রাজ্যে ইসলাম আগ্রাসনের বাংলাপক্ষের ভূমিকা: পর্ব ২

https://www.facebook.com/story.php?story_fbid=337207430179011&id=100016692693608

উত্তর দিনাজপুরে ইসলামপুরের ঘটনা নিয়ে ক্রমাগত চর্চা করব, সেকথা আগেই বলেছি। আপনাদের অনুরোধও করেছি যে পর্যবেক্ষণ যদি পছন্দ হয়, তবে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তা ছড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধও করেছি।

এই পোস্ট রবিবারের পর এ বিষয়ে আমার 2nd পোস্ট।

এখন লিখব কিছুটা ব্যাকগ্রাউণ্ড হিস্ট্রি। বলা যেতে পারে, পশ্চিমবঙ্গে জেহাদী রাজনীতি কিভাবে ধাপে ধাপে strategically এগিয়েছে, সেটা বোঝার জন্য এই ব্যাকগ্রাউণ্ড বোঝা জরুরী। এই পোস্টের বিষয়বস্তুর সঙ্গে উত্তর দিনাজপুরের ঘটনা সরাসরি সম্পর্কিত নয়। কিন্তু রাজ্যে জেহাদী রাজনীতির ভিত কিভাবে গড়ে উঠেছে যার ফলে আমরা হারালাম রাজেশ, তাপস ও বারিদকে, তা অনুধাবন করার জন্য এই ব্যাকগ্রাউণ্ড স্টোরির প্রয়োজন আছে।

আবারও বলি বাংলাপক্ষের কথা। অনেকেরই হয়ত মনে হতে পারে যে এদেরকে এত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কেন? এতে তারা অযথা প্রচার পেয়ে যাচ্ছে। তাঁদের উদ্দেশ্যে সবিনয়ে বলতে চাই, যে উগ্র বাঙালী প্রাদেশিকতার আবহ এরা তৈরি করছে, তার পিছনে এরা আসলে আড়াল বা camouflage করে দিচ্ছে রাজ্যের নীরব ইসলামাইজেশনকে, আস্তে আস্তে থাবা বসানো বোরখা সংস্কৃতির আগ্রাসনকে।

ভিড়ের মধ্যে এক জায়গায় প্রবল হৈ চৈ শুনে সেখানে ছুটে গিয়ে দেখা গেল মানুষ একটা ছিঁচকে চোরকে নিয়ে ব্যস্ত। চোর মহা-উৎসাহে তার আচরণকে গ্লোরিফাই করে যাচ্ছে। তাই দেখে কেউ হয়ত amused হলেন বা বিরক্ত হলেন, কেউ কেউ চোরকে ইগনোরও করতে পারেন। কিন্তু ছিঁচকে চোরকে নিয়ে সেই উন্মাদনার স্থান থেকে যখন ফিরে এলেন নিজের stable জায়গায়, তখন হয়ত দেখা গেল ঘরে ডাকাতি হয়ে গিয়েছে।

অনেকটা সেইরকম ছিঁচকে চোরের ভূমিকা পালন করছে এই পক্ষটি।

বাংলা ও বাঙালী সেন্টিমেন্টকে স্টিমুলেট করে আসলে একটা বৃহত্তর ভাষা আগ্রাসন ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকে আড়াল করা হচ্ছে বলে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে।

একটি উদাহরণ দিই।

রবিবারের পোস্টটিতে একটি ছবি আমি দিয়েছিলাম যাতে বাংলাপক্ষের কর্ণধার বলেছেন যে বাঙালী চাইনিজ খেতে ভালোবাসে তাই ইনি চাইনিজে কথা বলাও মেনে নিতে পারেন কিন্তু হিন্দি মানবেন না। এঁর এই কথাটাকেই একটু extrapolate করতে হবে। যদি ইনি বলেন যে 'বাঙালী বিরিয়ানী খেতে ভালোবাসে তাই প্রয়োজনে উর্দুতে কথা বলব কিন্তু হিন্দি বলব না', তাহলে কি খুব অসম্ভব বা বেমানান লাগবে এঁর মুখে? বোধ হয় না।

হিন্দির উৎপাত সর্বত্রই বেড়েছে, কিন্তু তার কারণ অন্য। তার মূল কারণ বলিউডের বিপুল বাজার।

রবিবারের পোস্টেও বলেছি, তাছাড়া বহু মানুষই জানেন বাংলাপক্ষ হল একটি self-proclaimed বাঙালীয়ানার ঠিকাদার সংস্থা । তারা হিন্দিকে এবং হিন্দিভাষীদের পশ্চিমবঙ্গ থেকে একেবারে তাড়িয়ে দিতে চান। এই হিন্দিভাষীদের মধ্যে বিহারী, উত্তরপ্রদেশীয়, মাড়োয়ারী, গুজরাটী, মহারাষ্ট্রীয় সবাই পড়েন। এদের যুক্তি হল যে দেওয়ালী উপলক্ষ্যে যদি সারা ভারতবর্ষ ছুটি থাকতে পারে, তাহলে কালীপুজো উপলক্ষ্যে কেন থাকবে না!

এদের প্রতিটি বক্তব্য থেকে মনে হয় যে ভারতবর্ষ যেমন একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র, তেমনি পশ্চিমবঙ্গও যেন আর একটি স্বাধীন, স্বয়ংসম্পূর্ণ রাষ্ট্র। এরা পশ্চিমবঙ্গকে ভারতবর্ষের প্রতি competitive ভাবে উপস্থাপনা করে। সম্ভবতঃ সচেতনভাবেই এই ফ্যাক্টটিকে অস্বীকার করে যে পশ্চিমবঙ্গ ভারতবর্ষের একটি অঙ্গরাজ্য মাত্র। কোনো স্বাধীন পৃথক রাষ্ট্র নয়। সুতরাং পশ্চিমবঙ্গের সাথে ভারতবর্ষের কোনো বিরোধ বা প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে না। অথচ এরা বলতে চায় এবং বলে যে ভারতবর্ষের প্রোটোকল পশ্চিমবঙ্গ মানবে কেন? এরা সর্বত্র হিন্দি-ইমপোসিশন দেখে। অর্থাৎ বিচ্ছিন্নতাবাদের সমস্ত লক্ষণ এদের বক্তব্যে স্পষ্ট। 

অনেকে হয়ত বলতে পারেন যে বিচ্ছিন্নতাবাদী তো গোর্খারাও! তারাও আলাদা গোর্খাল্যাণ্ড চায়! পশ্চিমবঙ্গকে টুকরো করতে চায়।

গোর্খাদের সেই বিচ্ছিন্নতাবাদকে একটুও সমর্থন না জানিয়েও বলছি, বাংলাপক্ষের এই বিচ্ছিন্নতাবাদ আর গোর্খাদের বিচ্ছিন্নতাবাদ একই প্রকৃতির নয়। গোর্খারা নিজেদের জন্য চায় পৃথক রাজ্য। ভারতীয় ইউনিয়নের মধ্যেই এবং ভারতীয় হিসেবেই। তাঁরা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভারতেরই আর একটি অঙ্গরাজ্য হতে চায়।

কিন্তু মৌখিক সংঘাতে বাংলাপক্ষ চ্যালেঞ্জ করে সরাসরি ভারতবর্ষকেই। যেহেতু বাঙালিদের জন্য পৃথক রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ অলরেডি exist করে, ফলে সেটা আর আলাদা করে চাওয়ার কিছু নেই। তাই এরা বোধ হয় চায় গোটা ভারতবর্ষ বাঙালীর নিয়মে চলুক। চায় দিওয়ালীকে কালীপুজো দিয়ে রিপ্লেস করতে, হোলিকে দোল দিয়ে রিপ্লেস করতে ইত্যাদি আরও অনেক কিছু। অর্থাৎ বাঙালীত্বের নামে আসলে গোটা ভারতবর্ষের উপরে বাঙালী সাম্রাজ্যবাদ কায়েম করার কথা বলে এই অর্গ্যানাইজেশনটি।

হওয়ার নয় জেনেও বাংলাপক্ষ কেন বলে এমন সব কথা? ওদের বিচ্ছিন্নতাবাদের সেন্ট্রিক ডিমাণ্ডটা কি? সেন্ট্রিক ডিমাণ্ডটা বোধ হয় অনেকটা এইরকম, "ভারতবর্ষ যদি বাঙালীর মত না হয়, তাহলে বাঙালীই বা ভারতবর্ষের মত হবে কেন?"

এবার প্রশ্ন হল, পশ্চিমবঙ্গের যদি ভারতবর্ষের প্রোটোকল না পোষায়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গ কি পশ্চিমবঙ্গ হিসেবেই in isolation একটা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে অবস্থান করুক বলে এরা চাইছে? নাকি পশ্চিমবঙ্গ ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্য কোনো স্বাধীন, সার্বভৌম দেশের সঙ্গে জয়েন করে যাক সেরকম কিছু চাইছে?

সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিতে হবে অন্যান্য নানা circumstantial evidences থেকে।

নীচের চারনম্বর ছবিতে দেখা যাচ্ছে বাংলাপক্ষের কর্ণধার ভদ্রলোক প্রায় জোড়হস্ত হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন একটি লালচে দাড়িওয়ালা, টুপি পরা, লম্বা ঝুলের পাঞ্জাবী পরা এক ব্যক্তির কাছে। ঐ অদ্ভুত পোশাকের লোকটি কি 'বাঙালী'? ঐ লালচে দাড়ি, ঐ টুপি, ঐ বেখাপ্পা লম্বা ঝুলের পাঞ্জাবী আর গোড়ালির ওপর পাজামা — এ কি বাঙালীর পোশাক?

কেউ কেউ আমাকে বলেছেন যে ইনি একটি moron এবং এঁকে অযথা গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। কিন্তু এখানে প্রথম ছবিটি এমন, যা দেখে সন্দেহ হতেই পারে যে ইনি আসলে একজন এজেন্ট বা চর। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে নানা আপাত-নির্বিষ কারণে হয়ত নিয়মিত liaise করে চলেন। ইনি পরিচিত মুখ, কিন্তু এমন চর যে আরও নেই এই পশ্চিমবঙ্গে, তারও কি কোনো গ্যারান্টি আছে? ফলে এঁকে একেবারে ইগনোর করা বোধ হয় উচিত হবে না।

এবার দেখা যাক্ ২য় ছবিটি। এই ব্যক্তি হিন্দির উপর খড়্গহস্ত, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন টুইট করে সকলকে হিন্দি দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, তখন ইনি সেই টুইটটিকে পজিটিভলি ইন্টারপ্রেট করছেন। প্রশ্ন হল, এই রকম ওপেন মাইণ্ডেড সব সময়েই থাকা বাঞ্ছনীয় নয় কি? ওঁর মনটা শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য খোলা, কিংবা বাংলাদেশীদের জন্য খোলা, আর অন্য সব ভারতীয়ের জন্য বন্ধ, বিষয়টা এমন কেন? তবে কি এটা একটা planned compulsion to be against India?

এই সব কিছু দেখে শুনে এই অনুমান করা কি খুব ভুল হবে যে বাংলাপক্ষের সেন্ট্রিক ডিমাণ্ড সম্ভবতঃ এই যে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের সঙ্গে বা পাকিস্তানের সঙ্গে জয়েন করে যাক্?

পাকিস্তানের কথা এল কেন? এল রাজ্যে উর্দু আগ্রাসন এবং উর্দুভাষীদের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি দেখে। কয়েক বছর আগেও কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের রাস্তাঘাটে বোরখা পরিহিত মহিলা এত দেখা যেত না, যতখানি এখন যায়।

এই প্রসঙ্গে মমতাদেবীর টুইটের ছবিটি দ্রষ্টব্য। ওমর আবদুল্লাকে তিনি বলছেন যে ওমরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে একসাথে কাজ করবেন তিনি। কি কাজ? দেশকে টুকরো করার কাজ? নাকি দেশ গড়ার কাজ? ওমর আবদুল্লা মনেপ্রাণে একজন ভারতীয় এবং জাতীয় সংহতির প্রচারক, একথা ক'জন মনে করেন? তাহলে সুদূর কাশ্মীরের ওমর আবদুল্লার সঙ্গে মিলে কি এমন কাজ করতে চান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী? পশ্চিমবঙ্গে উর্দুর প্রসারও কি তাঁদের সেই সম্মিলিত অ্যাজেণ্ডার অন্যতম? ভুললে চলবে না, উর্দু হল জম্মু কাশ্মীরের রাজ্যভাষা। (ক্রমশঃ)

Comments

Popular posts from this blog

রথযাত্রা: কুমুদরঞ্জন মল্লিক

কোভিশিল্ড কাহিনী

নব্য কথামালা: শেয়াল ও সারসের গল্প

SSC চাকরি বাতিল: যোগ্য - অযোগ্য বিভাজন আদৌ সম্ভব?