নাগরিকত্ব আইন, ইমরান খান ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

নাগরিকত্ব আইন ভারতের সংসদে পাশ হওয়ার পরেই টুইটারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সর্বপ্রথম প্রতিক্রিয়া দেখে যা মনে হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমে সেই ধারনা সত্যি হল। ধারণা হয়েছিল যে ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনের নতুন সংশোধনীটির বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস বা ইউ এন এর দ্বারস্থ হতে চাইবেন পাক প্রধানমন্ত্রী এবং তা নিয়ে একটি রম্য প্রতিবেদন লিখেছিলাম। তারপর নাগরিকত্ব আইনটির মত সুন্দর একটি আইন নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে উঠল, বিশেষতঃ পশ্চিমবঙ্গে যখন শুরু হল উন্মত্ত হিংসা, তখন আর প্রতিবেদনটি সেইসময় ব্লগে দিই নি। মনে হয়েছিল, এমন পরিবেশে রম্য প্রতিবেদন মানুষ হয়ত সম্যক উপভোগ করতে পারবেন না। কিন্তু আজ দিচ্ছি, কারণ যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার দেশজুড়ে শুরু হয়েছে নাগরিকত্ব আইনের মত একটি সর্বাঙ্গসুন্দর আইনের বিরুদ্ধে, এই রম্য প্রতিবেদন হয়ত সেই অযথা উত্তাপকে কিঞ্চিৎ হলেও প্রশমিত করতে পারবে।

যে দাবী পাক প্রধানমন্ত্রী তুলবেন বলে ভেবেছিলাম, বাস্তবে দেখা গেল, অনুরূপ দাবী তুলে দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীই, ইতিপূর্বেও একাধিক ইস্যুতে যাঁর বয়ান একাধিকবার প্রায় হুবহু মিলে গিয়েছে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বয়ানের সঙ্গে। এ প্রসঙ্গে স্মর্তব্য, বালাকোটে ইণ্ডিয়ান এয়ারফোর্সের এয়ার স্ট্রাইকের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া যা ছিল, পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মন্তব্যও ছিল প্রায় হুবহু তাই এবং তা নিয়ে রাজনৈতিক মঞ্চে বাকযুদ্ধও কম হয় নি।


দেখা যাক CAA নিয়ে ইমরান খানের প্রাথমিক মন্তব্য নিয়ে লেখা রম্য প্রতিবেদনটি কি ছিল।

---------------------------------------------------

CAB নিয়ে ইমরান খানের মন্তব্য: রাজনৈতিক প্রলাপ? (ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯)


"খাসা ছিল তাঁতী তাঁত বুনে
কাল হল এঁড়ে গরু কিনে।"


দিব্যি খেলতেন ক্রিকেট। বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারদের মধ্যে একজন ছিলেন এই ইমরান খান। আগুনে বোলার! গোটা বিশ্বে ক্রিকেটার ইমরান খান ছিলেন অবিসংবাদিত। বল হাতে দৌড়ে আসলে অনেক ব্যাটসম্যানেরই পা কাঁপত। কিন্তু রইলেন না সন্তুষ্ট তাতে ইমরান খান। হয়ে গেলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।

ক্রিকেটার থেকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যাত্রাপথের ক্রমপরিবর্তনটি স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায় ইমরান খানের স্ত্রী’দের ব্যক্তিত্বের পরিবর্তনশীলতা লক্ষ্য করলে। প্রথম স্ত্রী জেমাইমা গোল্ডস্মিথ বৃটিশ হাই সোসাইটির একজন কেতাদুরস্ত সদস্য। ধনী গোল্ডস্মিথ পরিবারের দুলালী, লেখিকা ও অ্যাক্টিভিস্ট। দ্বিতীয় স্ত্রী রেহম খান একজন সাংবাদিক। আদতে পাকিস্তানী, কিন্তু বৃটিশ নাগরিক। অর্থাৎ ক্রিকেটবিশ্বের সর্বকালের সেরা সেলিব্রেটি ক্রিকেটার ইমরান খান বিয়ে করেছিলেন আধুনিকা জেমাইমাকে। ন'বছর আধুনিকাসঙ্গ উপভোগ করার পর ক্রমপরিবর্তিত ইমরান নিলেন মধ্যমপন্থা। বিয়ে করলেন একজন কর্মরতা মহিলাকে যিনি আদতে পাকিস্তানী। অর্থাৎ সেলিব্রিটি ক্রিকেটার ততদিনে মাটিতে পা রেখেছেন এবং হয়েছেন একজন পাকিস্তানী রাজনীতিক। মাত্র ন'মাস পরেই রেহম খানের সঙ্গে ডিভোর্স এবং তারপর বিয়ে করলেন তৃতীয় ও বর্তমান স্ত্রী বুশরা বিবিকে যিনি ছিলেন ইমরান খানের স্পিরিচুয়াল মেন্টর এবং একজন সুফিপন্থী অধ্যাত্মবাদী। আপাদমস্তক বোরখাবৃতা বুশরা বিবির স্বামী ইমরান আর জেমাইমা গোল্ডস্মিথের স্বামী ইমরান বোধ হয় মানসিকভাবে এক ব্যক্তি নন। কে বলতে পারে হয়ত সেটি উপলব্ধি করেই ইমরানের জীবন থেকে সরে গিয়েছিলেন দ্বিতীয় স্ত্রী রেহম খান? অভিব্যক্তির এই ক্রমপরিবর্তনই কি ইমরান খানকে নিয়ে গিয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদে? ক্রিকেটার ইমরান খান থেকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য বুশরা বিবির স্বামী হওয়ার কি প্রয়োজন ছিল? প্রমাণ করা কি জরুরী ছিল যে তিনি কেবলই একজন গোঁড়া মুসলমান, কোনো বিশ্বনাগরিক নন?


পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে গেলে পাকিস্তানের রাজনীতি আয়ত্ত করতে হয়।‌ আর পাকিস্তানের রাজনীতি বোধ করি একলক্ষ্য—কিভাবে, যেন তেন প্রকারেণ, ভারতবর্ষের জমি দখল করে ভারতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা যায়। নিজের দেশের সার্বিক উন্নতি, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, পর্যটনশিল্পের বিকাশ, প্রাচীন তক্ষশীলার পুনর্বিকাশ ঘটিয়ে তাকে বিশ্বশিক্ষার পীঠস্থান হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ—এসব কতকিছুই তো করার আছে পাকিস্তানের, যা করলে ক্ষুদ্র অথচ বিশিষ্ট একটি দেশ হিসেবে বিশ্বমানচিত্রেই একটি বিশেষ ইতিবাচক জায়গায় তারা পৌঁছে যেতে পারত। কিন্তু সেসব কিছুই না করে সেই ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত তারা শুধু বোমা বন্দুকসহ ভারতে প্রবেশ করার চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে, তাও আবার “তার কে নীচে সে”। অর্থাৎ বেআইনিভাবে। “To bleed India through thousand cuts” যে দেশের রাজনীতির মূলমন্ত্র ও চালিকাশক্তি, তেমন দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে গেলে বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার হলে কি শুধু চলে? যাই হোক, ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদের মান রক্ষা করেছেন। ভারতের প্রতিটি আভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত মন্তব্য করে উনি প্রমাণ করেছেন যে সেলিব্রিটি ক্রিকেটার হারিয়ে গিয়েছেন, পাকিস্তানের নীতিই শুধু বেঁচে আছে ইমরান খানের মধ্যে।


কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা হঠানোর পরে পাক-প্রধানমন্ত্রী পৃথিবী জুড়ে “শিখর হইতে শিখরে”, “ভূধর হইতে ভূধরে” ছুটে বেড়িয়েছেন ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দল পাকানোর জন্য। কিন্তু কেউ রাজী হয় নি পাক-প্রধানমন্ত্রীর মত ভারতের হাঁড়ির খবর নিয়ে হুটোপাটি করতে।‌ কোথায় কোথায় না গিয়েছেন বুশরা বিবির স্বামী! কিন্তু পাকিস্তানের ধুঁকতে থাকা রাষ্ট্রীয় ক্যাশবাক্স থেকে প্রধানমন্ত্রীর রাহাখরচই শুধু বেরিয়ে গিয়েছে তাতে। পাল্টা আমদানি হয় নি কিছুই, হয় নি কাশ্মীরলক্ষ্মীলাভও।


কাশ্মীর নিয়ে পাক-প্রধানমন্ত্রীর নাপাক মিশন ব্যর্থ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে দেখলেন রাষ্ট্রের ভাঁড়ে মা ভবানী। তখন তিনি কি করেন? তিনি তো জানতেন‌ শুধু ক্রিকেট খেলতে আর নারীহৃদয় জয় করতে! তাহলে? অগত্যা ইমরান খান তখন পরামর্শ দিতে শুরু করলেন কিভাবে গরু, মোষ, মুরগী প্রতিপালন করে পাকিস্তানের দরিদ্র জনগণ কিছু বেশি পয়সা ঘরে তুলতে পারেন। কিভাবে গরু দুইয়ে দুধের উৎপাদন দ্বিগুণ করা যায়, কিভাবে মুরগীকে ইঞ্জেকশন দিয়ে তাদেরকে বেশি ডিম পাড়তে সক্ষম করে তোলা যায় ইত্যাদি। ক্রিকেটার ইমরান তখন হয়ে গেলেন গাই-বকরি-মুরগা-ভঁইস ম্যানেজমেন্টের পরামর্শদাতা। কিন্তু পাকিস্তানীদের ভাগ্য তাতে ফিরল না। অর্থনীতির হাল ফেরাতে ইমরান খান বিক্রি করলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের আটটি মোষ, বিক্রি করলেন পুরোনো হেলিকপ্টার, নিলামে চড়ালেন পুরোনো গাড়িও। বিশ্বকে দ্ব্যর্থহীনভাষায় জানিয়ে দিলেন যে অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু তাতে কি? পাকিস্তানের রাজনীতির লক্ষ্য কোনোদিনই পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নতি ছিল না। পাকিস্তানের রাজনীতির লক্ষ্য বরাবরই ছিল ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাসিকা অনুপ্রবেশ করানো এবং সম্ভব হলে ভারতের ‘পাকা ধানে মই দেওয়া'। এক আদর্শ প্রতিবেশীর ধর্ম হল প্রতিবেশীর সুখের সময়ে তার নিজস্ব বিষয়ে না ঢোকা, কিন্তু বিপদের সময় তার পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। ভারতের এই প্রতিবেশী দেশটির নীতি এর সম্যক বিপরীত। পাকিস্তান হল সেই প্রতিবেশী যে ভারতের সমস্ত অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অবশ্যম্ভাবীভাবে অযাচিত মন্তব্য করে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়েও তার ব্যতিক্রম হল না। গাই-বকরি-মুরগা-ভঁইস ম্যানেজমেন্টের পরামর্শদাতা মন্তব্য করে বসলেন যে CAB নাকি আনা হয়েছে আর এস এস এর প্ল্যানমাফিক কারণ হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ভারতকে জগৎসভায় প্রতিষ্ঠা করা আর এস এস এর দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনারই নাকি বাস্তব রূপায়ণ করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই সূত্রে মোদীকে ‘ফ্যাসিস্ট’ও বলে ফেললেন পাক-প্রধানমন্ত্রী। মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারতকে তুলনা করলেন নাৎসী জার্মানির সঙ্গে। বললেন নাৎসী জার্মানি যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ হয়েছিল, মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারতও নাকি সেইরকম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করছে। ইমরান খানের এই বক্তব্যই প্রতিধ্বনিত হলো কংগ্রেস নেতৃত্বের কণ্ঠে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে, মার্কসবাদী কম্যুনিস্ট পার্টির কণ্ঠেও। আর এস এস এর মত একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের প্রচার এতগুলি রাজনৈতিক দল মিলে এমন নিখরচায় কেন করল এবং তা-ও আবার পাক-প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রায় হুবহু পুনরাবৃত্তি করে, সে ধন্দ অনেকেরই এখনও কাটে নি। কেবলমাত্র কিছু নির্যাতিত মানুষকে সুস্থভাবে বাঁচার সুযোগ দেওয়া কিভাবে বিশ্বযুদ্ধের কারণ হয়ে উঠতে পারে, সে প্রশ্নও অমীমাংসিতই রয়েছে। আর এস এস এর মত একটি অরাজনৈতিক সংগঠনকে দেশের নানা মৌলিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের চালিকাশক্তি বলে চিহ্নিত করে আর এস এস কে প্রয়োজনাতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়ে যাচ্ছে কি না এমন প্রশ্নও অবশ্য তুলেছেন নেটিজেনরা।


ইমরান খান টুইট করেছেন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নাকি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংক্রান্ত আইনগুলির সবগুলিরই বিরোধী। বাস্তব হল, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে শরণার্থী সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে UNHCR এর নির্দেশিকা অনুসারেই। তবে গাই-বকরি-মুরগা-ভঁইস ম্যানেজমেন্টের পরামর্শদাতা প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যে অনেকেই কিছু মনে করেন নি। কাশ্মীর নিয়ে ইমরান খানের অত্যুৎসাহী হুটোপাটির পর ওঁর কোনো মন্তব্যেই কেউ আর তেমন আশ্চর্যান্বিত হওয়ার রসদ বোধ করি পাচ্ছেন না। ব্যর্থ ও হতাশাগ্রস্ত একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী যদি নিকটতম প্রতিবেশী সম্বন্ধে পরচর্চা করেই কিঞ্চিৎ হতাশামোচন করতে চান, তবে সেটুকু সুযোগ প্রতিবেশী হিসেবে ইমরান খানের হয়ত পাওয়া উচিত। তবে ভবিষ্যতে পাক-প্রধানমন্ত্রী ভারতের এই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটিকে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসের কষ্টিপাথরে যাচাই করতে চাইলে বা রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশনে নিয়ে তুলতে চাইলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই, বাস্তবে তা যত অবান্তরই হোক্ না কেন, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ছককে তা যতই লঙ্ঘন করুক না কেন।


নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি নাকি পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক চুক্তিকেও লঙ্ঘন করে, এমনই উল্লেখিত হয়েছে ইমরান খানের টুইটবার্তায়। কিন্তু কিভাবে লঙ্ঘন করে সে বিষয়ে কিছুই বলেন নি তিনি। পাকিস্তান তার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অবাধে নির্যাতন করতে পারবে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেয়েদের অপহরণ করে ইসলাম গ্রহন করতে জোর করতে পারবে, মুসলমানের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হতে তাদের বাধ্য করতে পারবে এমন কোনো শর্ত ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে অবশ্যই ছিল না। বরং নেহরু-লিয়াকত চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশই তাদের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতেই অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল। কিন্তু কোনো দেশ এই অঙ্গীকার পূরণ না করলে অপর দেশটি ড্যামেজ কন্ট্রোলে কোনোদিনই কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না এমন কোনো শর্ত ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে ছিল বলে জানা যায় না। বস্তুতঃ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, ২০১৯ ভারতের দিক থেকে সেই ড্যামেজ কন্ট্রোলেরই উদ্যোগ মাত্র। কারণ পাকিস্তান কথা রাখে নি। কিন্তু এতদসত্ত্বেও পাক-প্রধানমন্ত্রীর এ হেন মন্তব্য সিরিয়াস আবহেও কিঞ্চিৎ কৌতুকের জন্ম নিঃসন্দেহে দিয়েছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের নির্যাতিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আশ্রয় ও নাগরিকত্ব দিলে ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক চুক্তি কিভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। তাই পাক-প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের প্রকৃত তাৎপর্য কিছু আছে, নাকি তা কেবলই প্রলাপ মাত্র, তাও অজ্ঞাত। কৌতুকাবহ ও অতিরঞ্জিত মন্তব্য করায় পাক-প্রধানমন্ত্রী ক্রমশঃই সদ্য প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতির নিকট প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হচ্ছেন।

(শেষ)
---------------------------------------------------------------------
পুনশ্চ: আজ ২০শে ডিসেম্বর, ২০১৯ এ এসে অবশ্য মনে হচ্ছে যে ইমরান খানের সঙ্গে রাহুল গান্ধীর যতখানি সাদৃশ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাদৃশ্য বোধ করি তার চেয়েও ঢের বেশি। 

Comments

Popular posts from this blog

রথযাত্রা: কুমুদরঞ্জন মল্লিক

নব্য কথামালা: শেয়াল ও সারসের গল্প

এত প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে শিল্প-খরা: কেন?

West Bengal: A Security Threat to India