আজাদ কাশ্মীর: এক অবাস্তব মরীচিকা
এই ব্লগ যখন লিখেছিলাম, অর্থাৎ জুন, ২০১৮য়, সেই সময়ের চেয়ে বর্তমান সময়ে অর্থাৎ ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ এ #PulwamaAttack এর পরে এর প্রাসঙ্গিকতা ঢের বেড়ে গিয়েছে।
২০১৮র জুন মাসে কাশ্মীরে সেনাবাহিনী গুলি চালিয়েছিল টেররিস্টদের উপর। তখন শ্রী গুলাম নবী আজাদ ক্রমাগত বলে চলেছিলেন যে ভিড়ভাট্টাপূর্ণ জায়গায় আর্মি ফায়ারিং এ টেররিস্টের সঙ্গে মারা যায় কমন সিভিলিয়ানও এবং এটা উনি চান না।
ঠিকই। কেউই চায় না। কিন্তু তা বলে কি টেররিজম্ এর সঙ্গে যুদ্ধই বন্ধ করে দিতে হবে?
কিন্তু ওঁর কথা থেকে এটাও পরিষ্কার যে কাশ্মীরে তার মানে ভিড়ভাট্টার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে টেররিস্টও। তার মানে এ-ও দাঁড়ায় যে সাধারণ কাশ্মীরি সিভিলিয়ান জেনে হোক, না জেনে হোক, টেররিস্টদেরকে ভিড়ে আশ্রয় দেয় বা দিতে বাধ্য হয়।
এর কারণ বোধ হয় এই যে, কাশ্মীরে টেররিস্ট সংখ্যায় প্রচুর এবং কাশ্মীরের অধিকাংশ সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে টেররিস্ট হওয়া হয়ত কোনো বিশেষ নিন্দনীয় কিছু বলেও গণ্য হয় না, বরং একটি সাধারণ ঘটনা বলেই treated হয়। টেররিস্টরা হয়ত অনেক কমন সিভিলিয়ানদের কাছেই স্বাধীনতাসংগ্রামীর মর্যাদা পায়। সেই কারণেই হয়ত যে কোনো সময়, যে কোনো জায়গায়, সাধারণ মানুষের ভিড়েও টেররিস্ট লুকিয়ে থাকে, আর তাদেরকে ফায়ার করতে গিয়েই আর্মি হয়ত না চাইতেও কিছু সিভিলিয়ানেরও মৃত্যুর কারণ হয়।
সিভিলিয়ানদেরই রুখে দাঁড়াতে হবে। চুপ করে থেকে টেররিস্টদের আশ্রয় না দিয়ে বরং জানা থাকলে টেররিস্টদের ধরিয়ে দিতে হবে আগেই। তাহলেই সিভিলিয়ানদের অপ্রত্যাশিত মৃত্যু এড়ানো যাবে। শ্রী আজাদ বরং কাশ্মীরের সিভিলিয়ানদের appeal করুন যে তাঁরা যেন জানা মাত্র টেররিস্টদের উপস্থিতির খবর আর্মিকে জানিয়ে দেন।
একমাত্র তাহলেই প্রমাণিত হবে যে গুলাম নবী আজাদের এই concern সত্যিই সিভিলিয়ানদের জন্য, টেররিস্টদের বাঁচানোর জন্য নয়।
তবে গুলাম নবী আজাদ বা সইফুদ্দিন সোজ এর মত কংগ্রেসী নেতারা যে ভাবে প্রত্যক্ষভাবে ও পরোক্ষভাবে কাশ্মীরিদের তথাকথিত 'আজাদি'র পক্ষে সওয়াল করছেন, তাতে মনে হচ্ছে না ওঁরা টেররিস্টদের অ্যাক্টিভিটিকে আদৌ turn down করছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হল, তাঁরা কি তাহলে কাশ্মীরের আজাদি' আদর্শগতভাবে সমর্থন করেন? তাও তো সম্ভব নয়! কারণ যদি তাই হত, তাহলে বিগত অর্ধশতাব্দীর ওপর কংগ্রেস শাসনকালে সে বিষয়ে কোনো সদর্থক পদক্ষেপ তাঁরা নিলেন না কেন? মনে রাখতে হবে, এই শ্রী গুলাম নবী আজাদ নিজেও কিন্তু অতীতে আড়াই বছর কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী এবং পরবর্তীকালে পাঁচবছর যাবৎ গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে কাজ করেছেন। তখন তিনি কি করছিলেন? সব দিক দেখে মনে হয়, বাস্তবে কাশ্মীরকে আজাদি দেওয়ার ইচ্ছা বা ক্ষমতা কোনোটাই শ্রী আজাদের বা কংগ্রেসের কোনোদিনই ছিল না এবং আজও নেই। শুধুমাত্র কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে এবং কাশ্মীরের রাজ্য সরকারকে বিব্রত করতে চাওয়াই তাঁদের একমাত্র উদ্দেশ্য। সাধারণ সিভিলিয়ানই হোন বা টেররিস্ট কারুর প্রতিই কোনো বাস্তব সহানুভূতি এনাদের নেই। তাই এনাদের এইসব কথা যেমন "ভিড়ভাট্টাপূর্ণ জায়গায় আর্মি ফায়ারিং এ টেররিস্টের সঙ্গে মারা যায় কমন সিভিলিয়ানও এবং এটা শ্রী আজাদ চান না" ইত্যাদি ইত্যাদি বলার উদ্দেশ্য কেবলমাত্র টেররিস্ট দমনে আর্মি অপারেশন সম্বন্ধে সাধারণ মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে নিজের ব্যক্তিগত ও দলগত স্বার্থসিদ্ধি করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
অর্থাৎ এঁদের জন্যই কাশ্মীরের আজ এই দশা। এঁদের জন্যই এতকাল দেশের কোনো significant অগ্রগতি হয় নি। আজ তাঁরা ক্ষমতার বাইরে, তাই তাঁরা এইসব বলছেন। অথচ বাস্তবে এঁরা নিজেদের মনে খুব ভালো করেই জানেন যে ক্ষমতায় থাকলে তাঁদের নিজেদের পক্ষেও কাশ্মীরের আজাদি'র ব্যাপারে কিছু করা সম্ভব ছিল না। তবু বারে বারে সরল কাশ্মীরবাসীর সামনে এই আজাদি'র মুলো ঝুলিয়ে রেখে এই সব কংগ্রেসি নেতারা শুধুই নিজেদের রাজনৈতিক আখের গুছিয়ে গেছেন। তাতে যে কত সাধারণ কাশ্মীরি যুবক বিভ্রান্তি বশে সন্ত্রাসীদলে নাম লিখিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত প্রাণও হারিয়েছে, সে ব্যাপারে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। নিজেরা ভালোভাবে জানা সত্ত্বেও কংগ্রেস উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এবং ব্যক্তিগত স্বার্থে এই সরল কথাটা চিরকাল চেপে গেছে যে কাশ্মীরকে আজাদি দেওয়া কোনোদিনই ভারতবর্ষের পক্ষে সম্ভব নয়, তা সে যে দলই যখন কেন্দ্রে বা কাশ্মীর রাজ্যে ক্ষমতায় থাকুন না কেন।
কেন? আসুন দেখে নেওয়া যাক্।
একটি সহজ কথা সহজভাবে কাশ্মীরি টেররিস্টদের বা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কে বোঝাবে যে কাশ্মীরকে আজাদি দেওয়া ভারতবর্ষের পক্ষে সম্ভব নয় কারণ তাতে ভারতবর্ষের আভ্যন্তরীন নিরাপত্তা বিপন্ন হবে। কাশ্মীরের মানুষের একটি বড় অংশ হয়ত চান যে কাশ্মীর পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হোক্। কিন্তু তাঁদের সেই ইচ্ছাকে সম্মান জানানো ভারতবর্ষের পক্ষে সম্ভব নয়। কেন? কারণ পাকিস্তানের রাষ্ট্রব্যবস্থাই সন্ত্রাসবাদের patron. সাধারণ পাকিস্তানি জনগণেরও বোধ করি এই উগ্র সন্ত্রাসী রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি সায় নেই। ভারতবর্ষ শান্তিপ্রিয় ঠিকই, কিন্তু নিজের দেশের আভ্যন্তরীন শান্তিকে বিঘ্নিত করে সে প্রতিবেশীর আগ্রাসী দাবীকে মান্যতা দিতে পারে না। নিজের অঙ্গহানি করে সে প্রতিবেশীর খিদে মেটাতে পারে না। এমনকি সে দাবী যদি গণতান্ত্রিক দাবী হয়, তাহলেও না।
সন্ত্রাস ও ভারতীয়ত্ব দুটি পরস্পরবিরোধী কনসেপ্ট। এমন কথা অতি বড় নিন্দুকেও বলতে পারবে না যে ভারতবর্ষ অন্য কোনো দেশের মাটিতে গিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সন্ত্রাসকার্য চালিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সেটিই হল তাদের স্বাভাবিকতা। তারা অন্যান্য দেশে, বিশেষতঃ ভারতবর্ষে সন্ত্রাস চালিয়েই স্বচ্ছন্দ এবং সেটিই তাদের normal practice. সেই কারণেই ভারতবর্ষ নিজেকে বিপন্ন করে কাশ্মীরকে পাকিস্তানে চলে যেতে দিতে পারে না।
আবার পাকিস্তান যদি মুশারফ গাইডলাইন ফলো করে একথাও বলে যে ভারতবর্ষ কাশ্মীরকে আজাদি দিয়ে দিলে পাকিস্তানও কাশ্মীরের বিষয়ে মাথা ঘামাবে না, তাহলেও পাকিস্তানের antecedents থেকে ভারতের পক্ষে টেররিস্তান পাকিস্তানকে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। কাশ্মীর যদি তথাকথিত আজাদ হয়ে যায়, তবে ভারতবর্ষের পাকিস্তান-কাশ্মীর বর্ডার আজ যেমন অশান্ত, তখন সেই অশান্তি নেমে আসবে কাশ্মীর-হিমাচল বর্ডারে। তারপর দাবী উঠবে হিমাচলের আজাদি'র। পাকিস্তানের antecedents থেকে এসব আন্দাজ করা খুব কঠিন কিছু নয়। কিন্তু তা বলে তো ভারতবর্ষের পক্ষে নিজের অঙ্গে কুঠারাঘাত করে একটু একটু করে নিজের অঙ্গহানি ঘটানো সম্ভব নয়!
তাই কাশ্মীরের যা ভৌগোলিক অবস্থান, তাতে যতক্ষণ পাকিস্তান তার সন্ত্রাসবাদ-পোষক কার্যকলাপ চালিয়ে যাবে এবং কাশ্মীরের কিছু মানুষ তাতে মদত দেবে ও অংশগ্রহন করবে, ততক্ষন কাশ্মীরও একটি মূলধারার সুস্থ জীবনযাত্রা থেকে বঞ্চিতই থেকে যাবে। অখণ্ড ভারতবর্ষের অংশ হিসাবে আর পাঁচটা ভারতীয় রাজ্যের মত বাঁচার জন্য কাশ্মীরের অধিকাংশ মানুষ যদি শুভচেতনার সঙ্গে অগ্রসর হয়, এবং কেবলমাত্র কাশ্মীরি হয়ে না থেকে পূর্ণাঙ্গ ভারতীয় হয়ে ওঠে, তবেই কাশ্মীরের মঙ্গল। কাশ্মীরের জনগণের মনে এই প্রশ্নের উদ্রেক হওয়া বাঞ্ছনীয় যে কাশ্মীর যদি স্বাধীনও হয়, তাদের অর্থনীতি স্বাধীন হবে কি? তার জন্য কি তাদের প্রতিবেশীর সাহায্যের প্রয়োজন হবে না?
নরেন্দ্র মোদীর অনলস প্রচেষ্টার ফলে বর্তমানে প্রায় গোটা পৃথিবীই পাকিস্তানকে সন্ত্রাসের কারবারি বলে মান্যতা দিতে শুরু করেছে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমীরশাহীও সন্ত্রাস নিয়ে ভারতের উদ্বেগকে address করেছে। হিসেব অনুযায়ী সব কিছু যদি ঠিকঠাক চলে তবে রাষ্ট্রপুঞ্জও হয়ত অনতিদূর ভবিষ্যতে ভারতের সেই দাবীকে মান্যতা দেবে। এইভাবে পাকিস্তানকে একঘরে করতে পারলেই কাশ্মীরের উপর পাকিস্তানের দাবী পূরণ করা যে ভারতের পক্ষে infeasible, এমনকি তা কাশ্মীরের গণতান্ত্রিক দাবী হলেও যে infeasible, তা নিঃসংশয়ে প্রমাণিত হবে।
কাশ্মীরের আজাদি'র প্রয়োজন অবশ্যই আছে। কিন্তু তা হল বিপথগামীতা থেকে, ভ্রান্ত চিন্তাধারা থেকে, অকারণ উস্কানিজনিত উত্তেজনা থেকে আজাদি। ইচ্ছায় হোক্, অনিচ্ছায় হোক্ কাশ্মীর ভারতের অঙ্গরাজ্যই থাকবে। স্বাধীনও হবে না, পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তও হতে পারবে না। নরেন্দ্র মোদীর অনলস প্রয়াস ফলবতী হবেই। আর একবার যদি কাশ্মীর মূলধারার ভারতীয়ত্বে প্রবেশ করে, তখন তাদের বহু অভিযোগেরও অবসান ঘটবে। কাশ্মীরিরা সেদিন বুঝবে যে ৩৭০ ধারা আসলে তাদের জন্য আশীর্বাদ নয়, অভিশাপ ছিল। এবং তাদেরকে শাপগ্রস্ত করে রেখেছিলেন জওহরলাল নেহরু, নেহাৎই নিজের পরিবারের ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করতে।
কাশ্মীরের শাপমুক্তি সেদিনই ঘটবে যেদিন তাদের মনোজগতে এই উপলব্ধির সূচনা হবে যে ক্ষোভ, বিদ্বেষ, অনাচার, সন্ত্রাস, এসব জীবনমুখী পন্থা নয়। বরং যুক্তি, সংরক্ষণ, পারস্পরিক বোঝাপড়াই হল জীবনের মূলমন্ত্র।
২০১৮র জুন মাসে কাশ্মীরে সেনাবাহিনী গুলি চালিয়েছিল টেররিস্টদের উপর। তখন শ্রী গুলাম নবী আজাদ ক্রমাগত বলে চলেছিলেন যে ভিড়ভাট্টাপূর্ণ জায়গায় আর্মি ফায়ারিং এ টেররিস্টের সঙ্গে মারা যায় কমন সিভিলিয়ানও এবং এটা উনি চান না।
ঠিকই। কেউই চায় না। কিন্তু তা বলে কি টেররিজম্ এর সঙ্গে যুদ্ধই বন্ধ করে দিতে হবে?
কিন্তু ওঁর কথা থেকে এটাও পরিষ্কার যে কাশ্মীরে তার মানে ভিড়ভাট্টার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে টেররিস্টও। তার মানে এ-ও দাঁড়ায় যে সাধারণ কাশ্মীরি সিভিলিয়ান জেনে হোক, না জেনে হোক, টেররিস্টদেরকে ভিড়ে আশ্রয় দেয় বা দিতে বাধ্য হয়।
এর কারণ বোধ হয় এই যে, কাশ্মীরে টেররিস্ট সংখ্যায় প্রচুর এবং কাশ্মীরের অধিকাংশ সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে টেররিস্ট হওয়া হয়ত কোনো বিশেষ নিন্দনীয় কিছু বলেও গণ্য হয় না, বরং একটি সাধারণ ঘটনা বলেই treated হয়। টেররিস্টরা হয়ত অনেক কমন সিভিলিয়ানদের কাছেই স্বাধীনতাসংগ্রামীর মর্যাদা পায়। সেই কারণেই হয়ত যে কোনো সময়, যে কোনো জায়গায়, সাধারণ মানুষের ভিড়েও টেররিস্ট লুকিয়ে থাকে, আর তাদেরকে ফায়ার করতে গিয়েই আর্মি হয়ত না চাইতেও কিছু সিভিলিয়ানেরও মৃত্যুর কারণ হয়।
সিভিলিয়ানদেরই রুখে দাঁড়াতে হবে। চুপ করে থেকে টেররিস্টদের আশ্রয় না দিয়ে বরং জানা থাকলে টেররিস্টদের ধরিয়ে দিতে হবে আগেই। তাহলেই সিভিলিয়ানদের অপ্রত্যাশিত মৃত্যু এড়ানো যাবে। শ্রী আজাদ বরং কাশ্মীরের সিভিলিয়ানদের appeal করুন যে তাঁরা যেন জানা মাত্র টেররিস্টদের উপস্থিতির খবর আর্মিকে জানিয়ে দেন।
একমাত্র তাহলেই প্রমাণিত হবে যে গুলাম নবী আজাদের এই concern সত্যিই সিভিলিয়ানদের জন্য, টেররিস্টদের বাঁচানোর জন্য নয়।
তবে গুলাম নবী আজাদ বা সইফুদ্দিন সোজ এর মত কংগ্রেসী নেতারা যে ভাবে প্রত্যক্ষভাবে ও পরোক্ষভাবে কাশ্মীরিদের তথাকথিত 'আজাদি'র পক্ষে সওয়াল করছেন, তাতে মনে হচ্ছে না ওঁরা টেররিস্টদের অ্যাক্টিভিটিকে আদৌ turn down করছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হল, তাঁরা কি তাহলে কাশ্মীরের আজাদি' আদর্শগতভাবে সমর্থন করেন? তাও তো সম্ভব নয়! কারণ যদি তাই হত, তাহলে বিগত অর্ধশতাব্দীর ওপর কংগ্রেস শাসনকালে সে বিষয়ে কোনো সদর্থক পদক্ষেপ তাঁরা নিলেন না কেন? মনে রাখতে হবে, এই শ্রী গুলাম নবী আজাদ নিজেও কিন্তু অতীতে আড়াই বছর কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী এবং পরবর্তীকালে পাঁচবছর যাবৎ গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে কাজ করেছেন। তখন তিনি কি করছিলেন? সব দিক দেখে মনে হয়, বাস্তবে কাশ্মীরকে আজাদি দেওয়ার ইচ্ছা বা ক্ষমতা কোনোটাই শ্রী আজাদের বা কংগ্রেসের কোনোদিনই ছিল না এবং আজও নেই। শুধুমাত্র কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে এবং কাশ্মীরের রাজ্য সরকারকে বিব্রত করতে চাওয়াই তাঁদের একমাত্র উদ্দেশ্য। সাধারণ সিভিলিয়ানই হোন বা টেররিস্ট কারুর প্রতিই কোনো বাস্তব সহানুভূতি এনাদের নেই। তাই এনাদের এইসব কথা যেমন "ভিড়ভাট্টাপূর্ণ জায়গায় আর্মি ফায়ারিং এ টেররিস্টের সঙ্গে মারা যায় কমন সিভিলিয়ানও এবং এটা শ্রী আজাদ চান না" ইত্যাদি ইত্যাদি বলার উদ্দেশ্য কেবলমাত্র টেররিস্ট দমনে আর্মি অপারেশন সম্বন্ধে সাধারণ মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে নিজের ব্যক্তিগত ও দলগত স্বার্থসিদ্ধি করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
অর্থাৎ এঁদের জন্যই কাশ্মীরের আজ এই দশা। এঁদের জন্যই এতকাল দেশের কোনো significant অগ্রগতি হয় নি। আজ তাঁরা ক্ষমতার বাইরে, তাই তাঁরা এইসব বলছেন। অথচ বাস্তবে এঁরা নিজেদের মনে খুব ভালো করেই জানেন যে ক্ষমতায় থাকলে তাঁদের নিজেদের পক্ষেও কাশ্মীরের আজাদি'র ব্যাপারে কিছু করা সম্ভব ছিল না। তবু বারে বারে সরল কাশ্মীরবাসীর সামনে এই আজাদি'র মুলো ঝুলিয়ে রেখে এই সব কংগ্রেসি নেতারা শুধুই নিজেদের রাজনৈতিক আখের গুছিয়ে গেছেন। তাতে যে কত সাধারণ কাশ্মীরি যুবক বিভ্রান্তি বশে সন্ত্রাসীদলে নাম লিখিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত প্রাণও হারিয়েছে, সে ব্যাপারে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। নিজেরা ভালোভাবে জানা সত্ত্বেও কংগ্রেস উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এবং ব্যক্তিগত স্বার্থে এই সরল কথাটা চিরকাল চেপে গেছে যে কাশ্মীরকে আজাদি দেওয়া কোনোদিনই ভারতবর্ষের পক্ষে সম্ভব নয়, তা সে যে দলই যখন কেন্দ্রে বা কাশ্মীর রাজ্যে ক্ষমতায় থাকুন না কেন।
কেন? আসুন দেখে নেওয়া যাক্।
একটি সহজ কথা সহজভাবে কাশ্মীরি টেররিস্টদের বা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কে বোঝাবে যে কাশ্মীরকে আজাদি দেওয়া ভারতবর্ষের পক্ষে সম্ভব নয় কারণ তাতে ভারতবর্ষের আভ্যন্তরীন নিরাপত্তা বিপন্ন হবে। কাশ্মীরের মানুষের একটি বড় অংশ হয়ত চান যে কাশ্মীর পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হোক্। কিন্তু তাঁদের সেই ইচ্ছাকে সম্মান জানানো ভারতবর্ষের পক্ষে সম্ভব নয়। কেন? কারণ পাকিস্তানের রাষ্ট্রব্যবস্থাই সন্ত্রাসবাদের patron. সাধারণ পাকিস্তানি জনগণেরও বোধ করি এই উগ্র সন্ত্রাসী রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি সায় নেই। ভারতবর্ষ শান্তিপ্রিয় ঠিকই, কিন্তু নিজের দেশের আভ্যন্তরীন শান্তিকে বিঘ্নিত করে সে প্রতিবেশীর আগ্রাসী দাবীকে মান্যতা দিতে পারে না। নিজের অঙ্গহানি করে সে প্রতিবেশীর খিদে মেটাতে পারে না। এমনকি সে দাবী যদি গণতান্ত্রিক দাবী হয়, তাহলেও না।
সন্ত্রাস ও ভারতীয়ত্ব দুটি পরস্পরবিরোধী কনসেপ্ট। এমন কথা অতি বড় নিন্দুকেও বলতে পারবে না যে ভারতবর্ষ অন্য কোনো দেশের মাটিতে গিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সন্ত্রাসকার্য চালিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সেটিই হল তাদের স্বাভাবিকতা। তারা অন্যান্য দেশে, বিশেষতঃ ভারতবর্ষে সন্ত্রাস চালিয়েই স্বচ্ছন্দ এবং সেটিই তাদের normal practice. সেই কারণেই ভারতবর্ষ নিজেকে বিপন্ন করে কাশ্মীরকে পাকিস্তানে চলে যেতে দিতে পারে না।
আবার পাকিস্তান যদি মুশারফ গাইডলাইন ফলো করে একথাও বলে যে ভারতবর্ষ কাশ্মীরকে আজাদি দিয়ে দিলে পাকিস্তানও কাশ্মীরের বিষয়ে মাথা ঘামাবে না, তাহলেও পাকিস্তানের antecedents থেকে ভারতের পক্ষে টেররিস্তান পাকিস্তানকে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। কাশ্মীর যদি তথাকথিত আজাদ হয়ে যায়, তবে ভারতবর্ষের পাকিস্তান-কাশ্মীর বর্ডার আজ যেমন অশান্ত, তখন সেই অশান্তি নেমে আসবে কাশ্মীর-হিমাচল বর্ডারে। তারপর দাবী উঠবে হিমাচলের আজাদি'র। পাকিস্তানের antecedents থেকে এসব আন্দাজ করা খুব কঠিন কিছু নয়। কিন্তু তা বলে তো ভারতবর্ষের পক্ষে নিজের অঙ্গে কুঠারাঘাত করে একটু একটু করে নিজের অঙ্গহানি ঘটানো সম্ভব নয়!
তাই কাশ্মীরের যা ভৌগোলিক অবস্থান, তাতে যতক্ষণ পাকিস্তান তার সন্ত্রাসবাদ-পোষক কার্যকলাপ চালিয়ে যাবে এবং কাশ্মীরের কিছু মানুষ তাতে মদত দেবে ও অংশগ্রহন করবে, ততক্ষন কাশ্মীরও একটি মূলধারার সুস্থ জীবনযাত্রা থেকে বঞ্চিতই থেকে যাবে। অখণ্ড ভারতবর্ষের অংশ হিসাবে আর পাঁচটা ভারতীয় রাজ্যের মত বাঁচার জন্য কাশ্মীরের অধিকাংশ মানুষ যদি শুভচেতনার সঙ্গে অগ্রসর হয়, এবং কেবলমাত্র কাশ্মীরি হয়ে না থেকে পূর্ণাঙ্গ ভারতীয় হয়ে ওঠে, তবেই কাশ্মীরের মঙ্গল। কাশ্মীরের জনগণের মনে এই প্রশ্নের উদ্রেক হওয়া বাঞ্ছনীয় যে কাশ্মীর যদি স্বাধীনও হয়, তাদের অর্থনীতি স্বাধীন হবে কি? তার জন্য কি তাদের প্রতিবেশীর সাহায্যের প্রয়োজন হবে না?
নরেন্দ্র মোদীর অনলস প্রচেষ্টার ফলে বর্তমানে প্রায় গোটা পৃথিবীই পাকিস্তানকে সন্ত্রাসের কারবারি বলে মান্যতা দিতে শুরু করেছে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমীরশাহীও সন্ত্রাস নিয়ে ভারতের উদ্বেগকে address করেছে। হিসেব অনুযায়ী সব কিছু যদি ঠিকঠাক চলে তবে রাষ্ট্রপুঞ্জও হয়ত অনতিদূর ভবিষ্যতে ভারতের সেই দাবীকে মান্যতা দেবে। এইভাবে পাকিস্তানকে একঘরে করতে পারলেই কাশ্মীরের উপর পাকিস্তানের দাবী পূরণ করা যে ভারতের পক্ষে infeasible, এমনকি তা কাশ্মীরের গণতান্ত্রিক দাবী হলেও যে infeasible, তা নিঃসংশয়ে প্রমাণিত হবে।
কাশ্মীরের আজাদি'র প্রয়োজন অবশ্যই আছে। কিন্তু তা হল বিপথগামীতা থেকে, ভ্রান্ত চিন্তাধারা থেকে, অকারণ উস্কানিজনিত উত্তেজনা থেকে আজাদি। ইচ্ছায় হোক্, অনিচ্ছায় হোক্ কাশ্মীর ভারতের অঙ্গরাজ্যই থাকবে। স্বাধীনও হবে না, পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তও হতে পারবে না। নরেন্দ্র মোদীর অনলস প্রয়াস ফলবতী হবেই। আর একবার যদি কাশ্মীর মূলধারার ভারতীয়ত্বে প্রবেশ করে, তখন তাদের বহু অভিযোগেরও অবসান ঘটবে। কাশ্মীরিরা সেদিন বুঝবে যে ৩৭০ ধারা আসলে তাদের জন্য আশীর্বাদ নয়, অভিশাপ ছিল। এবং তাদেরকে শাপগ্রস্ত করে রেখেছিলেন জওহরলাল নেহরু, নেহাৎই নিজের পরিবারের ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করতে।
কাশ্মীরের শাপমুক্তি সেদিনই ঘটবে যেদিন তাদের মনোজগতে এই উপলব্ধির সূচনা হবে যে ক্ষোভ, বিদ্বেষ, অনাচার, সন্ত্রাস, এসব জীবনমুখী পন্থা নয়। বরং যুক্তি, সংরক্ষণ, পারস্পরিক বোঝাপড়াই হল জীবনের মূলমন্ত্র।
Comments
Post a Comment