'সততার প্রতীক'এর প্রতীকি সততা: ৫৫ দফা প্রশ্ন ও উত্তর

সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রাজ্যে CBI কে তদন্ত করতে দেবেন না বলে ঘোষণা করেছেন।

১. তদন্ত করা থেকে CBI কে আটকানোর আইনগত ক্ষমতা কোনো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কি আছে?

না, নেই।মমতারও নেই, চন্দ্রবাবু নাইডুরও নেই।

২. তাহলে কেন নাইডু আর মমতার এই সদর্প ঘোষণা?

রাজনৈতিক গিমিক হিসেবে এবং যে ক্ষমতা বাস্তবে ওঁদের আদৌ নেই সেই ক্ষমতাও আছে, এই ‘মিথ্যে প্রদর্শন' করে ‘অসীম ক্ষমতার অধিকারী' হিসেবে পাবলিকের ভয় ও awe capture করার জন্য। “শুনেছ, দিদি বলেছে CBI কেও ঢুকতে দেবে না! দিদির ক-ত ক্ষমতা”—জনগণের মনে এইধরনের ইমপ্যাক্ট ক্রিয়েট করাই মমতাদেবীর একমাত্র উদ্দেশ্য।

৩. তাহলে বাস্তবে CBI কে তদন্ত করতে না দেওয়ার ক্ষমতা মুখ্যমন্ত্রীর নেই; তাই কি?

ঠিক তাই। কিন্তু যে ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই মন্ত্রীদের আছে তা হল CBI তদন্তে CBI অফিসারদের সঙ্গে সহযোগিতা না করার জন্য রাজ্যের পুলিশ ও executive দের অনুমতি না  দেওয়ার ক্ষমতা। Please kindly note, লিখিত অর্ডার দেওয়ার ক্ষমতা কিন্তু মন্ত্রীর নেই। সাংবিধানিকভাবে verbal বা লিখিত কোনো অর্ডার দেওয়ার ক্ষমতাই মন্ত্রীর নেই। অবিশ্বাস্য লাগছে? এটাই সত্যি।

রাজ্যে কর্মরত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের অর্থাৎ IAS, IPSদের  বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য CBI কে সংশ্লিষ্ট রাজ্যসরকারের অনুমতি নিতে হয়। সাধারণ ভাবে যে কোনো রাজ্যসরকার একটামাত্র general permission issue করে রাখে যেটা সব case এ প্রযোজ্য হয়। কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে রাজ্যসরকার সেই general permission withdraw করে নিতে পারে। তখন CBI কে case to case ভিত্তিতে permission চাইতে হয় এবং তার উত্তরে রাজ্যসরকারকে তাদের জবাব ৪৮ ঘন্টার মধ্যে CBI কে জানিয়ে দিতে হয়। অনুমতি না দেওয়ার কোনো বিশেষ কারণ না থাকলে রাজ্য সরকার বাধ্য থাকে সেই সংশ্লিষ্ট case এ অনুমতি প্রদান করতে। স্বাভাবিক নিয়মে “কোনো ক্ষেত্রেই অনুমতি দেব না” বলার এক্তিয়ার রাজ্য সরকারের নেই। অনুমতি না দিতে হলে case to case তার কারণ ব্যক্ত করতে রাজ্য সরকার বাধ্য থাকে। এইখানেই নাইডু বা মমতা তাঁদের রাজনৈতিক খেলাটা খেলছেন। Case to case হিসেবে অনুমতি আটকাতে পারবেন না জেনেও, শুধু general permission withdraw করে নেওয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাইছেন। তাঁদের ভরসা, “সাধারণ মানুষ কি আর case to case কি হচ্ছে তার খবর রাখবে”?

৪. Executiveদের অর্ডার করার ক্ষমতা যদি আইনতঃ মন্ত্রীদের না-ই থাকে, তাহলে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীসহ মন্ত্রীদের ক্ষমতার প্রকৃত উৎস কোথায়?

সাংবিধানিকভাবে মন্ত্রীরা তাঁদের বিবেচনাধীন যে কোনো বিষয়ে verbal বা লিখিত recommendation তাঁদের অধীনস্থ executiveদের দিতে পারেন। খেয়াল করুন, order নয়, recommendation. Please kindly note, আমাদের সংবিধান অনুযায়ী, শুধু লিখিত নয়, মন্ত্রীর এমনকি verbal recommendationও executive দের উপর binding কেবলমাত্র যদি প্রমাণ করা যায় যে সেই verbal recommendation বা বাস্তবপক্ষে অর্ডার সেই executive কে আদৌ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীদের যে কোনো recommendation মানতে অধীনস্থ executiveরা আইনতঃ বাধ্য; সে অর্ডার বেআইনি হলেও। Executive যদি সে অর্ডার implement না করে, তবে সে সংবিধান অবমাননার দায়ে পড়বে। তার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে, আর মমতাদেবীর মত মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে চাকরি ক্ষেত্রে তার চরম harassment নিশ্চিত।

৫. কিন্তু মন্ত্রীর বেআইনি recommendation পালন করাও তো অন্যায়। সেই অন্যায়ের শাস্তি কে পাবে? যে বেআইনি recommendation দিল সেই মন্ত্রী নাকি যে executive অফিসার মন্ত্রীর বেআইনি recommendation implement করল সে?

অবশ্যই যে implement করল সেই Executive officer. মন্ত্রীর কোনো শাস্তি হবে না। ভারতের সংবিধান জনপ্রতিনিধিদের দিয়েছে দায়িত্বহীন ক্ষমতা আর executive দের দিয়েছে ক্ষমতাহীন দায়িত্ব। Executive দের অবস্থা হল “এগোলে রাম, পিছলে রাবণ”। জনপ্রতিনিধির কথা না শুনলে সংবিধান অবমাননার দায়ে পড়বেন, আর বেআইনি অর্ডার শুনলে আইনি ঝঞ্ঝাটে পড়তে পারেন। এবং মমতা এই সুযোগেরই পূর্ণ সদ্ব্যবহার করছেন। Executiveদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে একের পর এক সর্বনাশা পদক্ষেপ নিয়ে চলেছেন। উনি জানেন, কোনো দায় ওনার ওপর আসবে না।

৬. CAG কে প্রসেস অডিট করতে দিচ্ছেন না মমতা। কেন?

কারণ CAG প্রসেস অডিটে সমস্ত financial defalcation ধরা পড়ে যাবে। অডিট সেই সব প্রশ্ন তুলবে যেসব প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থ দফতর দিতে পারবে না। তবে তাতে মুখ্যমন্ত্রীর কিচ্ছু হবে না। কাঠগড়ায় উঠবেন রাজ্যের অর্থসচিব। CAG কে আটকে মমতা আসলে বাঁচাচ্ছেন অফিসারদের, যাঁরা ওঁর সমস্ত বেআইনি recommendation implement করে চলেছেন। ঠিক এইভাবেই মমতা রাজ্যের প্রায় সমস্ত আমলাদের দিয়ে বেআইনি কাজ করিয়ে তাদেরকে হাতের মুঠোয় পুরে রেখেছেন। যদি কোনো অফিসার এমনকি দিল্লিতে গিয়েও ট্যাঁ ফোঁ করেন, তখন মমতা নিজেই সেই সব বেআইনি কাজের জন্য সেই অফিসারকে ফাঁসিয়ে দেবেন। সুতরাং, রাজ‌্যের আমলারা কেন মমতার এত বশংবদ, তা এবার বোঝা গেল? ওঁরা সব গিলোটিনে মাথা ঢুকিয়েই বসে আছেন, এবং হ্যান্ডল মমতাদেবীর হাতে।

৭. এবার বোঝা গেল State Cadre এর IAS দেরকে Centre যদি ডেকেও পাঠায়, কেন অফিসিয়ালি কোনো true statement ই দেবেন না অফিসাররা?

কারণ সেক্ষেত্রে তাঁরা যেসব বেআইনি কাজ করেছেন মন্ত্রী(দে)র recommendation এ, সেগুলোর জন্য সঙ্গে সঙ্গে তাঁদেরকে নিয়ে যাওয়া হবে আদালতে এবং তাঁদের চাকরির বারোটা বাজবে। তাহলে বোঝা গেল কোন্ ফাঁস তাঁদের গলায় আটকে আছে? বশংবদ না হয়ে তাঁদের উপায় নেই।

৮. সারদা, অন্যান্য চিটফান্ড, নারদা ইত্যাদি তদন্তের গতি এত শ্লথ কেন? কোন্ সাহসেই বা মমতা CBI এর বিষয়ে এত আক্রমণাত্মক?

কারণ আছে। কয়েকটা উদাহরণ দিই। এরাজ্যে চিটফান্ডের money laundering  যত হয়েছে, তার বেশিরভাগ প্রমাণই সম্ভবতঃ লোপাট করা হয়েছে। অর্থাৎ কারুর বিরুদ্ধেই খুব সলিড চার্জ আনা CBI এর পক্ষে সম্ভব কিনা, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আর যদি আনতেও পারে, তাহলেও পারবে মমতাদেবীর দলের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে। কিন্তু মমতা জানেন যে তাঁর দল বলে কিছু নেই। তিনিই দল। তাঁর দলের সবাই যদি জেলে চলে যায়, তাহলেও তাঁর নিজের ভাবমূর্তি টোল খাবে না। আর তাঁর নিজের ভাবমূর্তি intact থাকলেই যে কোনো দিন তৃণমূল দলও তিনি নতুন করে গড়তে পারবেন। এই ভরসাতেই মমতা আক্রমণাত্মক। মমতার নিজের গায়ে আইনসম্মত উপায়ে যতক্ষণ পর্যন্ত না দুর্নীতির কালির আঁচড় পড়ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত মমতার বা তৃণমূল কারুরই কোনো ক্ষতি নেই। এবং মমতাদেবী বোধ হয় এতদিন জোরের সঙ্গে বিশ্বাস করতেন যে CBI যাই করুক, ওঁকে ছুঁতে পারবে না।

৯. মমতার এমন কনফিডেন্সের কারণ কি?

কারণ বোধ হয় আছে। কোনো ফিনান্সিয়াল ডিলে কেবল মুখের কথা ছাড়া  মমতাদেবীর আর কোনরকম সরাসরি involvement সম্ভবতঃ  কিছু থাকে না। এবং সেই মুখের কথা টুকুও বোধ করি উনি বলেন একদম ওঁর core sector এ। উপরন্তু, যতদূর জানি, মমতাদেবী চট্ করে কোথাও সই করেন না। She’s very careful to avoid documentation.

১০. কিন্তু সরকারি ট্রেজারির টাকা নয়ছয় নিয়ে অডিট যদি প্রশ্ন তোলে তবে মুখ্যমন্ত্রীর উত্তর দায়িত্ব থাকবে না?

মোটেই থাকবে না। যদি defalcation of Government Fund প্রমাণিতও হয়, তাহলেও তাঁর জন্য মমতা বা তার পরিবারকে দায়ী করা যাবে না, ফাঁসবেন রাজ্যের finance secretary. FS যদি CM এর recommendation এও সরকারি টাকা নয়ছয় করে থাকেন, অর্থাৎ এক অ্যাকাউন্টের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে খরচ করে থাকেন, তবুও তার আইনগত দায় CM এর নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রমাণ করা যায় যে CM নিজে ব্যক্তিগতভাবে সেই নয়ছয়ের beneficiary. ততক্ষণ পর্যন্ত আইনগত সব দায় এরাজ্যের অর্থসচিবের। ধরা পড়লে CM বলতেই পারেন যে “আমি recommend করেছিলাম তো কি হয়েছে? আইন জানার কথা আপনার। আপনি তো আমাকে বলেন নি।“

আজ্ঞে হ্যাঁ, আমাদের সংবিধান জনপ্রতিনিধিদের দিয়েছে সেই নিঃশর্ত দায়িত্বহীন ক্ষমতা। আর executiveদের দিয়েছে ক্ষমতাহীন দায়িত্ব। তাই executive দের জন্য আছে 'শাঁখের করাত'। যদি তাঁরা মন্ত্রীর recommendation implement না করেন, তাহলে সংবিধান অবমাননার দায়ে পড়বেন, আর যদি মন্ত্রীর বেআইনি recommendation implement করেন, তাহলেও ফাঁসলে ফাঁসবেন তিনিই, মন্ত্রী না। This is our Constitutional anomaly. আর এই anomalyরই পরিপূর্ণ অপব্যবহার করেন মমতা, নাইডুর মত আপাদমস্তক অসৎ রাজনীতিকরা।

১১. তাহলে এই 'শাঁখের করাত' এর মধ্যে আমলারা চলেন কি করে? ওঁদের তো প্রতিদিন ফাঁসবার কথা।

পাওয়ার করিডরে চলতে চলতে আগুনের ওপর দিয়ে হাঁটা ওঁদের অভ্যেস হয়ে যায়। ওঁরা একটা hierarchy maintain করে চলেন। সেটাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওঁদের পিঠ বাঁচাতে সাহায্য করে। Higher authority বা lower authorityর কোর্টে বল ঠেলে দিয়ে দিয়ে ওঁরা নিজেদের চাকরি বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে চলেন। সেই কারণেই সম্ভবতঃ সরকারি sector এ আমরা দেখতে পাই দীর্ঘসূত্রিতা। মমতার আমলে দীর্ঘসূত্রিতা কমেছে কারণ মমতা recklessly যা খুশি order করেন। আর সেই অর্ডার তামিল না করলেই অফিসারদের নিয়ে লোফালুফি খেলার ভয় দেখান। আমার hunch হল, একবার মমতা দেবী নির্বাচনে হারুন, তারপর রাজ্যের এই বশংবদ আমলাদের মধ্যেই কারুর কারুর থেকে হয়ত শোনা যাবে বিষ্ফোরক সব মন্তব্য। পশ্চিমবঙ্গের আমলারা বাস্তবে এই মুহূর্তে furnace এর মধ্যে বাস করছেন।

১২. তাহলে কি মন্ত্রীরা ever-protected? তাঁদের ফাঁসার কি কোনো সম্ভাবনাই নেই?

আছে। মন্ত্রী ফাঁসবেন, যদি প্রমাণিত হয় যে টাকা খেয়েছেন মন্ত্রী নিজে। যেমন হয়েছে লালুপ্রসাদ যাদবের ক্ষেত্রে। কিন্তু এ রাজ্যে মমতা এ বিষয়ে সতর্ক। সমস্ত চুরি হয়েছে মমতাদেবীরই সুবিধার্থে, কিন্তু করেছেন অন্য লোক। ফাঁসতে পারেন মমতার দলের লোকেরা, যেমন মদন, শোভন, ববি, অন্যান্যরা। তা-ও ফাঁসবেন কিনা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। চিটফান্ডের চুরির টাকা যদি কোনো ব্যবসার উপার্জন বলে অ্যাকাউন্টেড ফর হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে তাঁরাও ফাঁসবেন না। কিন্তু তাঁরা যদি ফাঁসেনও, মমতার দল যেহেতু one person show এবং যেহেতু পাবলিকের বিশ্বাসও কেবলমাত্র মমতার উপরেই, তাই তর্কের খাতিরে ধরে নিন, গোটা তৃণমূল দলও যদি জেলে চলে যায় অথচ ব্যক্তি মমতার কেশাগ্রও যদি স্পর্শ করা না যায়, তাহলে মমতার ব্যক্তিগত good will বিন্দুমাত্র টোল খাবে না। যত হতাশই লাগুক, সেটাই বাস্তব।

তবে হ্যাঁ, মমতাদেবীর উত্তর দায়িত্ব কেবল মাত্র তার ভোটারদের কাছে। সেখানে উনি জব্দ। ভারতীয় গণতন্ত্রের ক্ষমতা অসীম। জনগণের ক্ষমতা অপরিসীম। ওঁর সমস্ত অনাচারের জবাব যদি দিতেই হয়, তবে একমাত্র জনগণই তা পারে। ভোটের বাক্সে। যাঁদের মনে হয় বা হচ্ছে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গণতন্ত্রকে, মানুষকে অপমান করছেন, অথচ ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না, তাঁরা ভোটের বাক্সে জবাব দিতে পারেন।

১৩. তাহলে উপায়? এত অনাচার করেও কি পার পেয়ে যাবেন তিনি? জব্দ হলে হবেন শুধু ভোটের বাক্সে? আইনের হাতে শাস্তি পাবেন না?

মমতার ব্যক্তিগত দুর্নীতি প্রমাণ করতে না পারলে মমতাকে কিচ্ছু করা যাবে না। এবং CBI বোধ হয় এবার ব্যক্তি মমতার দিকেই হাত বাড়িয়েছে। CBI সম্ভবতঃ লক্ষ্য করেছে যে ব্যক্তি মমতাদেবীর একটি মাত্রই স্পষ্ট দুর্বলতা আছে। আর তা হল, কবি ও শিল্পী মমতা। প্রতিভাময়ী কবি ও শিল্পী হিসেবে বিদ্বজ্জন মহলের স্বীকৃতি পেতে মমতাদেবী হাস্যকররকমভাবে যারপরনাই লালায়িত। আর মমতাদেবীর এই ব্যক্তিগত দুর্বলতাটিকেই সম্ভবতঃ এইবার টার্গেট করেছে CBI. নিচের নিউজলিঙ্কটা পড়ুন। অনেকে হয়ত আগেই পড়েছেন।

https://www.anandabazar.com/state/cbi-keeps-10-mamata-banerjee-paintings-for-investigation-1.891225

https://economictimes.indiatimes.com/news/politics-and-nation/cbi-seizes-didis-20-paintings-from-chit-fund-firm-owners/articleshow/67155786.cms?fbclid=IwAR3h0fGuGkH3wopkfgfnb2n3ZqfsjZUqXId3moaSS4NN-C6vCOHHGgS0J9g&from=mdr&utm_source=contentofinterest&utm_medium=text&utm_campaign=cppst

হ্যাঁ, ছবি-বিক্রিই সেই ফিল্ড যেখানে সুবিধাভোগী সরাসরি মমতা নিজে। মমতা নিজে মুখে বিবৃতি দিয়েছেন যে ছবি বিক্রি করে উনি দল চালান ইত্যাদি। অর্থাৎ ছবি-বিক্রির টাকা যে exclusively মমতারই টাকা, তা উনি নিজেই স্বীকার করেছেন। তাই CBI মমতার বিভিন্ন বিক্রি হওয়া ছবি এখন ক্রেতাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করছে। তারা international forum এ ছবিগুলোর valuation করাবে। যদি দেখা যায় ছবিগুলির আসল মূল্য সেগুলোর বিক্রীত মূল্যের চেয়ে significantly কম, তখন CBI লজিক্যালি চার্জ ফ্রেম করতে পারবে যে ঐ ছবির জন্য ঐ অতিরিক্ত মূল্য আসলে ঘুষ। মমতার দলের তরফ থেকে যদিও বার বার বলা হচ্ছে যে ছবি-বিক্রির টাকা জনকল্যাণে খরচ করা হয়েছে, তবু সে হল lame excuse. যার অর্থবল নেই, সে ঘুষ খেয়ে ঘুষের টাকায় জনকল্যাণ করতে পারে না, বিশেষতঃ সে যদি রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হয় তাহলে তো পারেই না। কারণ সেক্ষেত্রে তার জনকল্যাণের কাজ তার রাজনৈতিক ক্ষমতাকে fortify করতে পারে। ফলে ঘুষ খেয়ে ঘুষের টাকায় যা-ই করা হোক্ না কেন, (সে জনকল্যাণমূলক কাজ হলেও) ঘুষ খাওয়ার অপরাধ তাতে লাঘব হয় না। ধরে নেওয়া যেতেই পারে যে মুখ্যমন্ত্রীর পোজিশন থেকে সস্তা ছবি বেশি দামে বেচে সেই অতিরিক্ত টাকায় জনকল্যাণ করে সেই ব্যক্তি তার রাজনৈতিক ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করতে চেয়েছেন।

১৪. এবার বোঝা গেল কেন হঠাৎ এরাজ্যে CBI কে তদন্ত করতে দেবেন না বলে ঘোষণা করেছেন মমতা?

মমতার ছবির দিকে হাত বাড়িয়েছে বলেই গতপরশু দিন মমতা ঘোষণা করলেন যে CBI কে এ রাজ্যে উনি ঢুকতে দেবেন না। একটু হলেও বোধ হয় হাড়ে কাঁপুনি ধরেছে অগ্নিকন্যার।

বাস্তব হল, CBI ঢুকবে এবং মমতার নির্দেশে কেউ যদি CBI এর সাথে অসহযোগিতা করে তাহলে CBI report করবে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টকে, কারণ চিটফান্ড তদন্ত হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। কোর্ট অর্ডার মানতে সবাই বাধ্য। কোর্ট অর্ডার সত্ত্বেও যদি মমতার মৌখিক নির্দেশে রাজ্যের কোনো আমলা বা পুলিশ যদি অসহযোগিতা করতে যান, তবে গ্রেফতার হবেন তিনিই। তাই মমতার এই gimmicky announcement এ CBI এর এ রাজ্যে ঢোকা বা তদন্ত করা কেউ আটকাতে পারবে না।

মমতা জানেন, আসলে CBI ঢুকল কিনা, তদন্ত করল কিনা, সে খবর উনি না চাইলে পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়াগুলো প্রচার করবে না। এবং তাহলেই সাধারণ মানুষও জানতে পারবে না। আর জানতে না পারলেই সাধারণ মানুষ ভাববে “ওই যে CM বলেছিলেন CBI কে ঢুকতে দেবেন না, তাই CBI তদন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। ওঁর কত্ত ক্ষমতা”। এই awe টাই উনি চান। উনি দেখাতে চান যে উনি নিজে সমস্ত কিছুর উর্ধ্বে। এই ঘোষণার মাধ্যমে যে ক্ষমতা বাস্তবে মমতার নেই, সেই ক্ষমতাই মিথ্যা জাহির করলেন মমতা। পাবলিককে fascinate করার জন্য।

এবার আসা যাক্ সেই প্রশ্নে।

১৫. মমতা যদি ছবি বিক্রির নামে সুদীপ্ত সেন, গৌতম কুণ্ডু, শিবাজী পাঁজা ইত্যাদি ও আরো নানা বড়লোকদের থেকে ঘুষ খেয়েও থাকেন এবং সেই ঘুষের টাকায় জনকল্যাণ করে থাকেন, তাহলে তো বলতে হয় তিনি ‘এযুগের রবিনহুড'। গরীবের দুঃখে তাঁর প্রাণ কাঁদে বলেই তিনি এমন করেছেন। সেই অর্থে তিনি তো আদর্শ ও প্রকৃত বামপন্থী। তিনিই আদর্শ জনপ্রতিনিধি, যিনি দরকার হলে নিজে বদনাম হয়েও মানুষের ভালো করেন। রবিনহুডও বড়লোকদের থেকে ডাকাতি করে গরীবের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন, মমতাও না হয় শিল্পপতিদের কাছে তাঁর আঁকা সস্তা ছবি বেশি দামে বিক্রি করে সেই টাকা মানুষের জন্য ব্যয় করেছেন। এ থেকে মমতাদেবীর মহত্ত্বই প্রমাণিত হয়। তাই নয় কি? মমতা মহৎপ্রাণ। ছবি বিক্রির জন্য CBI যদি মমতার বিরুদ্ধে চার্জ আনেও, তাহলেও পাবলিক-সিমপ্যাথি মমতার ওপরেই থাকবে।

আজ্ঞে হ্যাঁ, এইগুলোই হল সেই সব যুক্তি যা মমতাপন্থীরা দিয়ে থাকেন। কিন্তু একবার গভীর ভাবে ভেবে দেখুন, এসব যুক্তি কি সত্যনিষ্ঠ? নাকি সাজানো? আসুন উপরোক্ত যুক্তিগুলির প্রকৃত যৌক্তিকতা বিচার করা যাক্।

১৬. রবিনহুড ডাকাতি করতেন কাদের থেকে?

বড়লোকদের থেকে। বিলোতেন কাদের? গরীবদের। লুঠ করা সম্পদের অংশবিশেষ নিজেও আত্মসাৎ করতেন কি? না, করতেন না।  রবিনহুডের নিজের জীবন যাপন সাদামাটা ছিল।

১৭. সে তো মমতা দেবীর জীবনও নেহাৎই সাদামাটা। মমতার আটপৌরে শাড়ি, হাওয়াই চটি, টালির বাড়ি, সাধারণ গাড়ি তাঁর সাদামাটা জীবনযাত্রার সাক্ষ্য বহন করে। নয় কি?

১৮. তাই কি? সত্যিই কি মমতাদেবীর জীবন সাদামাটা?

আইফোন, আইপ্যাডের মত ওঁর সব দামী গ্যাজেট, দামী ঘড়ি, টালির চালের বাড়িতে AC কামরা কিন্তু অন্য কথা বলে। Puma র একজোড়া হাওয়াই চটির দাম ২০০০ টাকাও হয়। সাদার ওপর ডুরে তাঁতের কাপড়গুলোর এক একটার দাম ২০০০ এর কম বোধ হয় নয়। অন্ততঃ দেখে তাই মনে হয়।

১৯. বেশ, তা-ও না হয় হল। মমতা দেবী এত বছর সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন, আজও তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, যা ভাতা পেয়েছেন বা পেতে entitled, তাতে তাঁর নিজের একার জীবন luxuriousভাবে চলতে পারে বৈকি! এতে তো অন্যায় কিছু নেই! আছে কি?

নিশ্চয় অন্যায় নেই।

২০. কিন্তু প্রশ্ন হল, তাহলে অমন সাদামাটা জীবনের ভাব মানুষের কাছে তুলে ধরার কি প্রয়োজন?

২১. যে জীবন আসলে luxurious, তাকে বাইরে থেকে দেখে কেন মনে হয় টালির বাড়ির সাদামাটা জীবন?

২২. সেটা কি সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা নয়?

হয়ত মমতাদেবী তাঁর origin, তাঁর অতীতকে ভুলতে চান না! যে টালির বাড়ির থেকে জীবন শুরু করেছিলেন, সেই বাড়ির সঙ্গেই হয়ত আজও জড়িয়ে রাখতে চান নিজেকে! এমনও তো হতে পারে!

২৩. তাই যদি হত, তবে সেই ছোট বেলার টালির বাড়ির খোলটা এক রেখে নলচেটা পুরোপুরি বদলে ফেলতেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের টালির বেডরুমের ভিতরে একাধিক AC লাগিয়ে নিজের নিরবচ্ছিন্ন আরামের বন্দোবস্তও করতেন না। ছোট বেলায় যেমনভাবে থাকতেন আজও তেমনভাবেই থাকতে পারতেন। কিন্তু তা উনি করেন নি। মমতা দেবীর বাড়ি বাইরে থেকে দেখতে একরকম থাকলেও ভিতরে ভিতরে বদলে গেছে আমূল। এমন কেন হল? আসল রবিনহুডের জীবনে তো কোনোদিন কোনো দেখনদারি গরিবী ছিল না।

২৪. আরো প্রশ্ন আছে। শোনা যায়, মমতাদেবী যখন কোনো কাজে কোনো State Tourist Banglow য় ওঠেন, তখন প্রতিবার ওঁর নির্দেশে ঘরের পর্দা, বেডশিট, টাওয়েল ইত্যাদি সব কিছু নতুন procure করতে হয়। এগুলো কি সাধারণ জীবন যাপনের লক্ষণ?

না, নয়। এগুলো সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিজেকে এক করে দেখাও নয়। এগুলো simply luxury.

আরো আছে কতগুলি প্রশ্ন।

২৫. রবিনহুডের কি পরিবার ছিল?
২৬. রবিনহুডের নিজের পরিবার কি luxurious জীবন যাপন করত?
২৭. রবিনহুডের কি কোনো প্রিয় ভাইপো ছিল যে এক সাধারণ বাড়ি থেকে হঠাৎ এক প্রাসাদোপম অট্টালিকার মালিক হয়ে গিয়েছিল?
২৮. কিংবা হঠাৎ দেশে ও বিদেশে বড় বড় ব্যবসার মালিক হয়ে উঠেছিল বলে শোনা যায়?
২৯. রবিনহুডের কি ভাইয়েরা ছিল যারা হয়ত একদা রাস্তার মোড়ে আড্ডা দিত, আর পরে রবিনহুডের good will ভাঙ্গিয়ে বড় বড় ক্লাব ও সংস্থার সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছিল?

প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তরও সবার জানা।

৩০. তবে এ প্রশ্নও উঠতে পারে যে মমতা দেবীর পরিবার যে ওঁর good will ভাঙ্গিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে, তাতে মমতাদেবীর কি-ই বা করার আছে? উনি তো নিজের পরিবারকে অস্বীকার করতে পারেন না!

এই যুক্তি কি পরোক্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই অপমান করা নয়? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনো অবলা, অসহায় নারীর নাম নয়। দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেত্রী, রাজ্যের পাওয়ার করিডরে যাঁর কথাই শেষ কথা, সমস্ত মন্ত্রী, আমলারা যাঁর কথায় ওঠেন বসেন, তাঁর কোনো নিয়ন্ত্রণ তাঁর নিজের পরিবারের উপরেই নেই, এ কথা কি বিশ্বাসযোগ্য? মমতা চাইলে কি নিজের ভাই, ভাইপো কে নিয়ন্ত্রন করতে পারতেন না?

৩১. কিন্তু সুদীপ্ত সেন, গৌতম কুণ্ডু, শিবাজী পাঁজা, এঁরা তো বড়লোক। মমতা দেবী টাকা নিয়ে থাকলেও নিয়েছেন এইসব বড়লোকদের থেকে। গরীবদের তো শোষণ করেন নি? রবিনহুডও ডাকাতি করতেন ধনীদের কাছ থেকেই।

সুদীপ্ত সেন বা গৌতম কুণ্ডুর মত চিটফান্ডের মালিকরা বড়লোক ঠিকই, কিন্তু তাঁরা বড়লোক হয়েছিলেন কিভাবে? ধনী মানুষের অর্থ শোষণ করে নাকি গ্রাম, মফস্বল ও শহরের গরীব, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষকে ভুল বুঝিয়ে, বেশি সুদের লোভ দেখিয়ে তাঁদের কাছ থেকে তাঁদের কষ্টার্জিত টাকাপয়সা হাতিয়ে? উত্তর হল, চিটফান্ডের মালিকরা বড়লোক হয়েছেন গরীব মানুষকে ঠকিয়ে, গরীব মানুষের ক্ষতি করে। বড়লোকদের ক্ষতি করে নয়। আর সেই টাকার অংশমাত্র মমতা দেবী নিয়েছেন এই চিটফান্ড মালিকদের কাছে নিজের আঁকা ছবি বিক্রি করে। রবিনহুডও যে বড়লোকদের উপর ডাকাতি করতেন, সেই বড়লোকরাও গরীব মানুষকে শোষন করেই বড়লোক হতেন। এইপর্যন্ত আসল রবিনহুডের সঙ্গে মমতাদেবীর কোনো তফাৎ নেই। রবিনহুড লুঠতেন বড়লোকদের, আর বিলিয়ে দিতেন গরীবদের মধ্যে। মমতাদেবীও নিয়েছেন চিটফান্ড মালিক বড়লোকদের টাকা আর সেই টাকা ব্যয় করেছিলেন জনকল্যাণমূলক কাজে।

৩২. শুধু কি তাই? যে চিটফান্ডের মালিকরা লোক ঠকিয়ে বাজার থেকে টাকা তুলেছিল মমতাদেবী জানতে পারা মাত্র তাদেরকে গ্রেফতার করে জেলে পুরেছেন। তাই নয় কি? উনিও তো রবিনহুডের মত ধনী-বিরোধীই হলেন! লোক-ঠকানো বড়লোকদের উনি শাস্তি দিয়েছেন, জেলে পুরেছেন।

৩৩. কিন্তু বিষয়টা তাই কি? রবিনহুড বা তাঁর দলের লোকেরা যে বড়লোকদের থেকে ডাকাতি করতেন, সেই বড়লোকদেরকেই কি আবার গরীবদের লুঠ করার জন্য উদ্বুদ্ধও করতেন?

না, করতেন না।

৩৪. কিন্তু মমতাদেবীর দল কি করেছে?

সুদীপ্ত সেন, গৌতম কুণ্ডুর মত চিটফান্ড মালিকদের ব্যবসা যাতে বৃদ্ধি পায়, তার জন্য ক্রমাগত মানুষকে motivate করেছে, মানুষকে ভরসা জুগিয়েছে, তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে সাহায্য করেছে। মমতাদেবীর দলের লোকেরা যেমন মদন মিত্র, দিনের পর দিন সভায় সভায় বক্তৃতা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে গিয়েছেন যাতে মানুষ সুদীপ্ত সেন, গৌতম কুণ্ডুর মত লোকেদের বিশ্বাস করে তাদের কাছে নিজেদের টাকা গচ্ছিত রাখে। সারদায় যারা টাকা রেখেছিল, তারা হয়ত বুঝতেও পারে নি যে টাকা জমা রাখার যে সব কাগজপত্রে তারা স্বাক্ষর বা টিপসই দিয়েছিল, তাতে হয়ত লেখা ছিল যে তারা বেড়াতে যাওয়ার জন্য টাকা দিচ্ছেন সারদা ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসকে। আইনতঃ সব আটঘাট বেঁধেই সুদীপ্ত সেন গরীব মানুষের টাকা হাতিয়েছিলেন। আর সেই কাজে সেনকে সাহায্য করেছিলেন মমতাদেবীর দলের লোকেরা, দলের ও ২০১১ র পরে সরকারের good will কাজে লাগিয়ে। অর্থাৎ মমতা দেবীর নিজস্ব good will কেও কাজে লাগিয়ে। মানুষের অপরিসীম বিশ্বাস ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর। ওঁর লোকেরা যাদের পিছনে আছেন, তাদেরকে চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়। এমনই মনে করে ছিলেন সাধারণ মানুষ এবং ভরসা করেছিলেন মমতাদেবীর ওপর।

অর্থাৎ চিটফান্ড মালিকদের হাতে যে প্রচুর টাকা এসেছিল তার পিছনে সরাসরি হাত ও অবদান ছিল মমতাদেবীর দলের লোকেদের। তাঁদের সমর্থন ও নিরলস প্রচার ছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে সুদীপ্ত সেন বা গৌতম কুণ্ডুর মত চিটফান্ড মালিকদের এমন widespread বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরিই হত না।

২০০৭ এর ১৪ই মার্চ নন্দীগ্রামে গুলি চলে। পশ্চিমবঙ্গ উত্তাল হয়ে উঠেছে তার আগেই। মমতা তখন ক্ষিপ্ত জনগণকে দিনকে দিন আরও আরও ক্ষেপিয়ে তুলছেন। তারপর শুরু হল সিঙ্গুর আন্দোলন। মমতা দেবীর নেতৃত্বে নন্দীগ্রাম আর সিঙ্গুরের এই দুই তথাকথিত আন্দোলন পশ্চিমবঙ্গের fate seal করে দিয়েছিল। অতিবামপন্থা অবলম্বন করে মানুষকে কিভাবে আত্মঘাতী পদক্ষেপ নেওয়ার দিকে ঠেলে দেওয়া যায়, চিরকাল তার ঐতিহাসিক সাক্ষী হয়ে থাকবে মমতা দেবীর এই নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর আন্দোলন। টাটারা সিঙ্গুর থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যায় ২০০৮ এর অক্টোবরের গোড়ার দিকে। আর সারদার দুইটি খবরের কাগজ 'সকালবেলা' ও ‘Bengal Post' launched হয় ২৯শে জুন, ২০১০. তার আগেই হয়ে গিয়েছে ২০০৯ এর পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং তৃণমূল তাতে পেয়েছে প্রত্যাশিত ফল। অর্থাৎ আন্দাজ করা যায় যে গরীব মানুষকে বুঝিয়ে তাদের থেকে টাকা তোলার উদ্যোগ আরো জোরদার হয় ২০০৯এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলের পরে, যারই ফলশ্রুতি হল ২০১০ এর ২৯শে জুন সারদার মিডিয়া ব্যবসার শুরু। এই কাগজ দুটিই মুক্তকণ্ঠে করেছিল মমতার স্তুতি। এবং এইখানেই ছিল কাগজের সম্পাদক কুণাল ঘোষের ভূমিকা। মমতার larger than life ইমেজ তৈরিতে এই কাগজ দুটির অর্থাৎ কুণাল ঘোষের অবদান অনেক। ২০১১ র বিধানসভা নির্বাচনের আগেই সারদার ব‌্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠেছিল। বহু গরীব মানুষ মমতাদেবীকে তাঁদের মসীহা ভেবে, তাঁর লোকেদের আশ্বাসে নিজেদের জমানো টাকা, কেউ ১০,০০০, কেউ ২০,০০০, কেউ ১ লাখ রেখেছিলেন সারদার কাছে। সেই টাকাই বোধ করি ব্যবহৃত হয়েছিল ২০১১ নির্বাচনে মমতাদেবীর প্রচার কার্যে, অর্থাৎ মমতাদেবীকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসানোর জন্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তার টাকা জোগালো রাজ্যের অসংখ্য গরীব মানুষ। আর সেই টাকার ভাগ পেল রাজ্যের বহু উঁচুতলার মানুষেরা যাঁরা বিদ্বজ্জন নামে পরিচিত। অর্থাৎ “এ জগতে হায়, সেই বেশি চায়, আছে যার ভুরি ভুরি, / রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি”!

অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রবিনহুডের সঙ্গে তুলনা করা যায় না, বরং রবিনহুডের ঠিক উল্টো কেস এটা।

সাংবাদিক কুণাল ঘোষের সম্পাদিত সারদার সংবাদপত্রের খরচ, বড়লোকদের হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে তাঁদের মুখ বন্ধ করার খরচ, তথাকথিত বিদ্বজ্জন সমাজকে রাস্তায় নামিয়ে একত্রিত করার খরচ ইত্যাদি সুবিশাল প্রচারযজ্ঞের খরচ চিটফাণ্ডগুলির টাকায়ই সম্পন্ন হয়েছিল। In fact, টাকার জোর না থাকলে বামফ্রন্ট সরকার নামক ক্ষমতাবান জগদ্দল পাথরকে সরানো দূরস্থান, নাড়ানোও যেত না।

৩৫. বেশ। মেনে নেওয়া গেল যে চিটফান্ড মালিকদের হয়ে প্রচার করে তাদেরকে লোকঠকাতে সাহায্য করেছিলেন মমতাদেবীর দলের নেতৃবৃন্দ। কিন্তু মমতা নিজে তো তা করেন নি?

৩৬. মদন মিত্র বা অন্যান্য নেতৃবৃন্দ যে চিটফান্ড মালিকদের হয়ে প্রচার করেছিলেন তা কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের নির্দেশে? নিশ্চয়ই না?

৩৭. মমতা ব্যক্তিগত ভাবে যে clean নন, তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় কি?

৩৮. চুরিতে বা চোরেদের সাহায্য করায় ব্যক্তি মমতার যে কোনো ভূমিকা আছে, তা কি প্রমাণিত হয়েছে?

একথা ধরে নেওয়া যেত যে ব্যক্তি মমতা thoroughly clean এবং চিটফান্ড চুরির বিষয়ে উনি কিচ্ছু জানতেন না। কিন্তু এ বিষয়েও কতগুলো প্রশ্ন আছে।

৩৯. ২০১১ য় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভা নির্বাচনে জিতলেন, আর জিতেই নোটিফিকেশন জারি করেছিলেন যে সমস্ত পাবলিক লাইব্রেরীগুলোকে সারদার সংবাদপত্রগুলি রাখতে হবে। অর্থাৎ বহুকাঙ্খিত ক্ষমতা পেয়েই মমতা সারদা গ্রুপকে recommend করা শুরু করেছিলেন। কেন?

৪০. মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কুণাল ঘোষকে পুরষ্কৃত করে রাজ্যসভার সাংসদ করে পাঠালেন ২০১২ তে। তখন তো নিশ্চয়ই মমতা জানতে পেরে গিয়েছেন (ধরে নিয়েছি যে আগে জানতেন না) যে সারদা গ্রুপ একটি চিটফাণ্ড গ্রুপ যেটি সেবির অনুমোদন ছাড়াই বাজার থেকে টাকা তোলার ব্যবসা করছে। তাহলে এমন একটি বেআইনি কাজে লিপ্ত গ্রুপের প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদককে পুরষ্কৃত করলেন কেন মমতা?

৪১. এ কি পরোক্ষে তাদের বেআইনি কাজের endorsement হল না?

৪২. কি বললেন? ২০১২ তে কুণাল ঘোষকে রাজ্যসভায় পাঠানোর সময়ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানতেন না যে সারদা গ্রুপ সেবির accreditation ছাড়াই চিটফান্ডের বেআইনি ব্যবসা করছে?

তা্হলে তো বলতে হয় মমতা কোনো রাজনীতিক ছিলেনই না, বরং ছিলেন কেবল এক সরলমতি নারী।

৪৩. কিন্তু পরবর্তীকালে মমতা দেবীকে দেখে কখনওই কি ওঁকে politically এতখানি naive বলে মনে হয়েছে?

যাই হোক্। তারপর চিটফান্ড চুরি ফাঁস হল ২০১৩ র এপ্রিলে। রাজ্যের Special Investigation Team সুদীপ্ত সেনকে গ্রেফতার করল। কুণাল ঘোষ কিন্তু সুদীপ্ত সেনের সাথেই গ্রেফতার হন নি। কুণাল ঘোষ গ্রেফতার হয়েছিলেন নভেম্বরে ওঁর নিজের ফেসবুক পেজে সারদা কেলেঙ্কারিতে সরাসরি জড়িত ১২ জনের নাম লিপিবদ্ধ করার পর, যে তালিকায় নাম ছিল তৃণমূলের ৪ জন MPর ও স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

৪৪. অর্থাৎ যতদিন পর্যন্ত মমতা দেবীর নাম নেন নি, ততদিন পর্যন্ত কিচ্ছু হয় নি কুণাল ঘোষের। আর মমতাদেবীর নাম নেওয়ার পরেই গ্রেফতার। এ থেকে কি মনে হয়?

আরও আছে।

৪৫. মদন মিত্র গ্রেফতার হওয়ার পর, জেলে থাকাকালীনও মন্ত্রী ছিলেন। জেল থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ২০১৬র বিধানসভা নির্বাচনে। জনগণ ওঁকে হারিয়ে দিয়েছিলেন কিন্তু চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ মদন মিত্রর বিরুদ্ধে ওঠামাত্র মমতা নিজে মদনকে সরিয়ে দেন নি, বরং মদনের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে পথে নেমে প্রতিবাদ করেছিলেন। কেন?

৪৬. এ থেকেও কি পরোক্ষে এটাই প্রমাণ হয় না যে চিটফান্ড মালিকদের হয়ে প্রচার করা বা চিটফান্ড চুরির ঘটনায় নাম জড়ানোর বিষয়টাকে ব্যক্তিগত ভাবে turn down করেন না মমতা, বরং সমর্থন করেন?

এখানে রবিনহুডের সঙ্গে মমতাদেবীর সরাসরি অমিল। মমতা দেবী গরীব মানুষের টাকা হাতানোর কারিগরদের সমর্থন করেছিলেন যা রবিনহুড কখনও করেন নি।

৪৭. মমতা দেবী চুরিকে turn down করেন নি, কেবল চুরির সঙ্গে নিজের নাম জড়ানোকে turn down করেছেন, তাই নয় কি?

সেই কারণেই হয়ত এতদিন CBI যখন‌ মমতার অন্যান্য নেতা, মন্ত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ, গ্রেফতার ইত্যাদি করেছে, ততক্ষণ মমতা মৌখিক প্রতিবাদ করেছেন মাত্র। কিন্তু ওঁর নিজের আঁকা ছবির দিকে হাত বাড়াতেই মমতা রাজ্যে CBI এর তদন্তের general permission withdraw করলেন। অর্থাৎ এখন থেকে মমতা সতর্ক থাকবেন, যদিও SCর নির্দেশে চলা চিটফান্ড তদন্তে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা মুখ্যমন্ত্রীর আদৌ নেই। এই তদন্তের জন্য CBI এর মুখ্যমন্ত্রীর permissionএ্ররও প্রয়োজন নেই।

আশ্চর্যের বিষয় হল, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুও তাঁর রাজ্যে CBI তদন্তের general permission withdraw করেছেন। কারণ তাঁর বিরুদ্ধেও কোর্টের নির্দেশে আর্থিক তছরূপের অভিযোগের তদন্ত শুরু হতে চলেছে। খবরে প্রকাশ নাইডুর তিন বছরের নাতির সম্পত্তির পরিমাণ নাইডুর নিজের সম্পত্তির পরিমাণের ছ'গুণ! অত্যাশ্চর্য। আর এই চন্দ্রবাবু নাইডুই মমতা দেবীর বন্ধু, যিনি নবান্নে এসে দেখা করে গিয়েছেন মমতার সঙ্গে।

https://www.thewall.in/news-india-chief-minister-chandrababu-naidu-declares-assets-3-year-old-grandson-6-times-richer/

৪৮. কেন চন্দ্রবাবু নাইডুর মত করাপ্ট রাজনীতিকের সঙ্গে মমতাদেবীর এই বিশেষ হৃদ্যতা?

-- ইংরিজিতে বলে, a man is known by the company he keeps. অথবা birds of same feather flock together.

৪৯. কিন্তু মমতা তো চিটফান্ড মালিকদের জেলে পুরেছেন। তাহলে মমতাকে দোষ দেওয়া যায় কিভাবে?

ঠিক তাই। চিটফান্ড মালিকরা এখন জেলে। তাদের লোকঠকানো সম্পদ তারা নিজেরাও এখন আর ভোগ করতে পারছে না। তাহলে সেই বিপুল সম্পদ কোথায় গেল?

৫০. কেন? চিটফান্ডে টাকা রেখে যারা টাকা খুইয়েছিল, মমতাদেবী তো তাদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। শ্যামল সেন কমিশন বসিয়েছিলেন। তাই নয় কি?

৫১. ঠিক। কিন্তু মমতাদেবী কি যে টাকা লুঠ হয়েছিল সেই টাকা উদ্ধার করে বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন?

না। তিনি চিটফান্ড চুরিতে যাঁরা ঠকেছিলেন তাঁদেরকে compensate করার জন্য রাজ্যের সমস্ত সাধারণ মানুষের উপর নতুন করে ট্যাক্স বসিয়েছিলেন। সিগারেটের উপর ট্যাক্স বসিয়েছিলেন। বলেছিলেন বেশি করে smoke করতে যাতে বেশি ট্যাক্স কালেকশন হয় এবং সেই টাকায় সারদার victim দের compensate করতে চেয়েছিলেন মমতা। অর্থাৎ গরীবদের যে টাকা লুঠ হয়েছিল সেই টাকাই যে উনি গরীবদের ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন, তা নয়। বরং নতুন ট্যাক্স বসিয়ে এবার আর শুধু গরীব মানুষকে নয়, বরং গরীব বড়লোক নির্বিশেষে সমস্ত রাজ্যবাসীকে নতুন করে লুঠ করে সেই নতুন কালেকশনের টাকা দিয়ে সারদা victim দের compensate করার পরিকল্পনা করেছিলেন। রাজ্যের মানুষ তাতে প্রতিবাদ করেছিল। ওঁদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছিল, যে মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট ওঁদের বিরুদ্ধে CBI তদন্তের নির্দেশ দেন। অর্থাৎ ওঁদের বিরুদ্ধে CBI তদন্ত কেন্দ্রের নির্দেশে হয় নি। হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। সুতরাং মমতা দেবীর অভিযোগ যে কেন্দ্র ওঁদের বিরুদ্ধে CBI লেলিয়ে দিয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে, তা একেবারেই অসার। উনি এমন বলেন কারণ অভিজ্ঞ রাজনীতিক হিসেবে উনি জানেন যে মানুষ এত সবিস্তারে বিষয়গুলি বোঝে না। মানুষের খবর না রাখা ও না বোঝার সুযোগ নিয়েই ওঁর মত রাজনীতিকরা মানুষকে আরও বেশি ভুল বোঝান।

অর্থাৎ চিটফান্ড চুরির বিপুল পরিমাণ টাকা কোথায় গেল, সে প্রশ্নটা কিন্তু রয়েই যাচ্ছে। সেই টাকা দিয়েই হয়ত চিটফান্ড মালিকরা সাহায্য করেছেন মমতা দেবীকেও। গরীব মানুষকে ঠকানো পয়সায় তাঁরা মমতাদেবীর আঁকা ছবি কিনেছেন। অর্থাৎ গরীব মানুষের রক্তঘাম এক করা টাকা চিটফান্ড মালিকদের হাত ঘুরে মমতা দেবীর হাতে পৌঁছেছে। অর্থাৎ ছবি বিক্রি করে যে টাকা মমতাদেবী উপার্জন করেছেন, সে টাকা আসলে কোনও বড়লোকের টাকা নয়, গরীবের টাকা। মমতা বড়লোকদের টাকা নিতে গিয়ে নিয়ে ফেলেছেন গরীবের টাকাই।

৫২. কিন্তু CBI আসার ফলেই তো সারদা victim দের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগটা বন্ধ হয়ে গেল। CBIই তো আসল ক্ষতি করল মানুষগুলোর। তাই না?

আজ্ঞে হ্যাঁ, এমন অসম্ভব যুক্তিও কেউ কেউ দিয়েছেন। হয়ত তাঁদেরকে এমনই বোঝানো হয়েছিল। তাঁদের উদ্দেশ্যে বলি, CBI অর্থাৎ Central Bureau of Investigation বা কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। তাদের কাজ শুধু ই তদন্ত করা। তাদের এক্তিয়ারই নেই টাকাপয়সা দেওয়া নেওয়া সংক্রান্ত কোনো কাজ করার বা টাকা ফেরানো বন্ধ করার কারণ হওয়ার। টাকা ফেরত দেওয়া বন্ধ হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের আদেশে কারণ সুপ্রিম কোর্ট শ্যামল সেন কমিশনকেই infructuous করে দিয়ে কেস তুলে দিয়েছিলেন CBIর হাতে। মমতা দেবীর তখন ভারি অভিমান হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন “CBI যদি আসে, তবে CBIই টাকা ফেরত দিক!” অথচ ইতিমধ্যেই টাকা ফেরত দেওয়ার উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত ট্যাক্সবাবদ যে টাকা উঠেছিল, সুপ্রিম কোর্টের উপর অভিমান বশে সেই টাকাও সারদা victim দের মধ্যে বিতরণ করে দেন নি মমতা। অর্থাৎ ওঁর রাগ হল সুপ্রিম কোর্টের উপর, আর তার ফল ভুগলেন সারদার victim দের বেশ কয়েকজন। এ-ও এক পরোক্ষ প্রমাণ যে সারদার victimদের প্রতি মমতাদেবীর আদতে হয়ত কোনো সমবেদনা ছিলই না। যদি চিটফান্ড মালিকদের লুঠ করা টাকাগুলোই গরীব বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে দিতে চাইতেন, তবে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট বোধ করি আপত্তি করতেন না। কিন্তু সারদা victim দের compensate করার জন্য উনি যারা সারদার victim নয়, অতিরিক্ত ট্যাক্স বসিয়ে তাদেরকেও আবার দ্বিতীয়বার লুঠতে আরম্ভ করেছিলেন। অর্থাৎ টাকা ফেরত দিতে পারেন নি মমতাদেবী নিজে। CBIর এর মধ্যে যে শুধু কোনো ভূমিকা নেই তাই নয়, থাকা সম্ভবই নয়।

৫৩. কিভাবে ঘটেছিল চিটফান্ড কেলেঙ্কারি?

যাঁরা টাকা রেখেছিলেন, তাঁরা সারদার প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে ভেবেছিলেন অল্পদিনের মধ্যেই তাঁদের টাকা দ্বিগুণ হবে। যাই হোক্, টাকা দ্বিগুণ হওয়ার সময় আসার আগেই এসে গেল নির্বাচন। পশ্চিমবঙ্গের গরীব, নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষকে হয়ত বিলোনো হল টাকা। “চুপচাপ ফুলে ছাপ” দেওয়ার জন্য। কাউকে ৫০০, কাউকে ১০০০, কাউকে ২০০০…পাড়ার ক্লাবের ছেলেদের নিয়ে ছোটানো হল ফূর্তির ফোয়ারা। মদন মিত্র নিরলসভাবে করেছিলেন এইসব কাজ। যাঁরা চিটফান্ডে ১০০০০ টাকা রেখে ২০০০০ ফেরত পাওয়ার আশা করেছিলেন, তাঁরা মমতাদেবীর দলের কাছ থেকে প্রাক্-নির্বাচনী ৫০০, ১০০০, ২০০০ টাকাকে উপরি পাওনা বলে মনে করে মনে মনে যারপরনাই আহ্লাদিত হয়েছিলেন। হয়ত ভেবেছিলেন, “এখন ৫০০/১০০০/২০০০ পেলাম, এরপর আমার ১০০০০ টাকা সুদ সহ দ্বিগুণ হয়ে হবে ২০০০০. এমনিতে মোট ২০,০০০ টাকা পেতাম, কিন্তু gift money যোগ হয়ে পাচ্ছি ২০৫০০/২১০০০/২২০০০ টাকা।“

৫৪. কিন্তু বাস্তবে কি হয়েছিল?

১০০০০ টাকা চিটফান্ডে রেখে নির্বাচনের আগে তৃণমূলের বিলোনো ওই ৫০০/১০০০/২০০০ ইত্যাদি সামান্য gift money নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল ওঁদের। টাকা দ্বিগুণ করা সুদের টাকা তো পানই নি, এমনকি নিজের জমা দেওয়া আসল টাকাও আর ফেরত পাননি। অর্থাৎ নিজেদের ইনভেস্ট করা ওই ১০০০০ টাকা থেকেই ৫০০/১০০০/২০০০ টাকা পেয়ে মমতা দেবীর দলকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলেন তাঁরা। আর মমতা দেবীর নির্বাচিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের সিংহাসনে বসার দু'বছরের মধ্যেই বাতাসে মিলিয়ে গিয়েছিল চিটফান্ড ব্যবসার রঙীন বুদ্বুদ। মানুষগুলো সুদ তো পানই নি, এমনকি এ-ও বোঝেন নি যে চিটফান্ডগুলিতে ওঁদের জমা করা মূলধন থেকেই ভোট দেওয়ার জন্য gift money ওঁদেরকেই বিলিয়েছেন মমতাদেবীর দলের লোকেরা। ওঁরা ভেবেছিলেন ওই gift money ওঁরা পাচ্ছেন তৃণমূলের থেকে। ওঁরা বুঝতে পারেন নি যে তৃণমূল ওঁদের কোনো gift money দেয় নি, বরং সারদায় বা অন্যান্য চিটফান্ডে যে টাকা ওঁরা জমা রেখেছিলেন, সে টাকা ছিল আসলে তৃণমূলকে ওঁদেরই দেওয়া gift money. আর সেই টাকা থেকেই ৫০০/১০০০/২০০০ টাকা আবার ওঁদেরকেই দিয়ে অতিরিক্ত নাম ও আনুগত্য আদায় করে নিয়েছিল মমতা দেবীর দল।

এরপরেও কিছু লোক হয়ত বলবেন যে এতেও প্রমাণিত হয় না যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি চিটফান্ডের সুবিধাভোগী। তাঁদের এমন মনে হওয়ার কারণও আছে। প্রায় কোনো negotiation এই মমতা নিজে সরাসরি অংশগ্রহণ করতেন না বলেই শোনা যায়। উপরন্তু আজও মমতা চট করে কোথাও সই করতে চান না, কাগজে কলমে দায়িত্ব সবসময় অন্যের ওপর দেন। তবুও, কালিম্পং এর ডেলো বাংলোয় সুদীপ্ত সেন, গৌতম কুণ্ডুদের সাথে মিটিং এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও উপস্থিত ছিলেন বৈ কি! ডকুমেন্টেশন সম্পূর্ণ avoid করতে উনি পারেন নি। তবে তাতেও প্রমাণিত হয় না যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি চিটফান্ডের সুবিধাভোগী। সেইজন্যই CBI এখন probe করছে তাঁর ছবি বিক্রির বিষয়টিকে। কারণ সেটিই সেই ফিল্ড, যেখানে সরাসরি ও conclusively প্রমাণিত হওয়া সম্ভব যে ব্যক্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও সরাসরি চিটফান্ডের সুবিধাভোগী কি না।

যদিও আমার ব্যক্তিগত মত হল, দলগতভাবে মানুষকে আর্থিকভাবে প্রতারিত করে ব্যক্তিগতভাবে মুখ্যমন্ত্রীর status উপভোগ করাই সবচেয়ে বড় তছরূপ। মমতা অর্থলোভী কি না তা বড় কথা নয়। কিন্তু ক্ষমতালোভী তিনি অবশ্যই। এবং তাঁর জন্য ক্ষমতা কেনার উদ্দেশ্যেই রাজ্যের এত এত দরিদ্র মানুষকে ঠকানো হয়েছিল।

পশ্চিমবঙ্গের কর্মহীন, 'কিছু করে দেখাবার' উপায়হীন, মিথ্যে সাম্যবাদের অহংকারে অহংকারী অথচ লোভী, ৩৪ বছর ধরে লাল সন্ত্রাসে সন্ত্রস্ত, দরিদ্র, সাধারণ মানুষ খড়কুটোর মত আঁকড়ে ধরেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, তাঁর দলকে। আর এরা নির্দ্বিধায় এই সাধারণ দরিদ্র মানুষগুলোকে প্রতারণা করে, তাঁদেরকে সিঁড়ির মত ব্যবহার করে উঠে গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষে। অথচ পশ্চিমবঙ্গের এই মানুষগুলো এতই সরল বা বোকা যে এমনভাবে প্রতারিত হওয়ার পরেও ২০১৬ র নির্বাচনে আবার সেই মমতা দেবীর দলকেই ভোট দিয়ে জিতিয়ে এনেছিল। তাঁরা বুঝতেই পারেন নি যে তাঁরা যদি কষ্ট করে টাকা জমিয়ে চিটফান্ডে জমা না করতেন, তাহলে আজ মমতাদেবী যেখানে পৌঁছেছেন, সেখানে কোনোদিনই পৌঁছতে পারতেন না। তাঁরা এ-ও বুঝতে পারেন নি এ রাজ্যের সরকারি ক্ষমতা থেকে CPM কে তাড়ানোর কৃতিত্ব যতটা না মমতার, তার চেয়ে ঢের ঢের ঢের বেশি ওঁদের। ওঁদের কষ্টার্জিত টাকা দাঁও মেরেই মমতাদেবী আজ মুখ্যমন্ত্রী। এ হল “মাছের তেলে মাছ ভাজা”র আদর্শ উদাহরণ। মাছেরা (পশ্চিমবঙ্গের দরিদ্র মানুষ) নিজেদের তেলে (অর্থাৎ টাকায়) নিজেরাই ভাজা হয়েছেন আর সেই মাছভাজা গিয়ে উঠেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গোদের প্লেটে। সুকান্ত ভট্টাচার্যের “একটি মোরগের কাহিনী” মনে পড়ছে কি?

৫৫. শেষ প্রশ্ন হল, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কি এই প্রতারকের দলকেই আবার নির্বাচন করবে? আবারও কি তাদের নতুন কোনো ‘লোভদেখানো’ প্রতারণা-কৌশলের কাছে আত্মসমর্পণ করবে?

উত্তর আছে ভবিষ্যতের গর্ভে।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

রথযাত্রা: কুমুদরঞ্জন মল্লিক

কোভিশিল্ড কাহিনী

নব্য কথামালা: শেয়াল ও সারসের গল্প

SSC চাকরি বাতিল: যোগ্য - অযোগ্য বিভাজন আদৌ সম্ভব?