পশ্চিমবঙ্গ: Suggestions to CM(1)

উত্তর চব্বিশ পরগণার হাড়োয়ার জনসভায় মমতা বলেছেন সংখ্যালঘুদের উনি অবহেলা করতে পারেন না কারণ তারা পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার ৩১%। সেই জন্যই নাকি সংখ্যালঘুদের জন্য তাঁর সরকার কাজ করছে। আবার তফশিলি জাতি, উপজাতিকেও তিনি ignore করতে পারেন না কারণ তারাও ২৩.৬%। মমতাদেবীর divide n rule policy র প্রয়োগের ধূর্ততার প্রশংসা না করে পারছি না। এই statement এর দ্বারা বাংলার হিন্দুদেরকে উনি at once একটি মাত্র বাক্য খরচ করে তফশিলি জাতি, উপজাতি এবং জেনারেল ক্যাটেগরি তে ভেঙ্গে দিয়ে হিন্দুদের নিজেদের মধ্যেও একটা বিভেদের দেয়াল তুলে দিতে চাইলেন। মুসলমানরা regimented, সুতরাং তাদের ভোট পেতে গেলে মসজিদকে খুশি করলেই চলে, কিন্তু হিন্দুভোট যাতে কিছুতেই regimented হতে না পারে, তার জন্যই এই divide n rule policy. 

কিন্তু আমি পজিটিভ থিংকিং এ বিশ্বাসী। আমার মনে হল, পরোক্ষে মমতাদেবী পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের regimented হয়ে ওঠার পরামর্শ এবং অনুপ্রেরণা জোগালেন। মুসলমানরা ৩১%। তফশিলি, অ-তফশিলি সব মিলিয়ে হিন্দুরা যদি regimented ৬৯% হয়ে উঠতে পারে, তাহলে এবং একমাত্র তাহলেই পাত্তা দেবেন মমতা আমাদের। 

কে বলেন মমতাদেবী হিন্দুবিরোধী? এত বড় প্রেরণা যে জুগিয়ে গেলেন হাড়োয়ার সভায় হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য? এখনও কি ঐক্যবদ্ধ হব না আমরা? 

কিন্তু ম্যাডাম, শুধু divide n rule পলিসি প্রয়োগ করে ভোটপলিটিক্স করতে জানলেই হবে না, সরকারি কাজও করতে হবে! প্রায়শঃ শুনি আপনার সরকার সংখ্যালঘুদের জন্য কাজ করছে। দেখা যাক্ কি রকম কাজ করছে আপনার সরকার। দেগঙ্গা পশ্চিমবঙ্গের এমন একটা জায়গা যেখানে সংখ্যালঘুরা সংখ্যায় লঘু নয়, বরং তারাই সংখ্যাগুরু। এবং এই বছর পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি লোক মারা গেছে বোধ হয় দেগঙ্গাতেই। অর্থাৎ সরকারের বেহাল ও বিধ্বস্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থার গুনগার তো দেগঙ্গার তথাকথিত সংখ্যালঘুদেরকেই বেশি দিতে হয়েছে তাই না? ডেঙ্গু মশারা নিশ্চয় সিলেকটিভলি কামড়ায়নি? এবং তথ্য সংগ্রহ করলে হয়ত দেখা যাবে পশ্চিমবঙ্গের অন্যত্রও চিত্রটা অনুরূপ! 

অর্থাৎ বেহাল, চিকিৎসকহীন, পরিকাঠামোহীন স্বাস্থ্যব্যবস্থায় maximum losers ও হচ্ছে মুসলমানরাই। তাহলে সাধারণ মুসলমানদের জন্য সত্যিই কি ভালো কাজ করছে এই সরকার? ইমাম, মোয়াজ্জিনের ভাতা সাধারণ মুসলমানের কোনো কাজে লাগে না।

বরং যদি সত্যিই কাজ করতে চান, তাহলে দয়া করে প্রতিটি গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসাব্যবস্থার আধুনিকীকরণ করুন, ম্যাডাম! কেবল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাড়ি রং করার কথা বলছি না, বলছি সামগ্রিক চিকিৎসাব্যবস্থার কথা। যেমন জেলাগুলির প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, ব্লক ও গ্রামীন হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসকের সংকট যেন মেটে, ডাক্তারবাবুরা যেন গ্রামের ডিউটিতে, সরকারি চাকরিতে জয়েন করতে বিমুখ না হন সেইটি সুনিশ্চিত করা আপনার কর্তব্য হয়। নানা জেলার ব্লক ও গ্রামীন হাসপাতালগুলিতে জেনারেল ডিউটি মেডিকেল অফিসারের বেশিরভাগ পদই শূন্য, গ্রামে গ্রামে চিকিৎসকই নেই। দয়া করে নজর দিন। দেখবেন প্রতি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মিনি ও টি  ও লেবার রুম অ্যারেঞ্জমেন্ট যেন থাকে, সাধারণ X-ray, ECG র ব্যবস্থা যেন থাকে, mobile van diagnostic laboratory র নিয়মিত টহল যেন থাকে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। সেগুলো অন্ততঃ সুনিশ্চিত করা দরকার। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, জাপানী এনকেফালাইটিস ইত্যাদি মশাবাহিত রোগবালাই যেমনভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে একসাথে বেশ কিছু মানুষকে যাতে স্যালাইন দেওয়া যায়, সেই বন্দোবস্ত রিজার্ভ থাকুক যাতে ডেঙ্গু সিজনে সেগুলো প্রয়োজনে কাজে আসে। 

ডাক্তারবাবুরা, নার্সরা, ফার্মাসিস্ট, প্যারামেডিক স্টাফেরা যাতে গ্রামে ডিউটি করতে গিয়ে ভদ্রস্থ ভাবে থাকতে পারেন, তার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র লাগোয়া অঞ্চলে তাঁদের বসবাসের সুবন্দোবস্ত করুন। অর্থাৎ fully serviced quarters রাখুন। সেখানকার service caretaker হিসেবেও গ্রামেরই কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের বন্দোবস্ত করুন। অর্থাৎ স্বাস্থ্যকেন্দ্র যেন শুধু নামে স্বাস্থ্যকেন্দ্র হয়ে না থাকে। সেখানে যেন গ্রামের অসুস্থ মানুষ প্রকৃত চিকিৎসা পায়। 

সরকারি কর্মীদের তাঁদের প্রাপ্য মাইনে ঠিকমত দিন যাতে তাঁরা কাজ করার উৎসাহ পান। পশ্চিমবঙ্গবিরোধী IAS অফিসারদের চিনবার চেষ্টা করুন। এই IAS রা মুখে মিষ্টি কথা বলে আসলে রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও পরিকাঠামো ভেঙ্গে তছনছ করে দিতে চাইছেন। তাঁদেরই একজন হলেন অনিল বর্মা। এঁরা ভুল পরামর্শ দিচ্ছেন না তো আপনাকে? সতর্ক হোন।

Comments

Popular posts from this blog

রথযাত্রা: কুমুদরঞ্জন মল্লিক

নব্য কথামালা: শেয়াল ও সারসের গল্প

Karnataka Election Result 2023: Observations

এত প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে শিল্প-খরা: কেন?