আনন্দ-তঞ্চক

#ভূমিকা
আনন্দবাজারের সম্পাদকীয় যখন, তখন রসিকতাই বটে। কাজেই, প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারকে বিষয়বস্তু করিয়া আনন্দগণ যে একটি সম্পাদকীয় লিখিতে বসিয়া গেল তাহা প্রধানমন্ত্রীর উত্তরসমূহ উহাদের মোক্ষম গাত্রদাহ উৎপাদন করিয়াছে বলিয়াই কিনা, সে প্রশ্ন নৈব নৈব চ। প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার আনন্দগণের বুকে কতখানি বাজিয়াছে, সে-ই আলোচনাও বকেয়া থাকুক। আনন্দবাজারের ন্যায় যে সকল কুখ্যাত মিডিয়াকুল গণমাধ্যমের মুখোশের আড়াল হইতে বিশেষ বিশেষ রাজনৈতিক দলের মুখপত্র হিসাবে কার্য করিয়া দিন গুজরান করিতেছে, মিডিয়া সাক্ষাৎকারে নরেন্দ্র মোদীর সহজ, বাস্তবমুখী রাজনৈতিক অভিব্যক্তি দেখিয়া তাহারা কতখানি স্নায়ুচাপে পড়িয়াছে এবং তাহা দেখিয়া জাতীয়তাবাদী পাঠককুল কতখানি আহ্লাদিত হইয়া থাকিতে পারে, সে আলোচনাও নহে।

#শবরীমালাবনামতিনতালাক
তবে একটি প্রশ্ন না করিলেই নহে। আনন্দগণ নিজেরা কি নিজেদের প্রতিবেদন পড়িয়া থাকেন? তিন তালাকের ন্যায় একটি সঙ্ঘবদ্ধ সামাজিক হিংস্রতার সহিত শবরীমালা মন্দিরের একটি সাধারণ ধর্মীয় রীতির তুলনা করিবার সময় আনন্দগণের হেঁচকি উঠিল না? ‘তিন তালাক’ প্রথা একজন মহিলাকে সমস্ত জীবন স্বস্তিতে বাঁচিতে দেয় না, যে কোনো মুহূর্তে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভুলের জন্যও স্বামীর নিকট হইতে 'তিন তালাক' এর ডাণ্ডার বাড়ি খাইতে হইতে পারে, এই ভয়ে তাঁহাকে জীবন কাটাইতে হয়, তাঁহার মানবাধিকারই তাহাতে অরক্ষিত থাকে। এমন হিংস্র, অসভ্যতার সহিত শবরীমালা মন্দিরের প্রথার তুলনা করিতে গিয়া আনন্দগণ একটিবারের জন্যও বিষম খাইল না? প্রজননক্ষম মহিলাগণ চিরব্রহ্মচারী আয়াপ্পার মন্দিরে ঢুকিবেন না — এই সংযমমূলক প্রথার সহিত ক্ষতিকারক ‘তিন তালাক’এর হিংস্রতার সাদৃশ্য কোথায়?

তিন তালাক প্রথা মহিলাগণের জীবনে স্থিতি, শান্তি ও স্বস্তিতে বিঘ্ন ঘটাইয়া উহাদের সরাসরি সামাজিক ক্ষতিসাধন করে। শবরীমালা মন্দিরের প্রথা কোনো মহিলার জীবনধারণে কদাপি কোনো ক্ষতিসাধন করিয়াছে কি? তাহা হইলে দুইয়ের মধ্যে তুলনা চলিতেছে কোন্ গূঢ় উদ্দেশ্যে? হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রথার স্বাতন্ত্র্যকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আঘাত করিবার জন্যই কি?

#রাফালচুক্তিবিতর্ক
রাফাল চুক্তি লইয়া আজ যাঁহারা প্রশ্ন করিতেছেন তাঁহারা দেশের বিমান বাহিনীর প্রয়োজন জানিয়াও, নিকটবর্তী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর শক্তিবৃদ্ধি জানিয়াও এবং নিজেরা ১০ বৎসরকাল সরকারে থাকিয়াও একখানি যুদ্ধ বিমানও কিনিতে পারেন নাই। তাঁহাদের এই পর্বতপ্রমাণ ব্যর্থতা ও সন্দেহজনক আচরণ সত্ত্বেও আজ যখন সেই তাঁহারাই রাফাল-চুক্তি লইয়া আনতাবরি প্রশ্ন করিতেছেন, তখন এমত সন্দেহ করা কি অস্বাভাবিক যে তাঁহারা প্রকৃতপক্ষে দেশের বিমান বাহিনীর শক্তিবৃদ্ধি ঘটাইবারই বিরোধী? অর্থাৎ তাঁহারা প্রতিবেশী কিছু রাষ্ট্রের তুলনায় ভারতের বিমান বাহিনীকে দুর্বল করিয়া রাখিতেই চাহেন? এমন সন্দেহ না করিলেই যে বোধ ও কাণ্ডজ্ঞানের সীমা লঙ্ঘিত হয়, ইহা বুঝিবার মত কাণ্ডজ্ঞান আনন্দগণের নাই কেন?

#নীরবমোদীবিজয়মাল্য
আনন্দ-সম্পাদক বলিয়াছেন “তাঁহার আমলে যাঁহারা ভারত ছাড়িয়া পলায়ন করিয়াছেন, তিনি তাঁহাদের দেশে ফিরাইয়া আনিবেন, এই কথাটি শুনিলে নীরব মোদীরা বড় জোর মুচকি হাসিবেন।“ আনন্দগণ স্বীকার করিয়াতে বাধ্য হইয়াছে যে তষ্করবৃন্দ “তাঁহার আমলে”ই পলায়ন করিয়াছে। প্রশ্ন হইল বিজয় মাল্য, নীরব মোদীরা কি তস্করবৃত্তিও চালাইয়াছে কেবলমাত্র “তাঁহার আমলেই”? নাকি বহু পূর্বকাল হইতেই তাহারা তস্করবৃত্তি চালাইয়াই আসিতেছিল? “তাঁহার আমলে” কি এমন হইল যে তস্করবৃত্তিতে ইতি টানিয়া সহসা উহাদের ভারত ছাড়িয়া পলায়ন করিতে হইল? পলায়ন মানুষ কখন করে? এ প্রশ্ন সহজ। শিশুতেও ইহার উত্তর জানে। নীরব মোদী মুচকি হাসিবার অবকাশ পাইবে কিনা জানা নাই, কিন্তু বিজয় মাল্যকে যদি সত্যই ভারতে ফিরাইয়া আনা হয়, তখন আনন্দগণের হাসি যে কিছুক্ষণের জন্য অন্ততঃ মিলাইয়া যাইবে, তাহাতে সন্দেহ নাই।

#জনরোষ
গণদেবতার রোষ লইয়া আনন্দগণ যদি চিন্তা করিতে আরম্ভ করিয়া থাকে তবে তাহা শুভলক্ষণ। কিন্তু উহাদের উচিত নরেন্দ্র মোদীর উপর গণদেবতা রুষ্ট হইবে কি না তাহা চিন্তা না করিয়া গণমাধ্যমের ক্ষমতার কদর্য অপব্যবহার করিবার অপরাধে তাহাদের উপর গণদেবতা ইতোমধ্যেই কতখানি রুষ্ট হইয়াছে, তাহার সঠিক বিচার করিতে বসা।

#মানুষের হয়রানি
গত সাড়ে চার বৎসর এনডিএ শাসন সাধারণ মানুষের পক্ষে ভালো গিয়াছে, না যায় নাই, তাহা কে স্থির করিয়া দিবে? আনন্দবাজার? ‘মানুষ’ কাহারা? যাহারা রাহুল গান্ধীকে 'সুস্থ' বলিয়া মনে করে, তাহারা?

#সংখ্যালঘু-অসন্তোষ
সংখ্যালঘুই বা কে বা কাহারা? কেবলমাত্র নাসিরউদ্দিন শাহ বা আসাদুদ্দিন ওয়েইসিরা? উপরন্তু প্রশ্ন হইল, ভারতীয় সংবিধানে ১৪ ও ১৫ নম্বর ধারা বর্তমান থাকা সত্ত্বেও যাঁহারা স্বেচ্ছায় নিজদিগের জন্য ‘সংখ্যালঘু’ নামক একটি পৃথক 'ট্যাগ' ব্যবহার করিতে চাহেন, তাঁহারা যে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে আপনাদিগের জন্য একটি পৃথক ও স্বতন্ত্র শ্রেণী স্বেচ্ছায় দাবী করেন, তাহাতে সন্দেহের অবকাশ কি?

আর যাহারা দেশের মূলধারার নাগরিকবৃন্দ হইতে স্বেচ্ছায় আপনাদিগকে স্বতন্ত্র ‘সংখ্যালঘু’ শ্রেণীতে রাখিতে চাহে, তাহারা যে নাগরিক হিসাবে ‘দ্বিতীয় শ্রেণী’তেই পড়িবে, তাহাতেই বা সন্দেহ কি? প্রথম শ্রেণীটিতে তো যুক্তিসঙ্গতভাবেই মূলধারার নাগরিকবৃন্দেরই অন্তর্ভুক্ত হইবার কথা!

#গরুবনামমুসলমান
যোগী আদিত্যনাথকে ডাকিয়া আনিবার পূর্বে বরং আনন্দগণ নিজেরাই এ প্রশ্নের উত্তর দিক যে ভারতীয় সংবিধানে গো-হত্যা নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও গোরু লইয়া এইরূপ হিংস্রতা শুরু হইবার প্রকৃত কারণ কি? পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত বরাবর গো-পাচারের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের কোন্ ভূমিকা আনন্দগণ পালন করিয়াছে? উপরন্তু গোরুর সহিত মুসলমানের তুলনা করিয়া সাম্প্রদায়িক বিভাজন উস্কাইয়া দিবার প্রয়াস কি আনন্দগণই করিতেছেন না?

#দলিতদলন
দলিতরা যদি সত্যই রুখিয়া দাঁড়াইয়া থাকেন, তবে তৎক্ষণাৎ প্রমাণিত হইয়াছে যে তাঁহারা আর ‘দলিত’ নাই। প্রশ্ন হইল, যে সকল ‘দলিত’ রুখিয়া দাঁড়াইয়াছেন বলিয়া আনন্দগণ দাবী করিতেছে, তাহারা কি সকলেই সত্তরোর্ধ্ব? নাকি যুবা? যদি যুবা হয়, তবে তাহাদের প্রত্যেকেরই জন্ম গান্ধীদের রাজত্বে। তাহা হইলে এতকাল তাহাদিগকে 'দলন' করিল কে বা কাহারা? কংগ্রেস তথা গান্ধীপরিবারই নিশ্চয়? 'দলিত' অর্থ নিপীড়িত। স্বাধীনতার পর হইতে এতকাল নেহরু-গান্ধী পরিবারের রাজত্বেও যে এত মানুষ 'দলিত'ই রহিয়া গেল, ইহা কিসের পরিচয় বহন করে? গত সত্তর বৎসর যাবৎ তাহাদেরকে 'দলিত' করিয়া রাখিয়া গান্ধীপরিবার তাহাদিগের উপর যে 'দলন' করিয়াছে, গত সাড়ে চার বছরে নরেন্দ্র মোদীর আমলেই যদি তাহারা সেই অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়াইবার শক্তি অর্জন করিয়া থাকে, তবে তাহার কৃতিত্বও নরেন্দ্র মোদীরই।

#কৃষকক্লেশ
ভারতীয় কৃষকদের জন্যও আনন্দগণের ও আনন্দগণের প্রভু পরিবারটির কুম্ভীরাশ্রু অঝোরধারে ঝরিতেছে। প্রশ্ন হইল, কৃষকদের জন্য এতই যন্ত্রণা যদি পাইতেছ, তাহা হইলে কৃষকবর্গের এমন অপরিসীম দুরবস্থা এতদযাবৎকাল ধরিয়া সৃষ্টি হইতে দিলেই বা কেন? কৃষকদের অবস্থার উন্নতির জন্য যে পরিকাঠামো, পরিকল্পনা ও গবেষণার প্রয়োজন ছিল, তাহার কোনো পরিকল্পনাই কংগ্রেসী নীতিতে ছিল না। প্রয়োজনীয় কার্যের দশ শতাংশও হয় নাই। নরেন্দ্র মোদীরা সেই দিশায় যাত্রা শুরু করিয়াছেন মাত্র। তবে যাত্রাটি শুরু হইয়াছে। ২০১৯ এ জোট সরকার যদি আসে তবে সে যাত্রা যে ভঙ্গ হইবে, তাহাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই।

#টাকার দাম ও তেলের দাম
টাকার দাম পড়িয়া আবারও উঠিয়াছে। তেলের দামও আন্তর্জাতিক বাজারের নিয়মে বাড়িয়া আবার কমিয়া গিয়াছে। কিন্তু আনন্দগণের নিকট পেট্রোলিয়ামের মূল্যবৃদ্ধির সংবাদ থাকিলেও মূল্যহ্রাসের কোনো সংবাদ নাই কারন মূল্যবৃদ্ধির জন্য তাহারা নরেন্দ্র মোদীকে দায়ী করিতে পারে কিন্তু মূল্য হ্রাস পাইলে তাহার কৃতিত্ব মোদীকে? নৈব নৈব চ। তাছাড়া স্বাধীনতার সময় যে স্থলে এক টাকায় এক ডলার ছিল, সেই স্থলে ২০১৪ সাল পর্যন্তই বা টাকার মূল্যের ক্রমাবনতি ঘটিল কেন, তাহার জবাবও আনন্দগণকে দিতে হইবে বৈকি! এত বৎসরকাল তো ভারতসরকারের নিয়ন্ত্রণ আনন্দগণের প্রভু পরিবারটির হস্তেই ছিল। তাহা হইলে টাকার মূল্য হ্রাস পাইতে পাইতে ১ টাকায় ১ ডলার হইতে ২০১৪’র মে মাসে আসিয়া ৬০ টাকায় ১ ডলার হইল কেন?

#দুর্নীতি
নরেন্দ্র মোদীর আমলে সাধারণ স্তরে দুর্নীতি কমিয়াছে কি কমে নাই, তাহা অপেক্ষা অধিক মাহাত্ম্য পূর্ণ হইল, সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে দুর্নীতি কমিয়াছে কিনা। নরেন্দ্র মোদীর ক্যাবিনেটের মন্ত্রীগণ খায়েন না। 2G, 3G, CWG, Coal, দামাদ'জী প্রভৃতি দুর্নীতির হট্টগোল এই মন্ত্রীসভায় নাই।

#নোটবাতিল ও অর্থনীতি
নোট বাতিলের ফলে বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থান নষ্ট হইয়াছে, ইহা চরম সত্য। তেমনই সাম্প্রতিক অতীতে বেশ কিছু নূতন কর্মসংস্থানও হইয়াছে এবং আরও বহু হইবার সম্ভাবনা তৈয়ার হইতেছে। মুদ্রা যোজনা সফল হইতেছে, স্টার্ট আপ ব্যবসাও বৃদ্ধি পাইতেছে। 'মেক ইন‌ ইণ্ডিয়া' গুটি গুটি অগ্রসর হইতেছে, অর্থনীতি ক্রমশঃ অর্গানাইজড্ ও ফর্মাল হইয়া উঠিতেছে। ভারতের বিশাল অর্থনীতি মূলতঃ নগদনির্ভর ও ইনফরমাল হওয়ায় নোট বাতিলের ফলে বহু অসংগঠিত ক্ষেত্রে মানুষ কাজ হারাইয়াছিলেন। কিন্তু দেশের বিশাল অসংগঠিত অর্থনীতিকে সংগঠিত ও স্বচ্ছ করিয়া তুলিতে গেলে এমন না করিয়া উপায় ছিল না, যদিও কাজ সম্পূর্ণ হইতে আরও বহু বাকি।

নোট বাতিল আনন্দগণের নিকট তাণ্ডব বলিয়া প্রতীত হওয়া স্বাভাবিক। চিটফাণ্ডের কালো টাকায় বোধ করি আনন্দবাজারের ব্যবসা ও উপার্জনের বৃহৎ অংশ চলিত। নোট বাতিলের ফলে তাহাদের সঞ্চিত নগদ সম্পদ ও নগদের জোগান ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ায় ব্যবসার আয়তন বহুলাংশে হ্রাস পাইয়াছে। গাত্রদাহ নিতান্ত স্বাভাবিক। উপরন্তু নোট বাতিলের ফলে জালনোটগুলিও বাতিল হইয়াছে। জালনোট ছিল সন্ত্রাসব্যবসায়ীদিগের অন্যতম সম্বল। নোট বাতিলের ফলে জাল নোটগুলি মায়ের ভোগে যাওয়ায় সন্ত্রাসবাদের ডানা এমনই ছাঁটা হইয়াছে যে পাকিস্তানের নাভিশ্বাস উঠিয়া গিয়াছে। কাশ্মীর ব্যতীত ভারতের অন্যত্র তাহারা তেমন  করিয়া দন্তস্ফুট করিতেই পারে নাই। পাকিস্তানপ্রেমী আরবান নকশালদিগের এবং আরবান নকশালপ্রেমী আনন্দগণের ইহাতে প্রভূত জাগতিক (সম্ভবতঃ আর্থিক) অসুবিধা হইয়াছে।

নোট বাতিলের পরবর্তীতে বাজারস্থিত প্রায় সকল মুদ্রাই ব্যাঙ্কে জমা পড়িবার ফলে অর্থনীতিকে সংগঠিত করিবার দিকে অগ্রসর হওয়া গিয়াছে। বহু মুদ্রা ব্যাঙ্কে জমা পড়িবার পর কালো টাকা বলিয়া প্রমাণিত হইয়াছে। চোর ও তস্করবৃন্দের সম্পত্তি ক্রোক করা হইয়াছে ও হইতেছে। এমনকি রিজার্ভ ব্যাংক এমন ইঙ্গিতও দিয়াছে যে ২০০০ টাকার মুদ্রার মুদ্রণও হ্রাস পাইতে চলিয়াছে। ইহার অর্থ হইল সরকার  নগদ-পুঁজির জোগান কমাইতে চাহিতেছে। মানুষ যাতে ২০০০ টাকার মুদ্রায় নগদঅর্থ সঞ্চয় করিয়া রাখিতে না পারে তাহা সুনিশ্চিত করিতে চাহিতেছে। অর্থাৎ সরকার ক্রমশঃ নগদহীন অর্থব্যবস্থার দিকে দেশের অগ্রসরনের উদ্যোগ লইতে চাহিতেছে। তাহাতে গরীবের ক্ষতি নাই। ক্ষতি আনন্দগণের ন্যায় বড় মানুষের, যাহারা আর্থিক অসাম্যের সুবিধাভোগী। আর এই সুবিধাভোগী শ্রেণীর ল্যাজে পা দিয়া বৃহত্তর স্বার্থে দেশের এমন সংস্কারকার্য আর যাহাই হউক, গান্ধী পরিবার করিতে পারিত না। যদি পারিত, তাহা হইলে আর আনন্দগণ তাহাদের জন্য এমন গলা ফাটাইত না। তাহারাই নোট বাতিলের বিরুদ্ধে গলা ফাটাইতেছে, যাহাদের চিনির পুঁটুলি খোয়া গিয়াছে। যাহাদের পুঁটুলি নাই, তাহাদের গলাও নাই।

#আরবান নকশাল, মোদী ও মমতা
প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রের অভাবের কথা বলায় আনন্দগণের ভালো লাগে নাই। তাঁহাদের বক্তব্য হইল তরুণ প্রজন্মের মস্তিষ্ক প্রক্ষালনে আরবান নকশালদিগকে মোদী যখন বিনা বাধায় কাজ করিতে দেন নাই, তখন মমতাদেবীও যদি রাজ্যে বিজেপি কর্মীদের হত্যা দেখিয়াও নির্বিকার থাকেন বা কোনো অঞ্চলে না জিতিয়াও পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করিতে চাহেন বা গণতন্ত্রের সকল নিয়মকে কাঁচকলা দেখাইতে চাহেন, তাহা হইলেও প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করিবার কিছু নাই। আরবান নকশালদিগের সহিত আনন্দগণের সখ্য ও রৌপ্যমুদ্রাঘটিত সংযোগ সুবিদিত। তাহারা হয়ত বা মোদীর সহিত 'ডিল' করিতে চাহে যে মোদী যদি আরবান নকশালদিগের কেশাগ্র স্পর্শ না করেন, তাহা হইলে আনন্দগণও প্রতিদানস্বরূপ এ রাজ্যে মমতাদেবীর বিরোধিতা করিবে। কিন্তু এই প্রকার অসৎ ও সুযোগসন্ধানী 'ডিল' এ মোদী বোধ করি রাজী হন নাই।

#মোদীর সাংবাদিক-অবহেলা
আনন্দগণ ক্ষোভ প্রকাশ করিয়াছে যে মোদী সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেন না। যে সাংবাদিকগণ কলমের খোঁচায় মিথ্যাকে সত্য করিতে পারে, মোদীর সাহস হয় কি করিয়া যে তিনি সেইসব প্রাণীদিগের অহংকারকে তুষ্ট ও পুষ্ট না করিয়া থাকেন? যাহারা যে কোনো সময়ে যে কোনো মিথ্যাকে সম্মিলিত প্রচারের মাধ্যমে সত্য করিয়া তুলিতে পারে, তাহাদের ভয়ে ভীত হইয়া সময়ে সময়ে সম্মেলন আয়োজন করিয়া সত্য-মিথ্যার ব্যবসায়ীবৃন্দের অহংকারকে পুষ্ট করিলে মোদী হয়ত বা ইহাদের এইরূপ সমালোচনার তীক্ষ্ণ নিশানায় থাকিতেন না। কিন্তু প্রশ্ন হইল, মোদী তো জনপ্রতিনিধি। জনসংযোগ তিনি নিরন্তর বজায় রাখিয়াও চলেন। অনবরত জনসভাসমূহে অংশগ্রহণ করেন। বুথকর্মীদের সহিত সংযোগ বজায় রাখেন, সোশ্যাল মিডিয়ায়ও প্রতিনিয়ত সরাসরি সংযুক্ত থাকেন জনগণের সহিত। এতদসত্ত্বেও আনন্দগণ সাংবাদিক সম্মেলন দাবী করে কেন? এমন তো নহে যে তাহাদের মোদীবিরোধী কুৎসার প্রত্যুত্তর কেহ দেয় না! মোদীর বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমের প্রতিটি সমালোচনার জবাব তাহারা পাইয়া থাকে। তাহা হইলে আর সাংবাদিক সম্মেলনের দাবী কেন?

#উপসংহার ও উপদেশ
উপরন্তু, যে তথাকথিত গণমাধ্যম নাগরিকপঞ্জি বিষয়ক তথ্যের বিকৃত ও অর্ধসত্য পরিবেশনের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করিয়া চলে এবং অযৌক্তিক সাম্প্রদায়িক অশান্তির বীজ বপন করিতে চাহে, পাকিস্তানের ন্যায় শত্রুভাবাপন্ন প্রতিবেশী দেশের প্রতি সমর্থন ও ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখা দেশদ্রোহী মানুষজনকে ক্রমাগত মহিমান্বিত করিয়া যাহারা উপস্থাপন করে, কাশ্মীরের বালিকার যৌন নির্যাতন ও হত্যার পর যাহারা বালিকার যন্ত্রণা অপেক্ষা তাহার মুসলিম পরিচয়ের  উপর অধিক আলোকপাত করে এবং প্রকৃত নির্যাতনকারী কে বা কাহারা তাহা নির্ণায়িত হইবার পূর্বেই যাহারা বিশেষ একটি দলের লোকেদের অপরাধী বলিয়া দাগাইয়া দিয়া তাহা(দে)র বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কুৎসা ও অপপ্রচারে রত হয়, তাহারা দেশের প্রধান জনপ্রতিনিধিকে উপদেশ দিবার পূর্বে আত্মবীক্ষণের সু-অভ্যাসটি গড়িয়া তুলিতে পারেন। তাহাতে হয়ত গণমাধ্যমটির হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারের একটি সম্ভাবনামাত্র দেখা দিবে।

https://www.anandabazar.com/editorial/has-the-prime-minister-narendra-modi-ever-listened-himself-1.926879?fbclid=IwAR2XyH7o6CEX97eZZDZXIevfOuMNQSQprBXglLQph227RjLag3Vcm85asYs

Comments

Popular posts from this blog

রথযাত্রা: কুমুদরঞ্জন মল্লিক

নব্য কথামালা: শেয়াল ও সারসের গল্প

Karnataka Election Result 2023: Observations

এত প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে শিল্প-খরা: কেন?