পশ্চিমবঙ্গ: Suggestions to CM (2)

Dear CM, 

পশ্চিমবঙ্গে এখন আর ডেঙ্গু নয়, দোসর হয়েছে ম্যালেরিয়া ও জাপানী এনকেফালাইটিসও। পশ্চিমবঙ্গে মশাবাহিত রোগের প্রকৃত অর্থেই মহামারী দেখা দিয়েছে। ম্যাডাম, চলুন না, দেখা যাক, যে কি ধরনের পরিকাঠামো থাকলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে আর এই সমস্ত রোগের মোকাবিলায় পিছিয়ে পড়তে হবে না? 


সাধারণ মানুষও হয়ত জানেন যে ডেঙ্গু কোনো প্রাণঘাতী রোগ নয় কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার অভাবে প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে। জানতে হবে কেন মানুষ সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না।


ডেঙ্গু চিকিৎসার বা যেকোন মহামারী সৃষ্টিকারী রোগের চিকিৎসার সর্বপ্রথম ধাপটি হল রোগটি সম্বন্ধে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এটি সোশ্যাল মেডিসিন প্র্যাকটিসের অন্তর্ভুক্ত বিষয়। 


যে সময়ে মহামারী দেখা দিয়েছে, সেই সময় এবং অন্যান্য সময়েও গ্রামীণ এবং পৌরসভাগুলির স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ হওয়া উচিত এলাকায় এলাকায় ঘুরে মানুষকে সচেতন করা যে জ্বর হলে বা কি কি ধরনের উপসর্গ শরীরে দেখা দেওয়া মাত্র রুগীকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হবে বা নিকটবর্তী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। মানুষ সচেতন থাকলে বেশির ভাগ সময়ই বড় বিপদ এড়ানো যায়। এই ধরনের Awareness Building Programme এমন tropical জলবায়ু অঞ্চলে মাঝে মাঝেই conduct করা উচিত। সরকারের তরফ থেকে। ম্যাডাম, দয়া করে তার জন্য প্রয়োজনীয় উপযুক্ত সংখ্যায় স্বাস্থ্যকর্মী, রাজ্যে নিয়োগ করুন।


Public Awareness Building films তৈরি করেও এলাকায় এলাকায় দেখানো যেতে পারে time to time.


বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডেঙ্গু সংক্রমণ হয়ে রোগ অনেক জটিল হয়ে ওঠার পর উপায়ান্তর না দেখে বাধ্য হয়ে রুগীরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসছে। অথচ যদি উপযুক্ত পরিকাঠামো থাকত, ও Awareness থাকত, তবে নিশ্চয় মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করে তোলা যেত যে কি কি উপসর্গ দেখা দেওয়ামাত্র বিন্দুমাত্র দেরি না করে তারা যেন রোগ জটিল হয়ে ওঠার আগেই চিকিৎসকের কাছে যান।


স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব, সোশ্যাল মেডিসিন প্র্যাকটিসের অভাব পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অভাবের অন্যতম অঙ্গ। 


গ্রামীন ও পুরসভা অঞ্চলগুলিতে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিক, ইত্যাদি কর্মীর অভাব কারণ সরকারি নিয়োগ বন্ধ। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা যত, প্রয়োজন তার চেয়ে ঢের বেশি। 


ডাক্তার ফার্মাসিস্ট, নার্স, প্যারামেডিক ইত্যাদি নিয়োগ না করে করদপ্তরের bureaucrat দের Health এ বদলি করে রাজ্যের স্বাস্থ্যপরিষেবার উন্নতি কিভাবে হবে ম্যাডাম? ভেবে দেখুন তো, রাজ্যে যে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, জাপানি এনকেফালাইটিসের মড়ক লেগেছে, তার জন্য আসলে কি এবং কাদের প্রয়োজন? স্বাস্থ্যকর্মীদের নাকি bureaucrat দের? কর দপ্তরের Bureaucrat রা স্বাস্হ্যে এসে কি করবেন? প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যপরিকাঠামোর কি কি উন্নতি প্রয়োজন তা suggest করবেন তো? তা সেটা কি আমাদের জানা নেই?


এবছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যাতেও দেশের মধ্যে এক নম্বরে পৌঁছে গেছে পশ্চিমবঙ্গ। এবং যতটা জানা যাচ্ছে যে anti-malarial drug গুলির যথাযথ প্রয়োগের অভাবে, ভুল ওষুধ প্রয়োগের ফলে, সঠিক ওষুধের under-dosage এর ফলে এবং সঠিক জীবাণু নির্ণয়ে microbiologists' failure এর কারণে, এবং ওষুধের ভুল প্রয়োগের ফলে জীবাণুগুলির মধ্যে resistance তৈরি হওয়ার ফলে হয়ত এত রুগী ম্যালেরিয়ায় মারা যাচ্ছেন। এই সমস্ত ত্রুটিগুলিই মূলতঃ একটি দিকেই নির্দেশ করছে। এবং তা হল পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় উপযুক্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব এবং diagnosis ইত্যাদি পরিকাঠামোরও প্রবল অভাব।


ডাক্তার, নার্স, প্যারামেডিক স্টাফ সরকারি চাকরিতে না এসে বেসরকারি সেক্টরে চলে যাচ্ছেন। অর্থাৎ সরকারি কর্মচারীদের মাইনে ঠিকভাবে না দেওয়ার অপরিসীম খেসারত দিতে হচ্ছে রাজ্যের মানুষকে। তাঁদের জীবনের বিনিময়ে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার চাইলেও কোনো ডাক্তার আর সরকারি চিকিৎসক হিসাবে চাকরির আবেদন করছেন না। ম্যাডাম, সরকারী কর্মীদের ন্যায্য মাইনে না দিয়ে কাজ করানোর নীতি আপনি kindly বদলান রাজ্যের মানুষের জীবনের স্বার্থে।


প্রতিটি ব্লক হাসপাতালে একজন ডাক্তারবাবুর সর্বক্ষণ থাকার কথা। উপরন্তু এইরকম মহামারীর সময়  affected অঞ্চলগুলির ব্লক হাসপাতালে সর্বক্ষণের চিকিৎসক ছাড়াও অন্ততঃ আরও একজন অতিরিক্ত চিকিৎসককে deploy করা উচিত যিনি হাসপাতালে duty করার সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় ঘুরে ঘুরে রুগী দেখবেন। 


তবে শুধু চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী থাকলেই হবে না, চিকিৎসার ব্যবস্থা অর্থাৎ set up, সরঞ্জাম ইত্যাদিও পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত থাকতে হবে। বছরের অন্যান্য সময়ে সেগুলি তত ব্যবহার হবে না তা জানা সত্ত্বেও reserve পরিকাঠামো, saline infusion এর reserve ব্যবস্থা ইত্যাদি তৈরি থাকা উচিত যাতে বাহক সংক্রামিত, জলবাহিত ইত্যাদি সংক্রামক রোগের মহামারী tackle করার প্রয়োজনীয় infrastructure তৈরি থাকে। দরকার হলেই যাতে ঝাঁপিয়ে পড়া যায়।


প্রথমতঃ রাজ্যের থাকা উচিত কতগুলি অত্যাধুনিক Mobile Diagnostic cum Treatment Van যেগুলিতে করে affected block ও পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে গুলিতে ডাক্তারবাবুরা সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মীসহ দৈনিক ঘুরবেন। যে সমস্ত রুগীকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করা সম্ভব, তাদেরকে home care এ রেখেই চিকিৎসার guidance দেবেন আর যে সব patients কে বাড়িতে রাখলে রোগের জটিলতা বাড়তে পারে, তাদেরকে সময় থাকতেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার উপদেশ দেবেন।


রাজ্যের Mobile Diagnostic cum Treatment Van গুলি equipped হওয়া উচিত minimum diagnostic infrastructure সহ। যেমন ডেঙ্গু-ডায়াগনসিস-প্যাকেজ অর্থাৎ রক্তপরীক্ষার চটজলদি কিট যেগুলো একবারেই ns1, IgG, IgM & platelet count পরীক্ষা করতে সক্ষম, এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট deliver করতে সক্ষম, তা অবশ্যই থাকা উচিত এই Mobile Van গুলিতে। যে সব রুগী জ্বরে ভুগছেন অথচ রক্তপরীক্ষা করাতে দূরে যেতে হবে বলে রক্তপরীক্ষা করাতে পারেন নি, সেই সব রুগীদের রক্তপরীক্ষার ব্যবস্থা এই Mobile Diagnostic cum Treatment Van গুলিতেই হওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে অনেক রুগীই critical হয়ে ওঠার আগেই সঠিক চিকিৎসা পাবেন। 


এই Van গুলি প্রকৃতপক্ষে হওয়া উচিত অত্যাধুনিক Mini healthcare units on wheel. এগুলিতে পোর্টেবল্ X-ray, ECG, রুটিন রক্তপরীক্ষা ইত্যাদি যেন থাকে, যাতে প্রত্যন্ত এলাকার লোকও প্রয়োজনে চটজলদি এই পরিষেবাগুলি পায়। 


ডেঙ্গু চিকিৎসার protocol অনুযায়ী নিয়মিত রক্তপরীক্ষা ও fluid management অর্থাৎ blood volume যাতে হঠাৎ কমে না যায় অর্থাৎ রক্তে যাতে জলের পরিমাণ হঠাৎ কমে না যায় তা সুনিশ্চিত করার জন্য serious patient দেরকে saline infuse করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রামীণ ও ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতেও রেডি থাকা দরকার। রক্তপরীক্ষার Dengue Diagnosis Early-detection Kit এর বন্দোবস্ত কেবলমাত্র Van গুলিতে নয়,  সমস্ত ব্লক হাসপাতালগুলিতেও  অবশ্যই থাকা উচিত। আর একসঙ্গে যাতে বহু রুগীকে saline দেওয়া যায়, platelet infuse করা যায়, তার জন্য ব্লক হাসপাতালগুলিতে শুধু নয়, গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতেও ব্যবস্থা থাকা উচিত।


গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো তৈরি থাকা উচিত যাতে প্রয়োজনে এমন মহামারীর সময় affected area গুলিতে অতিরিক্ত স্বাস্থ্যকর্মী deploy করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়। তার জন্য স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিক স্টাফের নিয়োগ যত শিগগির সম্ভব বাড়ানো উচিত এবং গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতেও এমন দুঃসময়ে বহু রুগীকে একসঙ্গে যাতে saline infuse করা যায়, তার ব্যবস্থা reserve থাকা উচিত।


Affected area গুলিতে Mobile Treatment Van গুলির টহলদারি থাকা উচিত দৈনিক যাতে অসুস্থ রুগীরা প্রয়োজনে প্রতিদিন রক্তপরীক্ষা করাতে পারেন এবং পরীক্ষার ফলের উপর নির্ভর করে প্রয়োজনে তৎক্ষণাৎ গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অথবা ব্লক হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যেতে পারেন।


রাজ্যের হাতে এমন অত্যাধুনিক Mobile Diagnostic cum Treatment Van যদি গোটা দশেক থাকে, তাহলেই যেসব এলাকাগুলিতে রোগের সংক্রমণ অপেক্ষাকৃত বেশি, সেই অঞ্চলগুলিতে Van পাঠিয়ে পরিস্থিতি অনেক সহজে সামাল দেওয়া যাবে। 


বেশ কিছু মোবাইল Health Inspectors on Bike নিয়মিত টহল দিন ডেঙ্গু affected area গুলিতে যাতে মানুষ প্রয়োজনে তাঁদেরকে রিপোর্ট করতে পারেন। তাঁদের ফোন নম্বর থাকুক গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসগুলিতে এবং hence লোক্যাল মানুষের কাছেও। 


যেসব multi speciality hospital নতুন তৈরি হয়েছে, সেগুলিতেও অনুরূপ পরিকাঠামো তৈরি হোক্। 


কেবলমাত্র সচেতনতা, নিয়মিত রক্তপরীক্ষা আর steady fluid management পরিকাঠামো তৈরি করে ফেলতে পারলেই গত ছ'বছরে রাজ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ যেমন steadily বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমন আগামী দু'তিন বছরেই তা তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমে যাবে। তার জন্য  প্রয়োজন আধুনিক চিন্তাভাবনা, অত্যাধুনিক পরিকাঠামো তৈরি এবং উপযুক্ত সংখ্যায় চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর নিয়োগ। 


ভুললে চলবে না, পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা যে বিপুল হারে বাড়ছে, বিশেষতঃ বাংলাদেশ বর্ডার সংলগ্ন এলাকাগুলিতে, ফলে রুগীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, সেই অনুপাতে ডাক্তার ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা না বাড়লে ফাঁকিতে পড়ছে রাজ্যের অজস্র সাধারণ মানুষ। 


বাহক সংক্রামিত রোগের প্রকোপ কমাতে গেলে রাজ্য সরকারের উচিত পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যাবৃদ্ধিতেও রাশ টানা। এতটুকু ছোট্ট রাজ্যে যদি এলাকাবিশেষে জনঘনত্ব অত্যন্ত বেশি হয়ে পড়ে, তবে সেই এলাকাগুলির পরিবেশের সুস্থ বাসযোগ্যতা, বর্জ্য নিষ্ক্রমণব্যবস্থা, জলনিকাশি ব্যবস্থা ইত্যাদিও সমানুপাতে উন্নত মানের না হলে এমন ধরনের মহামারী prevent করা যাবে না। অর্থাৎ বেশি লোককে আশ্রয় দিতে গেলে রাজ্যের বাসযোগ্য পরিবেশ ও নাগরিক পরিকাঠামোকেও পাল্লা দিয়ে উন্নত করতে হবে। তাতে রাজ্যের খরচও বিপুল বৃদ্ধি পাবে। 


উপযুক্ত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে তুলে  রাজ্যের অসুস্থ মানুষের সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে উন্নয়নের স্লোগান ষোলআনাই বৃথা! ম্যাডাম প্লিজ স্বাস্থ্যব্যবস্থা এমন করুন যাতে সমস্ত দেশ এবং সারা বিশ্ব আমাদের রাজ্যের পরিষেবার উদাহরণ দিতে পারে। 

Comments

Popular posts from this blog

রথযাত্রা: কুমুদরঞ্জন মল্লিক

নব্য কথামালা: শেয়াল ও সারসের গল্প

Karnataka Election Result 2023: Observations

এত প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে শিল্প-খরা: কেন?