'শিশুধর্ষকের মৃত্যদণ্ড' আইনের বিরোধিতা আসিফা-দরদী বামপন্থীদের: কাদের রক্ষা করতে?
আসিফার নৃশংস মৃত্যুর ন্যায়বিচার চেয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলনে মুখর হয়ে উঠেছিল মিডিয়া, বাম, কংগ্রেস, ও আরও বহু মানুষ। ফুলের মত একটা মেয়ে শেষ হয়ে গেল। নরকের পিশাচের লালাসিক্ত নখদন্ত মৃত, রক্তাক্ত করল তাকে। সন্তানবিয়োগ ঘটল আমাদের সকলের। সেকুলার-কংগ্রেস-বাম-মিডিয়ার সম্মিলিত প্রতিবাদকে ধন্যবাদ জানাই। ওঁরা আসিফার মৃত্যুর জন্য যতটা প্রতিবাদ করেছেন, তার চেয়ে ঢের বেশি প্রতিবাদ করেছেন তার ধর্ষণের। এবং তা সম্যক উচিত কার্যও বটে। হত্যার চেয়ে অনেক বেশি ঘৃণ্য ও শয়তানি অপরাধ হল ধর্ষণ। কারণ হত্যার দ্বারা কেবল মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, আর ধর্ষণের দ্বারা কেড়ে নিতে চাওয়া হয় মেয়েটির সুস্থভাবে, সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার অধিকার।
তবে প্রতিবাদীরা প্রতিবাদের স্বর উঁচুতে তুললেও একটা কড়া ধর্ষণবিরোধী আইনের দাবী একবারও তোলেন নি। এই মর্মে আমি বহু টুইট করেছি যে শুধু মোমবাতি মিছিল করলে আসিফার আত্মা শান্তি পাবে না। আসিফার আসল খুনীরা চিহ্নিত হোক্, তাদের অপরাধ নিশ্চিতরূপে প্রমাণিত হোক এবং একটি ভয়ংকর ধর্ষণবিরোধী আইনের খসড়া তৈরি করে বিরোধীরা ভারতসরকারের কাছে জমা দিন এবং অবিলম্বে সেই আইন পাশ করানোর জন্য সরকারকে তাঁরা চাপ দিন। এই দাবী অবশ্য মিডিয়া বা বিরোধীরা, কেউই তোলেন নি। কিন্তু সাধারণ মানুষেরা এই দাবীকে সমর্থন জানিয়েছিলেন।
হয়ত বা তারই ফলস্বরূপ দিন পনেরো পরেই মোদি ক্যাবিনেট অর্ডিন্যান্স জারি করে আইন করছেন শিশুধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের। পসকো আইনকে কড়া করা হয়েছে।
https://www.indiatoday.in/india/story/pm-modi-chairs-cabinet-meeting-to-discuss-death-penalty-for-child-rapists-1216976-2018-04-21
যাই হোক্, আমার মতে অবশ্য মৃত্যুদণ্ড কেবলমাত্র শিশুধর্ষকদের নয়, বরং ধর্ষক মাত্রেরই অবশ্যপ্রাপ্য ন্যূনতম শাস্তি। ধর্ষণের প্রকৃত শাস্তি কি হওয়া উচিত, তা নিয়ে আমার বিস্তারিত চিন্তাভাবনা আছে, যা পরে কখনও লেখার ইচ্ছা রইল।
এই ব্লগটিতে আমি লিখতে চাই অন্য একটি বিষয়ে। যে বামপন্থীরা আসিফার জন্য প্রতিবাদের ঝড় তুললেন, ভারতসরকার শিশুধর্ষকদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের আইন আনবার পর তাঁরাই আবার ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করছেন। এ বিষয়ে তাঁদের বক্তব্যও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন শ্রীমতি বৃন্দা কারাত। তাঁরা কারুরই মৃত্যুদণ্ড চান না, বরং তাঁরা শাস্তি চান ধর্ষকদের যাঁরা রক্ষা করেন, তাঁদের। অর্থাৎ তাঁরা 'রেপিস্টস্ রক্ষক' দের শাস্তি চান। এই বিষয়ে কোনো এক বামপন্থীর একটি বিস্তারিত লেখা আমি পেয়েছি এবং বুঝতে পেরেছি যে এ বিষয়ে তাঁদের মোদ্দা বক্তব্যটি ঠিক কি। আমি সেই লেখাটি প্রথমে হুবহু এখানে তুলে দেব এবং পাঠককে অনুরোধ করব যে আগে সেই লেখাটি পড়ুন এবং তারপর, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমার পর্যবেক্ষণ ও প্রতিপ্রশ্নগুলি পড়ুন ও বিবেচনা করুন। সম্পূর্ণ ব্লগ পড়া হলে আপনিও দয়া করে ভাববেন, ধর্ষকের সাজা ঠিক কি বা কেমন হওয়া উচিত এবং আরও ভাববেন, কোন্ ভাবধারা ও পর্যবেক্ষণ আপনার কাছে অধিকতর গ্রহনযোগ্য। পড়ুন।
"কাঠুয়া, উন্নাও এবং দেশের বিভিন্ন কোনায় ধর্ষণের ঘটনায় মুখ পোড়বার পর নতুন চমক হিসেব মোদীজি মার্কেটে একটি অর্ডিন্যান্স নামিয়েছেন - ১২ বছরের নিচে কাউকে ধর্ষণ করলে মৃত্যু। যদিও বহুদিন ধরে যারা ধর্ষিত শিশু এবং মহিলাদের নিয়ে গ্রাউন্ডে কাজ করছেন সেইসমস্ত মানুষ বলে থাকেন যে মৃত্যুদন্ড আসলে ধর্ষিতার প্রাণহানির সম্ভাবনাই বাড়িয়ে দেয় (কারন ধর্ষকের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় প্রমাণ ধর্ষিতার বয়ান, আর তা লোপাট করতে খুন করে ফেলা হয়), এবং যারা যৌন অপরাধ নিয়ে কাজ করেন তারা তথ্য দিয়ে দেখিয়েছেন যে মৃত্যুদন্ড আসলে পাব্লিকের ক্রোধ প্রশমিত করা ছাড়া বিশেষ কাজের কাজ কিছু করে না, এবং যদিও আমি মৃত্যদন্ড ব্যাপারটার বিপক্ষে, তাও আমি ঠিক করেছি এই একটা ব্যাপারে আমি মোদীজি কে সমর্থন করবো।
কিন্তু।
কিন্তু।
ধর্ষকরা জানে তারা অপরাধ করছে। তারা বুক বাজিয়ে বলে না 'ধর্ষণ করে বেশ করেছি'। তারা তাই জন্যে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করে। অপরাধ অস্বীকার করে। ইত্যাদি।
ধর্ষকদের থেকেও বড় অপরাধী হচ্ছে তারা যারা ধর্ষণ সংস্কৃতির উদযাপন করে। যারা জনসমক্ষে ধর্ষণ করা নিয়ে উল্লাস করে। ধর্ষণকে মান্যতা দেয়। তাই ধর্ষকদের মৃত্যুদন্ড আমি মেনে নেবো কয়েকটা শর্তে। আমি চাই -
১) ধর্ষকদের সমর্থনে তেরঙ্গা বা অন্য যে কোন ঝান্ডা নিয়ে যারা মিছিল করে তাদের মৃত্যদন্ড হোক।
২) ধর্ষকদের পক্ষে মিটিং মিছিল করা বিধায়ক বা মন্ত্রীদের মৃত্যুদন্ড হোক।
৩) ধর্ষকদের সমর্থনে জয় শ্রী রাম স্লোগান দেওয়া উকিলদের মৃত্যুদন্ড হোক
৪) ধর্ষকদের আড়াল করতে যারা নিরন্তর ফেক নিউজ আর মিথ্যে তথ্য ছড়িয়ে যাচ্ছে তাদের মৃত্যুদন্ড হোক
৫)ধর্ষকদের পক্ষে দাঁড়িয়ে সরাসরি যারা বলছে 'ধর্ষণ করে বেশ করেছে', তাদের মৃত্যুদন্ড হোক।
৬) যারা জনসমক্ষে স্টেজ থেকে বলছে - কবর থেকে মৃতদেহ তুলে এনে ধর্ষণ করো, তাদের মৃত্যুদন্ড হোক।
৭) যারা বলছে - অমুক বা তমুক ধর্মের লোককে ধর্ষণ করা জায়েজ, তাদের মৃত্যুদন্ড হোক।
৬) সবার আগে, যিনি ধর্ষণকে একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করতে বলে নিজের লেখায় বৈধতা দিয়ে গেছেন, সেই সাভারকারের একটি মূর্তিকে লাল কেল্লার সামনে প্রতীকি ফাঁসি দেওয়া হোক।
৭) সাভারকারকে যারা গুরু মানেন, পুজো করেন, তাদের... না থাক, বেশি হয়ে যাবে।
মোদীজি এবং মোদীজির সমর্থকরা কজন আমার এই দাবিসমূহের সাথে একমত?"
এই শেষ হল বামপন্থীদের সওয়াল। ওঁরা বলছেন, কাঠুয়া, উন্নাওয়ে ধর্ষণের ঘটনায় মুখ পুড়বার পর মোদিজী পকসো আইনকে কঠোর করতে অর্ডিন্যান্স এনেছেন। প্রশ্ন হল, কাঠুয়া, উন্নাওয়ের ঘটনায় একা মোদিজী'র মুখ পুড়ল কোন্ যুক্তিতে? মুখ কি সমস্ত দেশবাসীর পোড়ে নি? যৌথ পরিবারের দুটি মেয়ের সম্মান ও প্রাণহানি হলে মুখ কি গোটা পরিবারেরই পোড়ে না? আসিফার মৃত্যুতে মুখ কি দেশের বামপন্থীদেরও পোড়ে নি? নাকি তাঁরা যৌথ পরিবারের সেই ধরনের সদস্য যাঁরা যৌথ পরিবারে বাস করে যৌথ পরিবারের সুবিধা ভোগ করেন কিন্তু তলে তলে পরিবারের শত্রুদের সাথে ষড়যন্ত্র করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিতে থাকেন পরিবারের যৌথ ও সামগ্রিক স্বার্থকে ব্যাহত করে? যে ফুলের মত আসিফার মৃত্যু নিয়ে বামপন্থীরা এত কিছু করলেন, সেই নিষ্পাপ শিশুর নরকযন্ত্রণার কথা মনে করলে বামপন্থীদেরও বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে না কি? আমাদের তো তেমন হয়! আসিফার পোস্টারের দিকে তাকালে সেই সব প্রতিবাদী বামপন্থীদের মনের আয়নায় নিজের মেয়ের মুখ ভেসে ওঠে নি কি? মুখ পোড়ে নি সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন, সচেতন, সংবেদনশীল দেশবাসীর? মোদিজীকে ধন্যবাদ, তাঁদের সবার প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে তাঁদের সবার হয়ে দেশের ধর্ষণ আইনকে কঠোর করার চেষ্টা অন্ততঃ তিনি করেছেন।
আর আইন প্রণয়ন করা 'চমক' হতে যাবে কেন? ভারতবর্ষের সংসদীয় গণতন্ত্রে জনপ্রতিনিধি বা legislature এর মূল কাজটিই তো আইন প্রণয়ন। মোদি ক্যাবিনেট তাঁদের সেই দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র। তাঁর সেই দায়িত্ব পালনকে 'চমক দেওয়া' আখ্যা দিয়ে বামপন্থীরা কি প্রমাণ করলেন? নিজেদের অজ্ঞতা নাকি দেশের বেশির ভাগ মানুষকে অজ্ঞ ধরে নিয়ে তাঁদের সেই অজ্ঞতাকে নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধালাভের হাতিয়ার করতে চাইলেন? যে কারণেই করে থাকুন, এর দ্বারা বামপন্থীরা ছোটো করেছেন নিজেদেরই।
অবশ্য বামপন্থীদের কথা আলাদা। তাঁদের ভাবধারা আলাদা। যে পোশাক পরিহিত অবস্থায় আসিফার মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে, সেই একই পোশাকে আসিফার ঝকঝকে হাসি মুখের ছবি। কি করে সম্ভব হল বলুন তো? তবে কি আসিফা যখন জ্বলজ্যান্ত, ঝলমলে একটি শিশু, এবং পিশাচ যখন তাকে লক্ষ্য বানিয়ে ঘুঁটি সাজাচ্ছে তখনই কেউ তার ছবি তুলে রেখেছিল পরে পোস্টার বানাতে কাজে দেবে ভেবে? এবং ছবি তুলে রাখার পর সেই ফুলের মত মেয়ে চলে যায় পিশাচদের কবলে? আর তারপরেই আসিফার রক্ত উৎসর্গ করে শুরু হয় কোনো জঘন্য দেশদ্রোহের ব্ল্যাক ম্যাজিক? কি করে, কোন্ প্রাণে পারলেন ওঁরা এই এত সব ঝকঝকে পোস্টার বানাতে? বিশাল মিছিল, প্রত্যেকের হাতে হাতে পোস্টারে আসিফার মুখ? এত প্রস্তুতি? এত খরচ? যেন চলল আসিফার মৃত্যু-উৎসব! যেন আসিফার নিষ্পাপ প্রাণ অন্য কারুর জীবনে আনল নতুন উৎসাহের জোয়ার। সেই পাপশক্তিতে ভরপুর ব্যক্তিবৃন্দ প্রতিবাদমুখরতার ছলে আসিফার মৃত্যু-উৎসব-উদযাপনে মাতলেন।
এ রাজ্যে পুরসভার সাফাই কর্মী বিনোদ দাসের মেয়ে এখনও নিখোঁজ। তার হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে কলকাতার কুখ্যাত মেটেবুরুজ এলাকার নাম। তার তল্লাশির দাবীতে শহরে আন্দোলন হচ্ছে, দেশেও উঠেছে আওয়াজ। সে মেয়ে এখনও 'মৃত' বলে ঘোষিত নয়। কই, তা সত্ত্বেও তো তার ছবি দিয়ে হাই রেজোলিউশন পোস্টার বানানো হয় নি? মেয়ের যন্ত্রণা পোস্টারে বিধৃত থাকে না। পোস্টার তৈরি হয় সে যন্ত্রণার পণ্যায়নের জন্য।
মৃত্যুদণ্ড ন্যূনতম শাস্তি। ধর্ষণের শাস্তি হওয়া উচিত অন্য কিছু। পাশবিক, জঘন্য, ভয়াল শাস্তি চাই আমরা ধর্ষকদের জন্য। প্রতিটি ধর্ষিতার শান্তির জন্য প্রতিটি ধর্ষকের প্রাপ্য অন্য কোনো ভয়াবহতর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। কিন্তু বামপন্থীরা এই ন্যূনতম শাস্তিরও বিরোধিতা করছেন। ওঁরা বলছেন মৃত্যুদণ্ড নাকি ধর্ষণের পর খুনকে নিশ্চিত করবে। ধর্ষক নাকি মৃত্যুদণ্ড avoid করার জন্য ধর্ষণের পর ধর্ষণের প্রমাণ লোপাট করার জন্য ধর্ষিতাকে নিশ্চিতভাবে খুন করবেই। প্রতিপ্রশ্নটি হল, মৃত্যুদণ্ড না থাকলেই যে ধর্ষক ধর্ষণের পর খুন করবে না এই গ্যারান্টি কে দেবেন? বামপন্থীরা? কি ভাবে দেবেন সেই গ্যারান্টি? তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল, ধর্ষকদের মনস্তত্ত্ব বামপন্থীরা এত সবিস্তারে জানলেন কেমন করে? শিশুধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে ওঁরাই কি হচ্ছেন না ধর্ষকদের রক্ষক? তবে কি ওঁরা নিজেদেরও শাস্তি চাইছেন? একবার যে ব্যক্তি কোনো শিশুকে ধর্ষণ করেছে, তাকে বাঁচিয়ে রাখলে সে যে আবারও কোনো শিশুকে ধর্ষণ করবে না তার গ্যারান্টিই বা কে দেবে? মানবাধিকারের প্রশ্নে, ধর্ষকের মত একজন জঘন্য অপরাধীর জীবনের মূল্য কি একাধিক শিশুর জীবনের সম্ভাব্য মূল্যের চেয়েও বেশি?
না বেশি নয়। তাই শিশুধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করা আসলে বামপন্থীদের চিরাচরিত সুবিধাবাদী মনোবৃত্তির প্রকাশ। যে সুবিধাবাদী মনোবৃত্তি নিয়ে রাজনীতি ক্ষেত্রে ওঁরা নিত্য চলেন, এই বিরোধিতার মাধ্যমেও সেই মনোবৃত্তিই পুনঃপ্রকাশিত হচ্ছে মাত্র। বড় লজ্জার এই ভাবধারা।
ওঁরা কয়েকটি দাবী তুলেছেন। সেই প্রতিটি দাবীর প্রেক্ষিতে আমার বক্তব্য রাখবো।
বামপন্থী দাবী ১) ধর্ষকদের সমর্থনে তেরঙ্গা বা অন্য যে কোন ঝান্ডা নিয়ে যারা মিছিল করে তাদের মৃত্যদন্ড হোক।
-- যদি প্রমাণিত হয় যে তারা মিছিল করেছে ধর্ষণের সমর্থনে, এবং যে বা যারা প্রমাণিতভাবে এবং নিশ্চিতভাবেই ধর্ষক তাদের সমর্থনে, তবে অবশ্যই তাদের মৃত্যদন্ড হোক।
-- মৃত্যুদণ্ড হোক তাদেরও যারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রমাণিত হওয়ার আগেই কাউকে ধর্ষক বলে দাগিয়ে দেয়।
বামপন্থী দাবী ২) ধর্ষকদের পক্ষে মিটিং মিছিল করা বিধায়ক বা মন্ত্রীদের মৃত্যুদন্ড হোক।
-- যদি প্রমাণিত হয় যে সেই বিধায়ক বা মন্ত্রীরা মিটিং মিছিল করেছে ধর্ষণের সমর্থনে এবং যে বা যারা প্রমাণিতভাবে এবং নিশ্চিতভাবেই ধর্ষক তাদের সমর্থনে, তবে অবশ্যই সেই বিধায়ক বা মন্ত্রীদের মৃত্যদন্ড হোক।
বামপন্থী দাবী ৩) ধর্ষকদের সমর্থনে "জয় শ্রী রাম" স্লোগান দেওয়া উকিলদের মৃত্যুদন্ড হোক
-- যদি প্রমাণিত হয় যে সেই উকিলেরা "জয় শ্রী রাম" স্লোগান দিয়েছেন ধর্ষণের সমর্থনে এবং যে বা যারা প্রমাণিতভাবে এবং নিশ্চিতভাবেই ধর্ষক তাদের সমর্থনে, তবে অবশ্যই সেই উকিলদের মৃত্যদন্ড হোক।
বামপন্থী দাবী ৪) ধর্ষকদের আড়াল করতে যারা নিরন্তর ফেক নিউজ আর মিথ্যে তথ্য ছড়িয়ে যাচ্ছে তাদের মৃত্যুদন্ড হোক
-- যারা অন্য কোন গূঢ় উদ্দেশ্যকে আড়াল করতে ধর্ষণ তত্ত্ব খাড়া করে, MSM এর একটা বড় অংশকে হাত করে দেশের বহির্শত্রুদের হাত শক্ত করছে বলে সন্দেহ হচ্ছে, সেই সন্দেহের সত্যতা প্রমাণে সেই সব দেশদ্রোহীদের, শুধু সাধারণ মৃত্যুদণ্ড নয়, কুকুর দিয়ে খাওয়ানো হোক্।
এই কুকুর দিয়ে খাওয়ানোর দাবীটির নিন্দা করতে বামপন্থীরা পারবেন কি? বর্তমান বামপন্থীদের হৃদয়সম্রাট উত্তর কোরিয়ার কিম্-জং-উন্ এর প্রিয় শাস্তি-পদ্ধতি এটি। কিম্ দেশের প্রধানমন্ত্রী ও নিজের পিসেমশায়কে কুকুর দিয়ে খাইয়ে হত্যা করেছেন কারণ তিনি কিম্ কে সমর্থন করছিলেন না।
বামপন্থী দাবী ৫)ধর্ষকদের পক্ষে দাঁড়িয়ে সরাসরি যারা বলছে 'ধর্ষণ করে বেশ করেছে', তাদের মৃত্যুদন্ড হোক।
-- যদি প্রমাণিত হয় যে বা যারা প্রমাণিতভাবে এবং নিশ্চিতভাবেই ধর্ষক, কেউ তাদের সেই প্রমাণিত ধর্ষণকে জোর গলায় সমর্থন জানিয়েছে, তবে অবশ্যই তাদের মৃত্যদন্ড হোক।
বামপন্থী দাবী ৬) যারা জনসমক্ষে স্টেজ থেকে বলছে - কবর থেকে মৃতদেহ তুলে এনে ধর্ষণ করো, তাদের মৃত্যুদন্ড হোক।
-- কবর থেকে তুলে আনা মৃতদেহের ধর্ষণ বাস্তবপক্ষে অসম্ভব। এই ধরনের বক্তব্য থেকেই বোঝা যায় যে এই কথা সুস্থ মস্তিষ্কে বলা কথা নয়। জীবিত মানুষকে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য, পাশবিক আচরণের প্রতিক্রিয়ায় যখন কোনো মানুষ ক্ষোভে, দুঃখে, রাগে, প্রতিহিংসায় প্রায় অন্ধ হয়ে গিয়ে তাঁর মস্তিষ্কের সুস্থতাও পর্যন্ত সাময়িকভাবে হারিয়ে ফেলেন, তখনই তাঁর পক্ষে এমন কথা বলা সম্ভব। যদিও প্রতিহিংসা যে কোনো পরিস্থিতিতেই নিন্দনীয়, তবু এক্ষেত্রে বুঝতে হবে সেই কথার স্পিরিটটুকুকে, যা কিনা বাস্তবে ধর্ষণের সপক্ষে নয়, বরং অন্ধভাবে ধর্ষণের বিপক্ষে। তাই সেই অন্ধত্বকে ও প্রতিহিংসাপরায়ণতাকে নিন্দা করা গেলেও বক্তব্যের স্পিরিট বুঝে বক্তার মানসিক অবস্থা অনুমান করে নেওয়া যায় এবং তাই করা উচিত। এক্ষেত্রে বক্তার শাস্তি চাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি জরুরী হল, কি পরিস্থিতিতে এই বক্তব্য রাখা হয়েছে তা বুঝে সেই পরিস্থিতিই যাতে আর না ঘটে, সে ব্যাপারে যত্নবান হওয়া।
বামপন্থী দাবী ৭) যারা বলছে - অমুক বা তমুক ধর্মের লোককে ধর্ষণ করা জায়েজ, তাদের মৃত্যুদন্ড হোক।
-- হ্যাঁ হোক্, ভারতবর্ষের জনসংখ্যা তাতে বহু কমবে। তবে তাদের সঙ্গে যেন সেই সব মানুষদের গুলিয়ে ফেলা না হয়, যাঁরা বলেন যে "ধর্ষক ও ধর্ষিতার ধর্মপরিচয় যেন অপরাধের গুরুত্ব বিচারে বা তার প্রতিবাদের ক্ষেত্রে বিচার্য হয়ে না ওঠে। সব ধর্ষণের প্রতিবাদেই যেন সমানভাবে গর্জে ওঠা হয়।" উদাহরণ, আমি।
বামপন্থী দাবী ৮) সবার আগে, যিনি ধর্ষণকে একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে বলে নিজের লেখায় বৈধতা দিয়ে গেছেন, সেই সাভারকারের একটি মূর্তিকে লাল কেল্লার সামনে প্রতীকি ফাঁসি দেওয়া হোক।
-- এ কথার জবাব দেওয়ার আগে দুটি কথা আছে। বীর সাভারকর সম্বন্ধে এমন নিরলস অপপ্রচারের উৎসাহ ও ডেসপারেশন কেন দেখান বামপন্থীরা তা জানার কৌতূহল আমার আছে। সাভারকর যদি ভীরু, কাপুরুষই হবেন, তবে তো মৃত্যুর এত বছর পর তাঁর oblivion এ হারিয়ে যাওয়ারই কথা ছিল। কিন্তু এমনকি বামপন্থীরাও সাভারকরকে ভুলতে পারছেন না, ক্রমাগত তাঁকে 'শত্রুরূপে ভজনা' এবং তাঁর নিরলস নিন্দা করে চলেছেন। কেন? জানতে ইচ্ছে করে! বীর সাভারকর কি এমন করেছিলেন যে বামপন্থীদের এত গাত্রদাহ? কেন তাঁরা তাঁকে উপেক্ষা করতে পারেন না?
--এবার বলি, এটি একটি সর্বৈব mis-propaganda, যার কোনো প্রামাণ্য তথ্য আমার কাছে নেই। বহু বছর আগে মৃত একজন ব্যক্তির মুখে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিজেদের পছন্দমত কথা বসিয়ে দিয়ে তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করার কাপুরুষোচিত, হীন মনোবৃত্তির বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানাই।
তবে এই ধরণের কাপুরুষোচিত হীন মনোবৃত্তি যাঁরা রাখেন, তাদের... না থাক, বেশি হয়ে যাবে।
অর্থাৎ আমার বক্তব্যও এখানে শেষ হল। পাঠককে একান্ত জিজ্ঞাস্য, যৌক্তিকতা ও মানবিকতার নিরিখে আপনি কি বামপন্থীদের মত ধর্ষণবিরোধী-প্রতিবাদ-উৎসব পালন করার পরে ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড না দেওয়ার পক্ষে, নাকি ন্যূনতম শাস্তি হিসেবেই শিশুধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পক্ষে?
তবে প্রতিবাদীরা প্রতিবাদের স্বর উঁচুতে তুললেও একটা কড়া ধর্ষণবিরোধী আইনের দাবী একবারও তোলেন নি। এই মর্মে আমি বহু টুইট করেছি যে শুধু মোমবাতি মিছিল করলে আসিফার আত্মা শান্তি পাবে না। আসিফার আসল খুনীরা চিহ্নিত হোক্, তাদের অপরাধ নিশ্চিতরূপে প্রমাণিত হোক এবং একটি ভয়ংকর ধর্ষণবিরোধী আইনের খসড়া তৈরি করে বিরোধীরা ভারতসরকারের কাছে জমা দিন এবং অবিলম্বে সেই আইন পাশ করানোর জন্য সরকারকে তাঁরা চাপ দিন। এই দাবী অবশ্য মিডিয়া বা বিরোধীরা, কেউই তোলেন নি। কিন্তু সাধারণ মানুষেরা এই দাবীকে সমর্থন জানিয়েছিলেন।
হয়ত বা তারই ফলস্বরূপ দিন পনেরো পরেই মোদি ক্যাবিনেট অর্ডিন্যান্স জারি করে আইন করছেন শিশুধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের। পসকো আইনকে কড়া করা হয়েছে।
https://www.indiatoday.in/india/story/pm-modi-chairs-cabinet-meeting-to-discuss-death-penalty-for-child-rapists-1216976-2018-04-21
যাই হোক্, আমার মতে অবশ্য মৃত্যুদণ্ড কেবলমাত্র শিশুধর্ষকদের নয়, বরং ধর্ষক মাত্রেরই অবশ্যপ্রাপ্য ন্যূনতম শাস্তি। ধর্ষণের প্রকৃত শাস্তি কি হওয়া উচিত, তা নিয়ে আমার বিস্তারিত চিন্তাভাবনা আছে, যা পরে কখনও লেখার ইচ্ছা রইল।
এই ব্লগটিতে আমি লিখতে চাই অন্য একটি বিষয়ে। যে বামপন্থীরা আসিফার জন্য প্রতিবাদের ঝড় তুললেন, ভারতসরকার শিশুধর্ষকদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের আইন আনবার পর তাঁরাই আবার ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করছেন। এ বিষয়ে তাঁদের বক্তব্যও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন শ্রীমতি বৃন্দা কারাত। তাঁরা কারুরই মৃত্যুদণ্ড চান না, বরং তাঁরা শাস্তি চান ধর্ষকদের যাঁরা রক্ষা করেন, তাঁদের। অর্থাৎ তাঁরা 'রেপিস্টস্ রক্ষক' দের শাস্তি চান। এই বিষয়ে কোনো এক বামপন্থীর একটি বিস্তারিত লেখা আমি পেয়েছি এবং বুঝতে পেরেছি যে এ বিষয়ে তাঁদের মোদ্দা বক্তব্যটি ঠিক কি। আমি সেই লেখাটি প্রথমে হুবহু এখানে তুলে দেব এবং পাঠককে অনুরোধ করব যে আগে সেই লেখাটি পড়ুন এবং তারপর, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমার পর্যবেক্ষণ ও প্রতিপ্রশ্নগুলি পড়ুন ও বিবেচনা করুন। সম্পূর্ণ ব্লগ পড়া হলে আপনিও দয়া করে ভাববেন, ধর্ষকের সাজা ঠিক কি বা কেমন হওয়া উচিত এবং আরও ভাববেন, কোন্ ভাবধারা ও পর্যবেক্ষণ আপনার কাছে অধিকতর গ্রহনযোগ্য। পড়ুন।
"কাঠুয়া, উন্নাও এবং দেশের বিভিন্ন কোনায় ধর্ষণের ঘটনায় মুখ পোড়বার পর নতুন চমক হিসেব মোদীজি মার্কেটে একটি অর্ডিন্যান্স নামিয়েছেন - ১২ বছরের নিচে কাউকে ধর্ষণ করলে মৃত্যু। যদিও বহুদিন ধরে যারা ধর্ষিত শিশু এবং মহিলাদের নিয়ে গ্রাউন্ডে কাজ করছেন সেইসমস্ত মানুষ বলে থাকেন যে মৃত্যুদন্ড আসলে ধর্ষিতার প্রাণহানির সম্ভাবনাই বাড়িয়ে দেয় (কারন ধর্ষকের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় প্রমাণ ধর্ষিতার বয়ান, আর তা লোপাট করতে খুন করে ফেলা হয়), এবং যারা যৌন অপরাধ নিয়ে কাজ করেন তারা তথ্য দিয়ে দেখিয়েছেন যে মৃত্যুদন্ড আসলে পাব্লিকের ক্রোধ প্রশমিত করা ছাড়া বিশেষ কাজের কাজ কিছু করে না, এবং যদিও আমি মৃত্যদন্ড ব্যাপারটার বিপক্ষে, তাও আমি ঠিক করেছি এই একটা ব্যাপারে আমি মোদীজি কে সমর্থন করবো।
কিন্তু।
কিন্তু।
ধর্ষকরা জানে তারা অপরাধ করছে। তারা বুক বাজিয়ে বলে না 'ধর্ষণ করে বেশ করেছি'। তারা তাই জন্যে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করে। অপরাধ অস্বীকার করে। ইত্যাদি।
ধর্ষকদের থেকেও বড় অপরাধী হচ্ছে তারা যারা ধর্ষণ সংস্কৃতির উদযাপন করে। যারা জনসমক্ষে ধর্ষণ করা নিয়ে উল্লাস করে। ধর্ষণকে মান্যতা দেয়। তাই ধর্ষকদের মৃত্যুদন্ড আমি মেনে নেবো কয়েকটা শর্তে। আমি চাই -
১) ধর্ষকদের সমর্থনে তেরঙ্গা বা অন্য যে কোন ঝান্ডা নিয়ে যারা মিছিল করে তাদের মৃত্যদন্ড হোক।
২) ধর্ষকদের পক্ষে মিটিং মিছিল করা বিধায়ক বা মন্ত্রীদের মৃত্যুদন্ড হোক।
৩) ধর্ষকদের সমর্থনে জয় শ্রী রাম স্লোগান দেওয়া উকিলদের মৃত্যুদন্ড হোক
৪) ধর্ষকদের আড়াল করতে যারা নিরন্তর ফেক নিউজ আর মিথ্যে তথ্য ছড়িয়ে যাচ্ছে তাদের মৃত্যুদন্ড হোক
৫)ধর্ষকদের পক্ষে দাঁড়িয়ে সরাসরি যারা বলছে 'ধর্ষণ করে বেশ করেছে', তাদের মৃত্যুদন্ড হোক।
৬) যারা জনসমক্ষে স্টেজ থেকে বলছে - কবর থেকে মৃতদেহ তুলে এনে ধর্ষণ করো, তাদের মৃত্যুদন্ড হোক।
৭) যারা বলছে - অমুক বা তমুক ধর্মের লোককে ধর্ষণ করা জায়েজ, তাদের মৃত্যুদন্ড হোক।
৬) সবার আগে, যিনি ধর্ষণকে একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করতে বলে নিজের লেখায় বৈধতা দিয়ে গেছেন, সেই সাভারকারের একটি মূর্তিকে লাল কেল্লার সামনে প্রতীকি ফাঁসি দেওয়া হোক।
৭) সাভারকারকে যারা গুরু মানেন, পুজো করেন, তাদের... না থাক, বেশি হয়ে যাবে।
মোদীজি এবং মোদীজির সমর্থকরা কজন আমার এই দাবিসমূহের সাথে একমত?"
এই শেষ হল বামপন্থীদের সওয়াল। ওঁরা বলছেন, কাঠুয়া, উন্নাওয়ে ধর্ষণের ঘটনায় মুখ পুড়বার পর মোদিজী পকসো আইনকে কঠোর করতে অর্ডিন্যান্স এনেছেন। প্রশ্ন হল, কাঠুয়া, উন্নাওয়ের ঘটনায় একা মোদিজী'র মুখ পুড়ল কোন্ যুক্তিতে? মুখ কি সমস্ত দেশবাসীর পোড়ে নি? যৌথ পরিবারের দুটি মেয়ের সম্মান ও প্রাণহানি হলে মুখ কি গোটা পরিবারেরই পোড়ে না? আসিফার মৃত্যুতে মুখ কি দেশের বামপন্থীদেরও পোড়ে নি? নাকি তাঁরা যৌথ পরিবারের সেই ধরনের সদস্য যাঁরা যৌথ পরিবারে বাস করে যৌথ পরিবারের সুবিধা ভোগ করেন কিন্তু তলে তলে পরিবারের শত্রুদের সাথে ষড়যন্ত্র করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিতে থাকেন পরিবারের যৌথ ও সামগ্রিক স্বার্থকে ব্যাহত করে? যে ফুলের মত আসিফার মৃত্যু নিয়ে বামপন্থীরা এত কিছু করলেন, সেই নিষ্পাপ শিশুর নরকযন্ত্রণার কথা মনে করলে বামপন্থীদেরও বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে না কি? আমাদের তো তেমন হয়! আসিফার পোস্টারের দিকে তাকালে সেই সব প্রতিবাদী বামপন্থীদের মনের আয়নায় নিজের মেয়ের মুখ ভেসে ওঠে নি কি? মুখ পোড়ে নি সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন, সচেতন, সংবেদনশীল দেশবাসীর? মোদিজীকে ধন্যবাদ, তাঁদের সবার প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে তাঁদের সবার হয়ে দেশের ধর্ষণ আইনকে কঠোর করার চেষ্টা অন্ততঃ তিনি করেছেন।
আর আইন প্রণয়ন করা 'চমক' হতে যাবে কেন? ভারতবর্ষের সংসদীয় গণতন্ত্রে জনপ্রতিনিধি বা legislature এর মূল কাজটিই তো আইন প্রণয়ন। মোদি ক্যাবিনেট তাঁদের সেই দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র। তাঁর সেই দায়িত্ব পালনকে 'চমক দেওয়া' আখ্যা দিয়ে বামপন্থীরা কি প্রমাণ করলেন? নিজেদের অজ্ঞতা নাকি দেশের বেশির ভাগ মানুষকে অজ্ঞ ধরে নিয়ে তাঁদের সেই অজ্ঞতাকে নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধালাভের হাতিয়ার করতে চাইলেন? যে কারণেই করে থাকুন, এর দ্বারা বামপন্থীরা ছোটো করেছেন নিজেদেরই।
অবশ্য বামপন্থীদের কথা আলাদা। তাঁদের ভাবধারা আলাদা। যে পোশাক পরিহিত অবস্থায় আসিফার মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে, সেই একই পোশাকে আসিফার ঝকঝকে হাসি মুখের ছবি। কি করে সম্ভব হল বলুন তো? তবে কি আসিফা যখন জ্বলজ্যান্ত, ঝলমলে একটি শিশু, এবং পিশাচ যখন তাকে লক্ষ্য বানিয়ে ঘুঁটি সাজাচ্ছে তখনই কেউ তার ছবি তুলে রেখেছিল পরে পোস্টার বানাতে কাজে দেবে ভেবে? এবং ছবি তুলে রাখার পর সেই ফুলের মত মেয়ে চলে যায় পিশাচদের কবলে? আর তারপরেই আসিফার রক্ত উৎসর্গ করে শুরু হয় কোনো জঘন্য দেশদ্রোহের ব্ল্যাক ম্যাজিক? কি করে, কোন্ প্রাণে পারলেন ওঁরা এই এত সব ঝকঝকে পোস্টার বানাতে? বিশাল মিছিল, প্রত্যেকের হাতে হাতে পোস্টারে আসিফার মুখ? এত প্রস্তুতি? এত খরচ? যেন চলল আসিফার মৃত্যু-উৎসব! যেন আসিফার নিষ্পাপ প্রাণ অন্য কারুর জীবনে আনল নতুন উৎসাহের জোয়ার। সেই পাপশক্তিতে ভরপুর ব্যক্তিবৃন্দ প্রতিবাদমুখরতার ছলে আসিফার মৃত্যু-উৎসব-উদযাপনে মাতলেন।
এ রাজ্যে পুরসভার সাফাই কর্মী বিনোদ দাসের মেয়ে এখনও নিখোঁজ। তার হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে কলকাতার কুখ্যাত মেটেবুরুজ এলাকার নাম। তার তল্লাশির দাবীতে শহরে আন্দোলন হচ্ছে, দেশেও উঠেছে আওয়াজ। সে মেয়ে এখনও 'মৃত' বলে ঘোষিত নয়। কই, তা সত্ত্বেও তো তার ছবি দিয়ে হাই রেজোলিউশন পোস্টার বানানো হয় নি? মেয়ের যন্ত্রণা পোস্টারে বিধৃত থাকে না। পোস্টার তৈরি হয় সে যন্ত্রণার পণ্যায়নের জন্য।
মৃত্যুদণ্ড ন্যূনতম শাস্তি। ধর্ষণের শাস্তি হওয়া উচিত অন্য কিছু। পাশবিক, জঘন্য, ভয়াল শাস্তি চাই আমরা ধর্ষকদের জন্য। প্রতিটি ধর্ষিতার শান্তির জন্য প্রতিটি ধর্ষকের প্রাপ্য অন্য কোনো ভয়াবহতর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। কিন্তু বামপন্থীরা এই ন্যূনতম শাস্তিরও বিরোধিতা করছেন। ওঁরা বলছেন মৃত্যুদণ্ড নাকি ধর্ষণের পর খুনকে নিশ্চিত করবে। ধর্ষক নাকি মৃত্যুদণ্ড avoid করার জন্য ধর্ষণের পর ধর্ষণের প্রমাণ লোপাট করার জন্য ধর্ষিতাকে নিশ্চিতভাবে খুন করবেই। প্রতিপ্রশ্নটি হল, মৃত্যুদণ্ড না থাকলেই যে ধর্ষক ধর্ষণের পর খুন করবে না এই গ্যারান্টি কে দেবেন? বামপন্থীরা? কি ভাবে দেবেন সেই গ্যারান্টি? তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল, ধর্ষকদের মনস্তত্ত্ব বামপন্থীরা এত সবিস্তারে জানলেন কেমন করে? শিশুধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে ওঁরাই কি হচ্ছেন না ধর্ষকদের রক্ষক? তবে কি ওঁরা নিজেদেরও শাস্তি চাইছেন? একবার যে ব্যক্তি কোনো শিশুকে ধর্ষণ করেছে, তাকে বাঁচিয়ে রাখলে সে যে আবারও কোনো শিশুকে ধর্ষণ করবে না তার গ্যারান্টিই বা কে দেবে? মানবাধিকারের প্রশ্নে, ধর্ষকের মত একজন জঘন্য অপরাধীর জীবনের মূল্য কি একাধিক শিশুর জীবনের সম্ভাব্য মূল্যের চেয়েও বেশি?
না বেশি নয়। তাই শিশুধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করা আসলে বামপন্থীদের চিরাচরিত সুবিধাবাদী মনোবৃত্তির প্রকাশ। যে সুবিধাবাদী মনোবৃত্তি নিয়ে রাজনীতি ক্ষেত্রে ওঁরা নিত্য চলেন, এই বিরোধিতার মাধ্যমেও সেই মনোবৃত্তিই পুনঃপ্রকাশিত হচ্ছে মাত্র। বড় লজ্জার এই ভাবধারা।
ওঁরা কয়েকটি দাবী তুলেছেন। সেই প্রতিটি দাবীর প্রেক্ষিতে আমার বক্তব্য রাখবো।
বামপন্থী দাবী ১) ধর্ষকদের সমর্থনে তেরঙ্গা বা অন্য যে কোন ঝান্ডা নিয়ে যারা মিছিল করে তাদের মৃত্যদন্ড হোক।
-- যদি প্রমাণিত হয় যে তারা মিছিল করেছে ধর্ষণের সমর্থনে, এবং যে বা যারা প্রমাণিতভাবে এবং নিশ্চিতভাবেই ধর্ষক তাদের সমর্থনে, তবে অবশ্যই তাদের মৃত্যদন্ড হোক।
-- মৃত্যুদণ্ড হোক তাদেরও যারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রমাণিত হওয়ার আগেই কাউকে ধর্ষক বলে দাগিয়ে দেয়।
বামপন্থী দাবী ২) ধর্ষকদের পক্ষে মিটিং মিছিল করা বিধায়ক বা মন্ত্রীদের মৃত্যুদন্ড হোক।
-- যদি প্রমাণিত হয় যে সেই বিধায়ক বা মন্ত্রীরা মিটিং মিছিল করেছে ধর্ষণের সমর্থনে এবং যে বা যারা প্রমাণিতভাবে এবং নিশ্চিতভাবেই ধর্ষক তাদের সমর্থনে, তবে অবশ্যই সেই বিধায়ক বা মন্ত্রীদের মৃত্যদন্ড হোক।
বামপন্থী দাবী ৩) ধর্ষকদের সমর্থনে "জয় শ্রী রাম" স্লোগান দেওয়া উকিলদের মৃত্যুদন্ড হোক
-- যদি প্রমাণিত হয় যে সেই উকিলেরা "জয় শ্রী রাম" স্লোগান দিয়েছেন ধর্ষণের সমর্থনে এবং যে বা যারা প্রমাণিতভাবে এবং নিশ্চিতভাবেই ধর্ষক তাদের সমর্থনে, তবে অবশ্যই সেই উকিলদের মৃত্যদন্ড হোক।
বামপন্থী দাবী ৪) ধর্ষকদের আড়াল করতে যারা নিরন্তর ফেক নিউজ আর মিথ্যে তথ্য ছড়িয়ে যাচ্ছে তাদের মৃত্যুদন্ড হোক
-- যারা অন্য কোন গূঢ় উদ্দেশ্যকে আড়াল করতে ধর্ষণ তত্ত্ব খাড়া করে, MSM এর একটা বড় অংশকে হাত করে দেশের বহির্শত্রুদের হাত শক্ত করছে বলে সন্দেহ হচ্ছে, সেই সন্দেহের সত্যতা প্রমাণে সেই সব দেশদ্রোহীদের, শুধু সাধারণ মৃত্যুদণ্ড নয়, কুকুর দিয়ে খাওয়ানো হোক্।
এই কুকুর দিয়ে খাওয়ানোর দাবীটির নিন্দা করতে বামপন্থীরা পারবেন কি? বর্তমান বামপন্থীদের হৃদয়সম্রাট উত্তর কোরিয়ার কিম্-জং-উন্ এর প্রিয় শাস্তি-পদ্ধতি এটি। কিম্ দেশের প্রধানমন্ত্রী ও নিজের পিসেমশায়কে কুকুর দিয়ে খাইয়ে হত্যা করেছেন কারণ তিনি কিম্ কে সমর্থন করছিলেন না।
বামপন্থী দাবী ৫)ধর্ষকদের পক্ষে দাঁড়িয়ে সরাসরি যারা বলছে 'ধর্ষণ করে বেশ করেছে', তাদের মৃত্যুদন্ড হোক।
-- যদি প্রমাণিত হয় যে বা যারা প্রমাণিতভাবে এবং নিশ্চিতভাবেই ধর্ষক, কেউ তাদের সেই প্রমাণিত ধর্ষণকে জোর গলায় সমর্থন জানিয়েছে, তবে অবশ্যই তাদের মৃত্যদন্ড হোক।
বামপন্থী দাবী ৬) যারা জনসমক্ষে স্টেজ থেকে বলছে - কবর থেকে মৃতদেহ তুলে এনে ধর্ষণ করো, তাদের মৃত্যুদন্ড হোক।
-- কবর থেকে তুলে আনা মৃতদেহের ধর্ষণ বাস্তবপক্ষে অসম্ভব। এই ধরনের বক্তব্য থেকেই বোঝা যায় যে এই কথা সুস্থ মস্তিষ্কে বলা কথা নয়। জীবিত মানুষকে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য, পাশবিক আচরণের প্রতিক্রিয়ায় যখন কোনো মানুষ ক্ষোভে, দুঃখে, রাগে, প্রতিহিংসায় প্রায় অন্ধ হয়ে গিয়ে তাঁর মস্তিষ্কের সুস্থতাও পর্যন্ত সাময়িকভাবে হারিয়ে ফেলেন, তখনই তাঁর পক্ষে এমন কথা বলা সম্ভব। যদিও প্রতিহিংসা যে কোনো পরিস্থিতিতেই নিন্দনীয়, তবু এক্ষেত্রে বুঝতে হবে সেই কথার স্পিরিটটুকুকে, যা কিনা বাস্তবে ধর্ষণের সপক্ষে নয়, বরং অন্ধভাবে ধর্ষণের বিপক্ষে। তাই সেই অন্ধত্বকে ও প্রতিহিংসাপরায়ণতাকে নিন্দা করা গেলেও বক্তব্যের স্পিরিট বুঝে বক্তার মানসিক অবস্থা অনুমান করে নেওয়া যায় এবং তাই করা উচিত। এক্ষেত্রে বক্তার শাস্তি চাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি জরুরী হল, কি পরিস্থিতিতে এই বক্তব্য রাখা হয়েছে তা বুঝে সেই পরিস্থিতিই যাতে আর না ঘটে, সে ব্যাপারে যত্নবান হওয়া।
বামপন্থী দাবী ৭) যারা বলছে - অমুক বা তমুক ধর্মের লোককে ধর্ষণ করা জায়েজ, তাদের মৃত্যুদন্ড হোক।
-- হ্যাঁ হোক্, ভারতবর্ষের জনসংখ্যা তাতে বহু কমবে। তবে তাদের সঙ্গে যেন সেই সব মানুষদের গুলিয়ে ফেলা না হয়, যাঁরা বলেন যে "ধর্ষক ও ধর্ষিতার ধর্মপরিচয় যেন অপরাধের গুরুত্ব বিচারে বা তার প্রতিবাদের ক্ষেত্রে বিচার্য হয়ে না ওঠে। সব ধর্ষণের প্রতিবাদেই যেন সমানভাবে গর্জে ওঠা হয়।" উদাহরণ, আমি।
বামপন্থী দাবী ৮) সবার আগে, যিনি ধর্ষণকে একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে বলে নিজের লেখায় বৈধতা দিয়ে গেছেন, সেই সাভারকারের একটি মূর্তিকে লাল কেল্লার সামনে প্রতীকি ফাঁসি দেওয়া হোক।
-- এ কথার জবাব দেওয়ার আগে দুটি কথা আছে। বীর সাভারকর সম্বন্ধে এমন নিরলস অপপ্রচারের উৎসাহ ও ডেসপারেশন কেন দেখান বামপন্থীরা তা জানার কৌতূহল আমার আছে। সাভারকর যদি ভীরু, কাপুরুষই হবেন, তবে তো মৃত্যুর এত বছর পর তাঁর oblivion এ হারিয়ে যাওয়ারই কথা ছিল। কিন্তু এমনকি বামপন্থীরাও সাভারকরকে ভুলতে পারছেন না, ক্রমাগত তাঁকে 'শত্রুরূপে ভজনা' এবং তাঁর নিরলস নিন্দা করে চলেছেন। কেন? জানতে ইচ্ছে করে! বীর সাভারকর কি এমন করেছিলেন যে বামপন্থীদের এত গাত্রদাহ? কেন তাঁরা তাঁকে উপেক্ষা করতে পারেন না?
--এবার বলি, এটি একটি সর্বৈব mis-propaganda, যার কোনো প্রামাণ্য তথ্য আমার কাছে নেই। বহু বছর আগে মৃত একজন ব্যক্তির মুখে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিজেদের পছন্দমত কথা বসিয়ে দিয়ে তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করার কাপুরুষোচিত, হীন মনোবৃত্তির বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানাই।
তবে এই ধরণের কাপুরুষোচিত হীন মনোবৃত্তি যাঁরা রাখেন, তাদের... না থাক, বেশি হয়ে যাবে।
অর্থাৎ আমার বক্তব্যও এখানে শেষ হল। পাঠককে একান্ত জিজ্ঞাস্য, যৌক্তিকতা ও মানবিকতার নিরিখে আপনি কি বামপন্থীদের মত ধর্ষণবিরোধী-প্রতিবাদ-উৎসব পালন করার পরে ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড না দেওয়ার পক্ষে, নাকি ন্যূনতম শাস্তি হিসেবেই শিশুধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পক্ষে?
Comments
Post a Comment