রবীন্দ্রস্মরণ ২০১৯

একটি জাতির উন্নতি করিবার অন্যতম শর্ত হইল যে সেই উন্নতিকে সর্বত্রগামী হইতে হইবে। জাতির কিছু মানুষের অপরিসীম অগ্রসরণ সে জাতির সামগ্রিক অহংকারকে পুষ্ট করিলেও জাতির সাধারণ্যের তাহাতে উপকার হয় না। বরং উক্ত অহংকার সে জাতির সাধারণ্যের উন্নতির পথে প্রধান বাধা হইয়া দাঁড়ায়। সাধারণ বাঙালী রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, বঙ্কিম, সুভাষ ও আরো অন্যান্য মনীষীগণের প্রভায় আপনাকেও দীপ্ত মনে করে বলিয়াই আপন দীপ্তি অর্জন করিবার একাগ্রতা বা সমষ্টিগত উদ্যম তাহার নাই। বাঙালী তাই জাতিগত উন্নতির কথা না ভাবিয়া চিরকাল ব্যক্তিস্তরে উন্নতির কথা ভাবিয়া আসিয়াছে। এক বাঙালী এক'শত হইয়াছে, এক'শত বাঙালী কদাপি এক হইতে পারে নাই। তাহার সেই একার্থপরতায় ও সেই আকাশকুসুম অহংকারের অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিয়া তাহার সেই অহংকারকে আরও বৃদ্ধি করিয়া তুলিয়াছে দুর্জনে। বাঙালীর শত্রু বাঙালীর মস্তিষ্ক প্রক্ষালন করিয়াছে যে তুমি আপনি সুন্দর, তুমি অনন্যসাধারণ, তোমার সহিত অন্য জাতির তুলনা চলে না। আর দুর্জনের এমন তোষণে তুষ্ট হইয়া বাঙালী সত্যই বিশ্বাস করিয়াছে সে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি বা জাতি আপনাকে শ্রেষ্ঠ বলিয়া সততই বিশ্বাস করে, তাহার শ্রেষ্ঠত্ব লাভের পথ সে আপনি রুদ্ধ করিয়া দাঁড়ায়। শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে সে উৎকর্ষের পথ হইতে ভ্রষ্ট হয়। আজিকার বাঙালীর অতলের পথে অবনমন এমন নিষ্ফল অহংকারেরই ফলস্বরূপ।

রবীন্দ্রনাথ ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালীর এমত চরিত্রের দুই মেরু। এক দিকে যেমন ব্যক্তিগত উন্নতির শিখরস্পর্শী রবীন্দ্রনাথ আপনামধ্যে মানবতা ও ঈশ্বরত্বের মেলবন্ধন করিয়াছেন, অপর দিকে তেমনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্ধকারাচ্ছন্ন, অবনমনশীল বাঙালী মনীষার অতল স্পর্শ করিয়া বাঙালীকে নরকদর্শন করাইয়াছেন। উভয়কেই বাঙালী কদাপি ভুলিবে না। ক্রান্তদর্শী রবীন্দ্রনাথ কালজয়ী ঈশ্বরত্বে উপনীত হইবেন, আর অপরিণামদর্শী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালীর নরকগামীতার প্রতীক হইয়া চিরজীবী হইবেন। আজ পঁচিশে বৈশাখ বিশ্বকবির পুণ্যতিথিতে এ কথা না বলিলে রবীন্দ্রস্মরণ অসম্পূর্ণ রহিয়া যাইত বলিয়া আমার মনে হইয়াছে।

Comments

Popular posts from this blog

রথযাত্রা: কুমুদরঞ্জন মল্লিক

কোভিশিল্ড কাহিনী

নব্য কথামালা: শেয়াল ও সারসের গল্প

SSC চাকরি বাতিল: যোগ্য - অযোগ্য বিভাজন আদৌ সম্ভব?