দুর্গাপুজোয় 'সরকারি চাঁদা': আশীর্বাদ না অভিশাপ?
https://www.facebook.com/story.php?story_fbid=332731913959896&id=100016692693608
বন্ধুদের কাছে অনুরোধ এই পোস্টটি নানা পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের কাছে দয়া করে পৌঁছে দিন। ফেসবুকে এটি দিয়েছিলাম গত ১৩ ই সেপ্টেম্বর।
মমতাদেবী ঘোষণা করেছেন যে দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে এবছর তিনি ২৮ কোটি টাকার অনুদান দিতে চলেছেন। প্রশ্ন হল, একথা হঠাৎ আজ ঘোষণা করলেন কেন? এমন তো নয় যে অনুদান সংস্কৃতি তিনি আজই সবেমাত্র শুরু করলেন এ রাজ্যে। পুজোয় অনুদান, পুরষ্কার ইত্যাদি তিনি দিচ্ছেন সেই ২০১৩ সাল থেকেই। তাহলে আজ কি এমন হল যে ঘটা করে অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করতে হল ওঁকে?
মমতাদেবীর এই ঘোষণার পিছনের কারণটা ধরতে গেলে এবং আজকের এই ঘোষণার জন্য পশ্চিমবঙ্গের তাবড় হিন্দুদের অদূর ভবিষ্যতে , I mean নির্বাচনের আগে কি মূল্য দিতে হতে পারে, এর ভবিষ্যৎ implications কি হতে পারে, তা বুঝতে গেলে কয়েকবছর পিছিয়ে যেতে হবে।
রাজ্যটা যেহেতু এখনও পশ্চিমবঙ্গ এবং তথাকথিত সেকুলার ভারতবর্ষের একটি অঙ্গরাজ্যমাত্র, তাই মুসলমানরা মক্কায় তীর্থ করতে যাবেন সেই উপলক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গে শতাধিক কোটি টাকা খরচ করে হজ্জ্ব হাউস বানালে যদি মমতাদেবীর বিরুদ্ধে ধর্মীয় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগটা আরও জোরদার হয় এবং হিঁদুরা যদি গোঁসা করে (ভুললে চলবে না, এখনও ভোটে জিততে গেলে ওঁর হিন্দুদেরকে লাগে, আর বছর বারো বাদে আর লাগবে না), সেইটা আন্দাজ করেই সম্ভবতঃ মমতাদেবী দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে ক্লাবগুলিকে ১ লক্ষ, দেড় লক্ষ, দু লক্ষ টাকা করে অনুদান দিতে শুরু করেছেন ২০১৩ সাল থেকেই।
ওঁর নিজের বিবেকের কাছে হিসাব শোধবোধ করে দিলেন কি? কিসের শোধবোধ? পরে বলছি।
আগে আসুন হিসাব করা যাক্, বছরে ১ লক্ষ টাকা করে কতগুলো পুজোকে দান করলে ১০০ কোটি টাকা হয়? ১০,০০০ পুজোকে। (১০০ কোটিকে ১ লক্ষ দিয়ে ভাগ করুন) এ রাজ্যে অনুদান সংস্কৃতি শুরু হয়েছে ২০১৩ থেকে। অর্থাৎ ২০১৩ থেকে শুরু করে ২০১৭ পর্যন্ত কেটেছে ৫ বছর। এই ৫ বছর ধরে যদি প্রতি বছর ২০০০ পুজোকে ১ লক্ষ টাকা করে, পুরস্কারই বলুন বা অনুদানই বলুন, দেওয়া হয়, তবে ৫ বছরে পুজো অনুদান উপলক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ১০০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে।
কি মনে হয় আপনাদের, গত ৫ বছরে ১০,০০০ পুজো বেআইনি সরকারি দাক্ষিণ্য পেয়েছে?
এবার আসুন দেখা যাক্ ২০১৩ থেকে ১৭ র মধ্যে যৎসামান্য কিন্তু বেআইনি পুজোদাক্ষিণ্য বিলিয়ে ঠিক কি শোধবোধ করলেন উনি। হঠাৎ ১০০ কোটির হিসাব দিচ্ছি কেন?
গত ২০১২ সালে মমতাদেবী নিউটাউনে মদিনাতুল হুজ্জ্বাজ নামে একটি প্রাসাদোপম হজ্জ্ব হাউস বানানোর জন্য NKDA র কাছ থেকে জমি কেনেন। অবশ্যই সরকারি পয়সায়। তারপর সেই জমিতে আরও ১০০ কোটি টাকার সরকারি অর্থ ব্যয় করে তিনি তৈরি করলেন মদিনাতুল হুজ্জ্বাজ।
https://maps.google.com/?cid=322197577807094437
এই মদিনাতুল হুজ্জ্বাজ হল শান্তিপূর্ণ ইসলামধর্মাবলম্বীদের জন্য নবনির্মিত আর একটি পাঁচতারা বাসস্থান। হজ্জ্ব করতে যাওয়ার সময়, বা অন্য যে কোনো সময় ওঁরা শান্তির বাণী প্রচার করার জন্য যাতে একত্রিত হতে পারেন, তার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুদানে নির্মিত হল এই প্রাসাদোপম অট্টালিকাটি। অর্থাৎ জমির দাম ও অট্টালিকা তৈরির খরচ একত্রিত করলে দেখা যাবে সংখ্যালঘুদের জন্য এই এলাহি বন্দোবস্ত করতে আমাদের করের টাকা থেকে ১০০ কোটিরও বহু অধিক ব্যয় করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর স্বৈরাচারি সিদ্ধান্তে। এগুলো সবই সংবিধানের স্পিরিটের অবমাননা ও আমাদের ট্যাক্সের টাকার গুণগার। এটি সংবিধানের ২৭ নম্বর ধারার violation.
https://www.google.co.in/amp/s/m.economictimes.com/news/politics-and-nation/rs100-cr-hajj-house-to-be-innaugrated-in-new-town-by-cm-mamata-banerjee/amp_articleshow/50756027.cms
ইতিপূর্বে CPM জমানায়ও ঐ একইভাবে সরকারি অর্থ ব্যয় করে এয়ারপোর্টের কাছে ভি আই পি রোডের উপর বানানো হয়েছিল প্রাসাদোপম আর একটি বিশাল হজ্জ্ব হাউস। কিন্তু সেটি সম্ভবতঃ আর ওঁদের প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। তাই গড়ে উঠল এই সুবিশাল মদিনাতুল হুজ্জ্বাজ।
এ থেকেই স্পষ্ট যে হজ্জ্ব করতে যাওয়ার লোক এরাজ্যে সংখ্যায় বাড়ছে কত দ্রুত। তাই প্রাসাদের প্রয়োজনও বাড়ছে। এর পরেও কি বুঝতে অসুবিধা হয়, যে কেন এ রাজ্যের নাম বদলে 'বাংলা' করতে চাওয়া হচ্ছে? ওঁরা আসলে ইসলামিক বাংলাদেশকে এদিকে extend করতে চাইছেন। এতদিন ধরে অবৈধ বাংলাদেশী মুসলমান অনুপ্রবেশের ফলে এদেশে জনবল তৈরি করেছেন। এবার সেই জনবলের ভিত্তিতে গোটা বাংলাদেশটারই অনুপ্রবেশ ঘটাতে চাইছেন ভারতবর্ষের পূর্বপ্রান্তের এই রাজ্যটিতে।
নামপরিবর্তন করে 'বাংলা' রাখতে চাওয়া হল প্রথম ধাপ। পরে সময় আসলে 'বাংলা'র সঙ্গে 'দেশ' কথাটাও জুড়ে দিতে চাইবেন কি?
যাই হোক্, সময়টা খেয়াল করুন। HIDCO র কাছ থেকে মদিনাতুল হুজ্জ্বাজের জন্য জমি কেনা হয় ২০১২ সালে। ঠিক তার পরের বছর থেকেই চালু হয় পুজো অনুদানও।
অর্থাৎ হজ্জ্ব হাউস বানানোর পিছনে যে টাকা মমতাদেবী সরকারি এক্সচেকার থেকে হয়ত ওয়াকফ বোর্ডের মাধ্যমে ব্যয় করেছেন একবারে, একথোকে, তার থেকে বহু কম পরিমাণে টাকা তিনি গত পাঁচ বছরে ব্যয় করেছেন বিভিন্ন দুর্গাপুজো কমিটিগুলোকে অল্প অল্প করে বিতরণ করে। মুসলমানরা রেজিমেন্টেড, তাই তাদের জন্য এককালীন থোক খরচ করে বানিয়ে দিচ্ছেন তাঁদের পায়ের তলার জমি, বাসস্থান।
আর হিন্দুরা ছোট ছোট অজস্র পুজোকমিটিতে বিভক্ত ও পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতায় রত। তাই তাদের সবাইকে একটু একটু করে দিলেই তারা more than happy. কাউকে এই প্রাইজ, তো কাউকে ঐ প্রাইজ। আর ওঁর এই অনুদান পেয়ে পুজোকমিটিগুলো আনন্দে উদ্বাহু। আজ পর্যন্ত একটা পুজো কমিটিও দেখলাম না, যাঁরা ওঁর ঐ দাক্ষিণ্যের টাকা গ্রহন করে দরিদ্রজনে সাথে সাথে বিতরণ করে দিল। করবে কি করে? পরের বছর থেকে আর পুজোর অনুমতিই পাবে না তাহলে।
অর্থাৎ মুসলমানদের জন্য capital expenditure, হজ্জ্ব হাউস তৈরির মাধ্যমে infrastructure তৈরি, আর হিন্দুদের জন্য revenue expenditure, অর্থাৎ যে খরচ শুধুই খরচ এবং যার ফলে মমতাদেবী revenue gain করবেন, অর্থাৎ ভোট পাবেন। কিন্তু তার ফলে হিন্দুদের কোনো permanent সুবিধা নেই। এই দুই ধরণের খরচে কিন্তু বিস্তর পার্থক্য।
অথচ ঐ হজ্জ্বহাউস যতখানি অনুচিত ও নন-সেকুলার, পুজো অনুদানও কিন্তু ততখানিই অনুচিত ও নন-সেকুলার। কিন্তু বোকাসোকা হিন্দুরা ঐ সামান্য অনুদানে হাত লাগিয়ে যাকে বলে ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করছেন। এই হল মমতাদেবীর শোধবোধ। অন্যায় সুবিধা মুসলমানদেরও দিয়েছেন, আবার হিন্দুদেরও। কিন্তু পরিমাণ ও তাৎপর্য তুলনীয়।
উপরন্তু, দুর্গাপুজার অনুদান যাঁরা নিচ্ছেন, তাঁরা বুঝতে পারছেন না যে ওই প্রাসাদোপম হজ্জ্ব হাউসগুলো সঠিক সময়ে ঠিক কিভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং বা ডায়রেক্ট অ্যাকশন ডে তে যারা অস্ত্রশস্ত্র হাতে কলকাতায় পৌঁছেছিল, তাদের কোনো নির্দিষ্ট থাকার জায়গা ছিল না। এখন এই হ্জ্জ্ব হাউসগুলো আছে। এবং এগুলো এয়ারপোর্টের নিকটবর্তী এবং বাংলাদেশ বর্ডার থেকে বিশেষ দূরেও নয়। তাছাড়াও এইসব অট্টালিকাসমূহ আরও কি কি সব কাজে ব্যবহৃত হতে পারবে, বা হয়ত already হচ্ছেও, তা আন্দাজ করা বোধ হয় শক্ত নয়, বিশেষ করে যে রাজ্যে খাগড়াগড় কাণ্ড ঘটে, যে রাজ্য নারী পাচার ও বাল্যবিবাহে দেশের মধ্যে এক নম্বরে, যে রাজ্য অস্ত্রপাচার, গোরুপাচার, জাল নোটের কারবারে দেশশ্রেষ্ঠ।
এই প্রসঙ্গে আর একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। এমন কোনো ধর্মীয় বা আইনি বিধান নেই যে দুর্গাপুজো কমিটিতে কোনো মুসলমান থাকতে পারবেন না। থাকতে পারেন এবং থাকেনও। চেতলা অগ্রণীর পুজো যেমন ববি হাকিমের পুজো। মুসলমানদের জন্য যদি মসজিদ তৈরি করতেন মমতাদেবী, তবে তাতে অমুসলমানদেরও প্রবেশাধিকার থাকত। কিন্তু ইসলাম ধর্মীয় নীতি অনুযায়ী হজ্জ্বহাউস এমন জায়গা, যেখানে অমুসলমান কারুর প্রবেশাধিকারই নেই। সেই ওঁদের নিয়ম। অর্থাৎ মদিনাতুল হুজ্জ্বাজের মত বিশাল, বিপুল, অজস্র, অসংখ্য মুসলমানকে accommodate করার ক্ষমতাসম্পন্ন অট্টালিকায় যদি সন্ত্রাসবাদীরা অস্ত্রশস্ত্র সহযোগে জড়ো হয়, তখন কিন্তু অমুসলমান পুলিশ বাহিনীও সেখানে প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হবে। তাকেও ওঁরা ওঁদের ধর্মে হস্তক্ষেপ বলে দাবী করবেন। এমনকি এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ হওয়াও theoretically অসম্ভব নয়।
প্রশ্ন হল, সেরকম সব পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য আমরা, পশ্চিমবঙ্গবাসী হিন্দুরা প্রস্তুত আছি কি?
দুর্গাপুজোর অনুদানের টাকা উৎসবের আনন্দে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু মদিনাতুল হুজ্জ্বাজের পিছনে সরকারের ব্যয় করা আপনার আমার ট্যাক্সের শতাধিক কোটি টাকা যে কত গুণ রিটার্ণ দেওয়ার ক্ষমতা রাখে, তা আন্দাজ করতে খুব বেশী কল্পনাশক্তির প্রয়োজন বোধ হয় নেই।
দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে মমতাদেবীর নন-সেকুলার দাক্ষিণ্য গ্রহনের আনন্দধারা যদি বাঙালী হিন্দুর ধমনী থেকে ফিনকি দিয়ে ভাগীরথী হুগলি দিয়ে ছুটতে শুরু করে, সেদিন পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা, পারবেন তো ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে?
মমতাদেবী কি মনে করছেন মদিনাতুল হুজ্জ্বাজের খরচ ২০১৩ থেকে ২০১৭ র মধ্যে দুর্গাপুজোর অনুদানের মাধ্যমে শোধবোধ হয়ে গেছে? তাহলে কি এ বছরের এই ২৮ কোটির গল্প দিয়ে অন্য কোনো নতুন হিসেবের অক্ষোপটল পুস্তিকার উদ্বোধন হল? অপেক্ষা করে থাকুন দেখার জন্য, ২০২১ এর নির্বাচনের আগে শান্তিপূর্ণ ইসলামধর্মাবলম্বীদের জন্য মমতাদেবীর তরফ থেকে রাজ্যবাসীর করের টাকায় আবার কি বিশাল উপহার স্পনসর করা হয়!
ওঁকে যতদূর চিনেছি, তাতে আমি প্রায় নিশ্চিত যে এই অকিঞ্চিৎকর ২৮ কোটির আনন্দ উপভোগ করার বদলে অমূল্য ক্ষতি স্বীকার করতে হবে পশ্চিমবঙ্গবাসী বাঙালী হিন্দুকে ২০২১ এর নির্বাচনের আগে। তারই সলতে পাকানো শুরু করলেন মমতাদেবী এই ২৮ কোটির গল্প দিয়ে।
প্রতিটি দুর্গাপুজো কমিটির সঙ্গে ছিনেজোঁকের মত লেগে রয়েছে মমতাদেবীর দলের নেতৃবৃন্দ। তাই পুজো কমিটিগুলো না পারবে অনুদান প্রত্যাখ্যান করতে, না পারবে খুশী মনে তা গ্রহন করতে। সামান্য এক, দু' লক্ষ টাকার জন্য নিজেদের স্বাধীনতা, প্রাণের আনন্দ বিসর্জন না দিয়ে রাজ্যবাসীর আর কোনো উপায় নেই।
মমতাদেবীর থাবারমধ্যে স্বেচ্ছাপ্রবেশ করেছি আমরা। বেরোতে গেলেও বেরোতে হবে স্বেচ্ছায়ই। এবং তার জন্য চাই শুধু মনের জোরই নয়, পারস্পরিক সঙ্ঘবদ্ধতা ও লড়াইয়ের প্রস্তুতি। এ ব্যাপারে আমার আছে কয়েকটি ছোট্ট, সামান্য পরামর্শ।
—পুজো অনুদানের টাকা পুজোর খরচে দয়া করে খরচ করবেন না। ওঁর অনুদানের টাকা ধরে রাখুন পুজো কমিটির সঞ্চয়ের খাতায়।
—সেই সঙ্গে পুজো কমিটির সদস্যেরা শুরু করুন নিয়মিত শরীরচর্চা।
—এরিয়াভিত্তিকভাবে একাধিক পুজোকমিটি মিলে এক একটি ট্রাস্ট গঠন করুন। United We Stand. সেই ট্রাস্টের নামে বহু ধর্ম-সাংস্কৃতিক ও merchandising activities করতে পারা যাবে যেগুলোকে আইনিভাবে বাধা দেওয়া যাবে না।
বন্ধুদের কাছে অনুরোধ এই পোস্টটি নানা পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের কাছে দয়া করে পৌঁছে দিন। ফেসবুকে এটি দিয়েছিলাম গত ১৩ ই সেপ্টেম্বর।
মমতাদেবী ঘোষণা করেছেন যে দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে এবছর তিনি ২৮ কোটি টাকার অনুদান দিতে চলেছেন। প্রশ্ন হল, একথা হঠাৎ আজ ঘোষণা করলেন কেন? এমন তো নয় যে অনুদান সংস্কৃতি তিনি আজই সবেমাত্র শুরু করলেন এ রাজ্যে। পুজোয় অনুদান, পুরষ্কার ইত্যাদি তিনি দিচ্ছেন সেই ২০১৩ সাল থেকেই। তাহলে আজ কি এমন হল যে ঘটা করে অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করতে হল ওঁকে?
মমতাদেবীর এই ঘোষণার পিছনের কারণটা ধরতে গেলে এবং আজকের এই ঘোষণার জন্য পশ্চিমবঙ্গের তাবড় হিন্দুদের অদূর ভবিষ্যতে , I mean নির্বাচনের আগে কি মূল্য দিতে হতে পারে, এর ভবিষ্যৎ implications কি হতে পারে, তা বুঝতে গেলে কয়েকবছর পিছিয়ে যেতে হবে।
রাজ্যটা যেহেতু এখনও পশ্চিমবঙ্গ এবং তথাকথিত সেকুলার ভারতবর্ষের একটি অঙ্গরাজ্যমাত্র, তাই মুসলমানরা মক্কায় তীর্থ করতে যাবেন সেই উপলক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গে শতাধিক কোটি টাকা খরচ করে হজ্জ্ব হাউস বানালে যদি মমতাদেবীর বিরুদ্ধে ধর্মীয় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগটা আরও জোরদার হয় এবং হিঁদুরা যদি গোঁসা করে (ভুললে চলবে না, এখনও ভোটে জিততে গেলে ওঁর হিন্দুদেরকে লাগে, আর বছর বারো বাদে আর লাগবে না), সেইটা আন্দাজ করেই সম্ভবতঃ মমতাদেবী দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে ক্লাবগুলিকে ১ লক্ষ, দেড় লক্ষ, দু লক্ষ টাকা করে অনুদান দিতে শুরু করেছেন ২০১৩ সাল থেকেই।
ওঁর নিজের বিবেকের কাছে হিসাব শোধবোধ করে দিলেন কি? কিসের শোধবোধ? পরে বলছি।
আগে আসুন হিসাব করা যাক্, বছরে ১ লক্ষ টাকা করে কতগুলো পুজোকে দান করলে ১০০ কোটি টাকা হয়? ১০,০০০ পুজোকে। (১০০ কোটিকে ১ লক্ষ দিয়ে ভাগ করুন) এ রাজ্যে অনুদান সংস্কৃতি শুরু হয়েছে ২০১৩ থেকে। অর্থাৎ ২০১৩ থেকে শুরু করে ২০১৭ পর্যন্ত কেটেছে ৫ বছর। এই ৫ বছর ধরে যদি প্রতি বছর ২০০০ পুজোকে ১ লক্ষ টাকা করে, পুরস্কারই বলুন বা অনুদানই বলুন, দেওয়া হয়, তবে ৫ বছরে পুজো অনুদান উপলক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ১০০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে।
কি মনে হয় আপনাদের, গত ৫ বছরে ১০,০০০ পুজো বেআইনি সরকারি দাক্ষিণ্য পেয়েছে?
এবার আসুন দেখা যাক্ ২০১৩ থেকে ১৭ র মধ্যে যৎসামান্য কিন্তু বেআইনি পুজোদাক্ষিণ্য বিলিয়ে ঠিক কি শোধবোধ করলেন উনি। হঠাৎ ১০০ কোটির হিসাব দিচ্ছি কেন?
গত ২০১২ সালে মমতাদেবী নিউটাউনে মদিনাতুল হুজ্জ্বাজ নামে একটি প্রাসাদোপম হজ্জ্ব হাউস বানানোর জন্য NKDA র কাছ থেকে জমি কেনেন। অবশ্যই সরকারি পয়সায়। তারপর সেই জমিতে আরও ১০০ কোটি টাকার সরকারি অর্থ ব্যয় করে তিনি তৈরি করলেন মদিনাতুল হুজ্জ্বাজ।
https://maps.google.com/?cid=322197577807094437
এই মদিনাতুল হুজ্জ্বাজ হল শান্তিপূর্ণ ইসলামধর্মাবলম্বীদের জন্য নবনির্মিত আর একটি পাঁচতারা বাসস্থান। হজ্জ্ব করতে যাওয়ার সময়, বা অন্য যে কোনো সময় ওঁরা শান্তির বাণী প্রচার করার জন্য যাতে একত্রিত হতে পারেন, তার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুদানে নির্মিত হল এই প্রাসাদোপম অট্টালিকাটি। অর্থাৎ জমির দাম ও অট্টালিকা তৈরির খরচ একত্রিত করলে দেখা যাবে সংখ্যালঘুদের জন্য এই এলাহি বন্দোবস্ত করতে আমাদের করের টাকা থেকে ১০০ কোটিরও বহু অধিক ব্যয় করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর স্বৈরাচারি সিদ্ধান্তে। এগুলো সবই সংবিধানের স্পিরিটের অবমাননা ও আমাদের ট্যাক্সের টাকার গুণগার। এটি সংবিধানের ২৭ নম্বর ধারার violation.
https://www.google.co.in/amp/s/m.economictimes.com/news/politics-and-nation/rs100-cr-hajj-house-to-be-innaugrated-in-new-town-by-cm-mamata-banerjee/amp_articleshow/50756027.cms
ইতিপূর্বে CPM জমানায়ও ঐ একইভাবে সরকারি অর্থ ব্যয় করে এয়ারপোর্টের কাছে ভি আই পি রোডের উপর বানানো হয়েছিল প্রাসাদোপম আর একটি বিশাল হজ্জ্ব হাউস। কিন্তু সেটি সম্ভবতঃ আর ওঁদের প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। তাই গড়ে উঠল এই সুবিশাল মদিনাতুল হুজ্জ্বাজ।
এ থেকেই স্পষ্ট যে হজ্জ্ব করতে যাওয়ার লোক এরাজ্যে সংখ্যায় বাড়ছে কত দ্রুত। তাই প্রাসাদের প্রয়োজনও বাড়ছে। এর পরেও কি বুঝতে অসুবিধা হয়, যে কেন এ রাজ্যের নাম বদলে 'বাংলা' করতে চাওয়া হচ্ছে? ওঁরা আসলে ইসলামিক বাংলাদেশকে এদিকে extend করতে চাইছেন। এতদিন ধরে অবৈধ বাংলাদেশী মুসলমান অনুপ্রবেশের ফলে এদেশে জনবল তৈরি করেছেন। এবার সেই জনবলের ভিত্তিতে গোটা বাংলাদেশটারই অনুপ্রবেশ ঘটাতে চাইছেন ভারতবর্ষের পূর্বপ্রান্তের এই রাজ্যটিতে।
নামপরিবর্তন করে 'বাংলা' রাখতে চাওয়া হল প্রথম ধাপ। পরে সময় আসলে 'বাংলা'র সঙ্গে 'দেশ' কথাটাও জুড়ে দিতে চাইবেন কি?
যাই হোক্, সময়টা খেয়াল করুন। HIDCO র কাছ থেকে মদিনাতুল হুজ্জ্বাজের জন্য জমি কেনা হয় ২০১২ সালে। ঠিক তার পরের বছর থেকেই চালু হয় পুজো অনুদানও।
অর্থাৎ হজ্জ্ব হাউস বানানোর পিছনে যে টাকা মমতাদেবী সরকারি এক্সচেকার থেকে হয়ত ওয়াকফ বোর্ডের মাধ্যমে ব্যয় করেছেন একবারে, একথোকে, তার থেকে বহু কম পরিমাণে টাকা তিনি গত পাঁচ বছরে ব্যয় করেছেন বিভিন্ন দুর্গাপুজো কমিটিগুলোকে অল্প অল্প করে বিতরণ করে। মুসলমানরা রেজিমেন্টেড, তাই তাদের জন্য এককালীন থোক খরচ করে বানিয়ে দিচ্ছেন তাঁদের পায়ের তলার জমি, বাসস্থান।
আর হিন্দুরা ছোট ছোট অজস্র পুজোকমিটিতে বিভক্ত ও পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতায় রত। তাই তাদের সবাইকে একটু একটু করে দিলেই তারা more than happy. কাউকে এই প্রাইজ, তো কাউকে ঐ প্রাইজ। আর ওঁর এই অনুদান পেয়ে পুজোকমিটিগুলো আনন্দে উদ্বাহু। আজ পর্যন্ত একটা পুজো কমিটিও দেখলাম না, যাঁরা ওঁর ঐ দাক্ষিণ্যের টাকা গ্রহন করে দরিদ্রজনে সাথে সাথে বিতরণ করে দিল। করবে কি করে? পরের বছর থেকে আর পুজোর অনুমতিই পাবে না তাহলে।
অর্থাৎ মুসলমানদের জন্য capital expenditure, হজ্জ্ব হাউস তৈরির মাধ্যমে infrastructure তৈরি, আর হিন্দুদের জন্য revenue expenditure, অর্থাৎ যে খরচ শুধুই খরচ এবং যার ফলে মমতাদেবী revenue gain করবেন, অর্থাৎ ভোট পাবেন। কিন্তু তার ফলে হিন্দুদের কোনো permanent সুবিধা নেই। এই দুই ধরণের খরচে কিন্তু বিস্তর পার্থক্য।
অথচ ঐ হজ্জ্বহাউস যতখানি অনুচিত ও নন-সেকুলার, পুজো অনুদানও কিন্তু ততখানিই অনুচিত ও নন-সেকুলার। কিন্তু বোকাসোকা হিন্দুরা ঐ সামান্য অনুদানে হাত লাগিয়ে যাকে বলে ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করছেন। এই হল মমতাদেবীর শোধবোধ। অন্যায় সুবিধা মুসলমানদেরও দিয়েছেন, আবার হিন্দুদেরও। কিন্তু পরিমাণ ও তাৎপর্য তুলনীয়।
উপরন্তু, দুর্গাপুজার অনুদান যাঁরা নিচ্ছেন, তাঁরা বুঝতে পারছেন না যে ওই প্রাসাদোপম হজ্জ্ব হাউসগুলো সঠিক সময়ে ঠিক কিভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং বা ডায়রেক্ট অ্যাকশন ডে তে যারা অস্ত্রশস্ত্র হাতে কলকাতায় পৌঁছেছিল, তাদের কোনো নির্দিষ্ট থাকার জায়গা ছিল না। এখন এই হ্জ্জ্ব হাউসগুলো আছে। এবং এগুলো এয়ারপোর্টের নিকটবর্তী এবং বাংলাদেশ বর্ডার থেকে বিশেষ দূরেও নয়। তাছাড়াও এইসব অট্টালিকাসমূহ আরও কি কি সব কাজে ব্যবহৃত হতে পারবে, বা হয়ত already হচ্ছেও, তা আন্দাজ করা বোধ হয় শক্ত নয়, বিশেষ করে যে রাজ্যে খাগড়াগড় কাণ্ড ঘটে, যে রাজ্য নারী পাচার ও বাল্যবিবাহে দেশের মধ্যে এক নম্বরে, যে রাজ্য অস্ত্রপাচার, গোরুপাচার, জাল নোটের কারবারে দেশশ্রেষ্ঠ।
এই প্রসঙ্গে আর একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। এমন কোনো ধর্মীয় বা আইনি বিধান নেই যে দুর্গাপুজো কমিটিতে কোনো মুসলমান থাকতে পারবেন না। থাকতে পারেন এবং থাকেনও। চেতলা অগ্রণীর পুজো যেমন ববি হাকিমের পুজো। মুসলমানদের জন্য যদি মসজিদ তৈরি করতেন মমতাদেবী, তবে তাতে অমুসলমানদেরও প্রবেশাধিকার থাকত। কিন্তু ইসলাম ধর্মীয় নীতি অনুযায়ী হজ্জ্বহাউস এমন জায়গা, যেখানে অমুসলমান কারুর প্রবেশাধিকারই নেই। সেই ওঁদের নিয়ম। অর্থাৎ মদিনাতুল হুজ্জ্বাজের মত বিশাল, বিপুল, অজস্র, অসংখ্য মুসলমানকে accommodate করার ক্ষমতাসম্পন্ন অট্টালিকায় যদি সন্ত্রাসবাদীরা অস্ত্রশস্ত্র সহযোগে জড়ো হয়, তখন কিন্তু অমুসলমান পুলিশ বাহিনীও সেখানে প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হবে। তাকেও ওঁরা ওঁদের ধর্মে হস্তক্ষেপ বলে দাবী করবেন। এমনকি এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ হওয়াও theoretically অসম্ভব নয়।
প্রশ্ন হল, সেরকম সব পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য আমরা, পশ্চিমবঙ্গবাসী হিন্দুরা প্রস্তুত আছি কি?
দুর্গাপুজোর অনুদানের টাকা উৎসবের আনন্দে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু মদিনাতুল হুজ্জ্বাজের পিছনে সরকারের ব্যয় করা আপনার আমার ট্যাক্সের শতাধিক কোটি টাকা যে কত গুণ রিটার্ণ দেওয়ার ক্ষমতা রাখে, তা আন্দাজ করতে খুব বেশী কল্পনাশক্তির প্রয়োজন বোধ হয় নেই।
দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে মমতাদেবীর নন-সেকুলার দাক্ষিণ্য গ্রহনের আনন্দধারা যদি বাঙালী হিন্দুর ধমনী থেকে ফিনকি দিয়ে ভাগীরথী হুগলি দিয়ে ছুটতে শুরু করে, সেদিন পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা, পারবেন তো ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে?
মমতাদেবী কি মনে করছেন মদিনাতুল হুজ্জ্বাজের খরচ ২০১৩ থেকে ২০১৭ র মধ্যে দুর্গাপুজোর অনুদানের মাধ্যমে শোধবোধ হয়ে গেছে? তাহলে কি এ বছরের এই ২৮ কোটির গল্প দিয়ে অন্য কোনো নতুন হিসেবের অক্ষোপটল পুস্তিকার উদ্বোধন হল? অপেক্ষা করে থাকুন দেখার জন্য, ২০২১ এর নির্বাচনের আগে শান্তিপূর্ণ ইসলামধর্মাবলম্বীদের জন্য মমতাদেবীর তরফ থেকে রাজ্যবাসীর করের টাকায় আবার কি বিশাল উপহার স্পনসর করা হয়!
ওঁকে যতদূর চিনেছি, তাতে আমি প্রায় নিশ্চিত যে এই অকিঞ্চিৎকর ২৮ কোটির আনন্দ উপভোগ করার বদলে অমূল্য ক্ষতি স্বীকার করতে হবে পশ্চিমবঙ্গবাসী বাঙালী হিন্দুকে ২০২১ এর নির্বাচনের আগে। তারই সলতে পাকানো শুরু করলেন মমতাদেবী এই ২৮ কোটির গল্প দিয়ে।
প্রতিটি দুর্গাপুজো কমিটির সঙ্গে ছিনেজোঁকের মত লেগে রয়েছে মমতাদেবীর দলের নেতৃবৃন্দ। তাই পুজো কমিটিগুলো না পারবে অনুদান প্রত্যাখ্যান করতে, না পারবে খুশী মনে তা গ্রহন করতে। সামান্য এক, দু' লক্ষ টাকার জন্য নিজেদের স্বাধীনতা, প্রাণের আনন্দ বিসর্জন না দিয়ে রাজ্যবাসীর আর কোনো উপায় নেই।
মমতাদেবীর থাবারমধ্যে স্বেচ্ছাপ্রবেশ করেছি আমরা। বেরোতে গেলেও বেরোতে হবে স্বেচ্ছায়ই। এবং তার জন্য চাই শুধু মনের জোরই নয়, পারস্পরিক সঙ্ঘবদ্ধতা ও লড়াইয়ের প্রস্তুতি। এ ব্যাপারে আমার আছে কয়েকটি ছোট্ট, সামান্য পরামর্শ।
—পুজো অনুদানের টাকা পুজোর খরচে দয়া করে খরচ করবেন না। ওঁর অনুদানের টাকা ধরে রাখুন পুজো কমিটির সঞ্চয়ের খাতায়।
—সেই সঙ্গে পুজো কমিটির সদস্যেরা শুরু করুন নিয়মিত শরীরচর্চা।
—এরিয়াভিত্তিকভাবে একাধিক পুজোকমিটি মিলে এক একটি ট্রাস্ট গঠন করুন। United We Stand. সেই ট্রাস্টের নামে বহু ধর্ম-সাংস্কৃতিক ও merchandising activities করতে পারা যাবে যেগুলোকে আইনিভাবে বাধা দেওয়া যাবে না।
Comments
Post a Comment