি মানুষের পাওয়া উচিত with all scientific details. 


সরকারের তরফ থেকে উচিত কোনো ঢাক ঢাক গুড় গুড় না করে পুরো বিষয়টিকে ছবি এঁকে জলের মত সহজ করে বুঝিয়ে দেওয়া সমস্ত সাধারণ মানুষকে। গণমাধ্যমগুলিতে এমনকি, রাস্তায় হোর্ডিং লাগিয়েও। তাতে প্রথম প্রথম মানুষ হয়ত তা নিয়ে অত্যুৎসাহী বোধ করবে, ঠাট্টাতামাশা, বক্রোক্তি, সমালোচনা ইত্যাদিও করবে, কিন্তু ক্রমশঃ sexuality র মত একটা তথাকথিত রহস্যময় ও আকর্ষণীয় বিষয় যখন পাঁচপেঁচি বৈজ্ঞানিক illustrations এ পরিণত হবে, তখন গোটা বিষয়টিকেই বিরক্তিকর রকমের boring বলে মনে হবে। সেক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষেরই জানা হয়ে যাবে যে there's nothing so mysterious & unknown about sexuality. এবং তার ফলেই কমবে sexual assaults বা abuses এর ঘটনা।

Knowledge is truly called power.

Comments

Popular posts from this blog

রথযাত্রা: কুমুদরঞ্জন মল্লিক

নব্য কথামালা: শেয়াল ও সারসের গল্প

Karnataka Election Result 2023: Observations

এত প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে শিল্প-খরা: কেন?