শব্দ ও শ্রুতি নির্ভর ভারত সভ্যতার আতসবাজি শব্দবিহীন হতে পারে না

জয়দীপ সেনের এই পোস্টটা পাবলিক পোস্ট ছিল না, আমি অনুরোধ করি বলেই হয়ত জয়দীপ এইটি পাবলিক করেছেন যাতে শেয়ার করতে পারি।👇

https://www.facebook.com/share/p/1BKyjaGduZ/?mibextid=oFDknk

আমার এ হেন অনুরোধের কারণ হল এই যে এই পোস্টে পোস্টদাতা আমাকে ট্যাগ করেছিলেন, “দেবযানী দি, এইটা পড়ে দেখতে পারো” বলে। ফলে পড়েছি এবং শ্রী সেনের সঙ্গে কমেন্টালাপও করেছি। শ্রী সেনকে তখনই বলেছিলাম যে তাঁর এই পোস্ট যদি আমি আমার নোট সহ শেয়ার করি তাহলে কড়া সমালোচনা করব, এবং তাতে যেন পোস্টদাতা কিছু মাইণ্ড না করেন। আমার মনে হয়েছিল (মনে হওয়া ভুল হতেও পারে) যে জয়দীপ সেন আমাকে এতে ট্যাগ করেছেন আমার অন্য একটি পোস্ট দেখে যার লিঙ্ক দেওয়া হল এইখানে👇

https://www.facebook.com/share/p/17pUBt1P6A/?mibextid=oFDknk

দীপাবলীর আগে আতসবাজিবিরোধী এই ধরনের পোস্টগুলি আদতে প্রোপাগান্ডা পোস্ট বলে প্রতীত হয়, এবং আমার বিশ্বাস এসব দেখলে মুখ বন্ধ করে থাকার দিন আমাদের এখন ফুরিয়েছে। কিন্তু মুখ খোলার সাহস যাঁরা করবেন তাঁদের শত্রু ঘরে বাইরে উভয় স্থানেই। যেমন, উক্ত পোস্টটি করার পরেই কোনো এক সুবর্ণা ভট্টাচার্য্য (আমার ফ্রেন্ডলিস্টে নেই এবং তাঁর সঙ্গে ইতিপূর্বেও কোনোদিন সোশ্যাল মিডিয়া ইন্টারঅ্যাকশন আমার হয়েছে বলে মনে করতে পারি না) এসে গেলেন এবং আমাকে বলে বসলেন আমি নাকি mentally sick. কিন্তু এহেন কমেন্ট দেখেও আমার চুপ করে থাকাটা সুবর্ণা দেবীর হয়ত মনঃপূত হয় নি।

তারপর দেখা গেল মিমি চক্রবর্তী যে শব্দবাজিবিরোধী প্রপাগান্ডার মডেল, সেই একই প্রপাগান্ডা পোস্ট করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশও। তখন মনে মনে আরও নিশ্চিত হওয়া গেল যে এইটি হয়ত আদতেই একটি well orchestrated প্রপাগান্ডাই। ফলে X হ্যাণ্ডলে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পোস্টের রিপ্লাই সেকশনে গিয়ে তাঁদের পোস্টে একখানি রিপ্লাই করি এবং সেইটি পোস্ট করি ফেসবুকেও।👇 https://www.facebook.com/share/p/1FyBaT3Cfn/?mibextid=oFDknk

অতঃপর এই পোস্টেও এসে পড়েন সুবর্ণা এবং আবার শুরু করেন আমাকে reckless গাল পাড়া। এবার আমি তাঁকে আর হতাশ করি না এবং তাঁর সঙ্গে কমেন্টালাপে engage করি। ফলে উত্তরোত্তর আরও বেশি রেগে যেতে থাকেন সুবর্ণা এবং চালিয়ে যেতে থাকেন আমার বিরুদ্ধে তাঁর abusive slurs. কিন্তু গালাগালির জবাব যদি কেউ পাল্টা গালাগালি দিয়ে না দেয়, বরং মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারে, তাহলে যিনি গাল পাড়ছেন তাঁর ভারী রাগ হয়। সুবর্ণাদেবীও ‘হিন্দুত্ববাদীদের জন্য সাক্ষাৎ ক্যান্সার’, ‘inflated ego’, ‘পড়াশোনা নেই’ ইত্যাদি বলে আমাকে ক্ষেপানোর প্রভূত প্রয়াস করেও যখন আমার কমেন্ট থেকে পাল্টা গালাগালি বের করতে পারলেন না, তখন শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়ে ভেগে গেলেন আমার ওয়াল থেকে।

তার ঠিক দু’দিন পরেই, হয়ত কাকতালীয়ভাবেই, জয়দীপ সেনের এই পোস্টে আমাকে ট্যাগ করেন শ্রী সেন। এতে অনেকগুলি আর্গুমেন্ট তিনি দিয়েছেন (যেগুলির অতি বিস্তারিত কাউন্টার আর্গুমেন্ট ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়ে গিয়েছে) যথা “আচ্ছা শব্দবাজি পোড়ানোর জন্য যে এই আবাল যুক্তি দেন আপনার freedom of religious practice বলে : ভারতীয় শাস্ত্রে দীপাবলিতে শব্দবাজির অস্তিত্ব দেখাতে পারবেন? খুঁজে বার করুন তো বাল্মীকি রামায়ণ থেকে বা বৃহৎ তন্ত্রসার থেকে! তাই নিজেদের ফুর্তির আয়োজনকে justify করতে আবালের মতো হিন্দু ধর্ম কে টানবেন না”। অদ্ভুত ব্যাপার হল, সুবর্ণা ভট্টাচার্য্যও বলেছিলেন অনেকটা এই একই রকম কথা। বলেছিলেন, “আমার রিলিজিয়ন নিয়ে কথা বলার আপনি কে?” তার পরিপ্রেক্ষিতে আমি যখন জিজ্ঞেস করেছিলাম, “আপনার রিলিজিয়ন নিয়ে একটিমাত্র শব্দও আমি কোথায় বলেছি তা দেখান্” তখন প্রসঙ্গান্তরে চলে গিয়েছিলেন সুবর্ণা।‌

জয়দীপ সেনই হোন বা সুবর্ণা ভট্টাচার্য্য, যাঁরা উৎক্ষিপ্ত হয়ে অন্যের ব্যক্তিগত ডোমেইনের মধ্যে ঢুকে পড়া থেকে নিজেদেরকে আটকাতে পারছেন না, তাঁদের কাছে আমার বিনীত আবেদন একটিই। আমাদের সংস্কৃতি যেহেতু এক-পুস্তক-নির্ভর সংস্কৃতি নয়, ফলে দীপাবলী যাঁরা উদযাপন করেন, তাঁরা যে যেরকমভাবে ভাবতে চান তাঁদেরকে সেইরকমভাবেই ভাবতে দেওয়া হোক না! নিজের ভাবনা অপরের উপর চাপাতে হবে কেন? যেমন ধরুন আমি মনে করি বাজিতে আলো ও শব্দ দুই-ই থাকবে।‌ থাকতেই হবে কারণ পিতৃপুরুষকে যখন স্বর্গালোকে যাত্রা করিয়ে দেওয়া হচ্ছে তখন তাতে আলোকমালা ও শব্দের বাদ্য দুই-ই থাকতে বাধ্য কারণ হিন্দুরীতিতে কোনো শুভকার্য বাদ্য বিনে হয় না। সেখানে “পিতৃণাং মার্গদর্শনম্” হচ্ছে একেবারে চুপিসাড়ে শুধু আলোর রোশনাই জ্বালিয়ে, এমন হওয়া আমাদের অন্যান্য সকল ধর্মসাংস্কৃতিক রীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়। উপরন্তু, শক্তির পূজায় শব্দও লাগে প্রচুর। যে কারণে ঢাক, কাঁসর আদি বাদ্যের প্রয়োজন (যেখানে নারায়ণ পূজায় ঢাকের বাদ্যিতে সরাসরি বারণ আছে আর লক্ষ্মীপূজায় বারণ আছে ঘন্টাধ্বনিতে)। তাছাড়া উল্কাদানের ক্ষেত্রে ফায়ারওয়ার্কস ব্যবহারের নিদান শাস্ত্রে আছে বলেই পড়েছি এবং উল্কাদান পদ্ধতি ও তার মন্ত্র তর্কের প্রয়োজনে পূজা পদ্ধতির টেক্সটবই থেকে সরাসরি পড়ে নিতে বাধ্য হয়েছি। উল্কা মানে ‘meteors’. অর্থাৎ প্রচুর শব্দ তাতে হবেই। পিতৃপুরুষকে প্রত্যাবর্তনের মার্গ প্রদর্শনের সময় আলো ও শব্দ দুই-ই থাকবে এ-ই স্বাভাবিক। এ নিয়ে লিখেছি একটি পৃথক পোস্টও।👇 https://www.facebook.com/share/p/1Aw9qrNihh/?mibextid=oFDknk

শব্দ ছাড়া ভারত সংস্কৃতি অকল্পনীয়। ভারত সভ্যতা আলোক ও দৃষ্টিনির্ভর নয় বরং শব্দ ও শ্রুতিনির্ভর (যে কারণে ধৃতরাষ্ট্র জন্মান্ধ হওয়া সত্ত্বেও ছিলেন প্রবল বিদ্বান, অতি শিক্ষিত ও মহাবলশালী। অর্থাৎ চোখ এদেশে বিদ্যা, শিক্ষা, শাস্ত্র ও শস্ত্র চর্চার অপরিহার্য অঙ্গ ছিল না। কিন্তু কান ছিল অপরিহার্য যে কারণে এ দেশে ছিল শব্দভেদী বাণের ধারণাও)। বেদের অপর নাম যে ‘শ্রুতি’ সে-ও বোধ করি অনেকেই জানেন। আজ এই শ্রুতি ও শব্দনির্ভর সভ্যতা নিয়ে বৈশ্বিক স্তরে চলছে গবেষণাও। আন্দাজ করা হচ্ছে যে সুবিশাল সব প্রস্তরখণ্ড কেটে মন্দির নির্মাণের সময় প্রস্তরখণ্ডগুলির মুভমেন্টের জন্যও প্রাচীন ভারতবর্ষে হয়ত বা ব্যবহৃত হত শব্দই। আবার দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে একটি স্বর থেকে পরবর্তী স্বরের মধ্যে, যেমন ষড়জ (সা) থেকে ঋষভের (রে) মধ্যে বা ঋষভ থেকে গান্ধারের (গা) মধ্যে আছে 22টা শ্রুতি। অর্থাৎ এক স্বর থেকে পরবর্তী স্বরের মধ্যে 22 টা sonic level এর ধ্বনির অস্তিত্ব আছে। সঙ্গীতসাধকরা এই 22টি শ্রুতিকে আয়ত্ত করার সাধনা করেন। বলা হয় স্বয়ং মহাদেব ছাড়া এই 22টি শ্রুতি গাইতে বা বাজাতে কেউ পারেন না। উপরন্তু, সৃষ্টির আদিতেও ছিল একটি ধ্বনি (big bang)এবং হিন্দু scriptures অনুযায়ী সেই ধ্বনি হল ওঁংকার ধ্বনি যা কিনা সৃষ্টির আদি নাদ। ওঁ-কারকে যে কারণে বলা হয় ব্রহ্মনাদ।

এমন একখানি শব্দনির্ভর সভ্যতার আতসবাজিরা সব নীরব হয়ে যাবে? এ কি স্বাভাবিক? কিন্তু রবীন্দ্রনাথ তাহলে কেন লিখলেন না, “এবার নীরব করে দাও হে তোমার আতসবাজিরে”?—

কথা হল গিয়ে আজ যারা শব্দবাজিতে আপত্তি তুলছেন এবং শান্তিপ্রিয় যে সব হিন্দু মানুষেরা পথ কুকুরদের কথা ভেবে তা মেনে নিচ্ছেন এবং জয়দীপ সেন বা সুবর্ণা ভট্টাচার্য্যদের মত হিঁদুয়ানী দেখানো মানুষেরা, যাঁরা নাকি শব্দবাজির সমর্থকদের ‘হাতে মাথা কাটতে’ আসছেন এই বলে যে শব্দবাজির সমর্থন করে হিন্দুত্ববাদীরা নাকি আদতে সেলফ গোল দিয়ে ফেলছেন মাকুদের (মার্ক্সিস্ট) বিরুদ্ধে আইডিওলজিক্যাল লড়াইয়ের মাঠে, তাঁরা হয়ত আন্দাজ করতে পারছেন না (অথবা হয়ত আন্দাজ করতে পারছেন) যে আজ যে আপত্তিটা শব্দবাজির ক্ষেত্রে উঠছে, কাল তা উঠবে ঢাক, শাঁখ ও কাঁসরের বাদ্যি নিয়েও। উঠবে বলা ভুল, বরং বলতে হবে যে উঠে গিয়েছে। এবারের দুর্গাপূজায় কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের তিন চারটি জেলার তিন চারটি বারোয়ারী পুজোর প্যাণ্ডেলে ঢাক, শাঁখ ও কাঁসরের বাদ্যিতে আপত্তি উঠে গিয়েছে (https://www.facebook.com/share/p/189jZyFuyN/?mibextid=oFDknk)এবং তা নিয়ে ক্যালকাটা হাইকোর্টে ইতিমধ্যেই মামলা করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। হাইকোর্ট সে মামলার পরবর্তী শুনানির আগে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে দাবী করেছে জবাবদিহি এবং সেই রিপোর্ট দেওয়ার জন্য কোর্টের কাছ থেকে কিছু সময় চেয়ে নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। অর্থাৎ আজ যাঁরা দাঁড়াচ্ছেন শব্দবাজির বিরুদ্ধে, কাল তাঁরা বিরোধিতা করবেন ঢাকেরও। তখন জয়দীপরা কি করবেন? আমার সঙ্গে কমেন্টালাপে জয়দীপ সেন এর একটি উত্তরও দিয়েছেন। তা হল— “Debjani Bhattacharyya সেটার বিরুদ্ধে লড়তে হবে, কিন্তু শব্দবাজিকে justify করে নয়। তাহলে লড়াইটাই দুর্বল হবে।” কথা হল গিয়ে শব্দবাজিও আতসবাজিরই একটি প্রকার বিশেষ মাত্র। আতসবাজির ব্যবহার যদি জাস্টিফায়েড হয় তবে তার একটি সাবসেটের ব্যবহারও জাস্টিফায়েড।‌ তবে তা সত্ত্বেও শব্দবাজির ব্যবহারকে পৃথকভাবে জাস্টিফাই যদি নিতান্ত করতেই হয়, তাহলে তার জাস্টিফিকেশন সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে নানা প্লাটফর্মে ইতিমধ্যেই করা হয়ে গিয়েছে। এবং আদালতের পক্ষেও যতখানি নিষিদ্ধকরণ সম্ভব ছিল আদালতও তা করে ফেলেছে ইতিমধ্যেই, শব্দের তীব্রতার (ডেসিবেল) মাত্রা বেঁধে দিয়ে। এর বেশি কিছু করার বিষয়ে হাত পা বোধ করি আদালতেরও বাঁধা। কারণ এর চেয়ে বেশি কিছু করতে গেলে মানুষ যে সামগ্রিকভাবে সে নির্দেশকে অমান্য করে বসতেও পারে আদালত তা বুঝেছে বিলক্ষণ।

আমাদের কোনোরকম সাংস্কৃতিক এক্সপ্রেশন থেকে সমাজগতভাবে একইঞ্চিও পিছু হঠতে আমরা আদৌ আর রাজী হব কি না, আদত প্রশ্ন সেইটি।‌ মানুষ ভিন্ন অন্যান্য প্রাণীসমাজের প্রতি সংবেদনশীলতার বিষয়টি আমাদের মধ্যে চিরকালই ছিল। আবার কিছু অসভ্য, বদমায়েশ লোকও সমাজে চিরকালই সর্বত্রই ছিল। কিন্তু তাদের % উপস্থিতি সব কালেই নেহাৎ কম এবং মানুষ তা সত্ত্বেও সবদিক সামলেই বাজি ফাটাতো, উৎসব করত এবং তা নিয়ে আইন আদালত হত না। কিন্তু আজ হচ্ছে কারণ আমাদের রাজ্যে সংখ্যাগতভাবে কোণঠাসা হচ্ছি আমরা নিজেরাই।

একথা সত্যি যে শাস্ত্রাচার আজ আমরা সবটা মানি না। কিন্তু না মানাটা যে ফ্রিডমের অংশ, মানতে চাওয়াও যে সেই একই ফ্রিডমের অংশ সেইটি ভুললে চলবে কেমন করে? এবং নিয়ম আচারের কতটা বাদ দিলে সে বাদ দেওয়া আমাদের অস্তিত্ব সঙ্কটের কারণ হয়ে দাঁড়াবে না তা ভাবতে হবে আগে থেকেই। চকোলেট বোম ফাটানোর মধ্যে বাচ্চাদের মধ্যে এক ধরনের ছেলেমানুষী ডাকাবুকোপনা জন্ম নেয় যেটি সঠিকভাবে পরিচালিত হলে তার চরিত্র গঠনে কাজে লাগতে পারে। কেন সেটি বাদ দেব যেখানে আজকালকার শহুরে বাচ্চাদের জন্য দামালপনা করে খেলে বেড়ানোর সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে? এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে যে ছেলেবেলায় পড়শীর সাথে ঝগড়া করে আমার দুই দাদা পড়শীর পায়খানা ইঁট ফেলে বন্ধ করে সেখানে বাইরে থেকে (স্কাইলাইট দিয়ে) বাক্স বোমা ছুঁড়ে মেরেছিল। বিষ্ফোরণে পায়খানার দেওয়াল ফেটে যায়। এগুলো বাচ্চা ছেলেদের চূড়ান্ত লেভেলের বদমায়েশি ছিল। বাড়িতে এর ফলে তাদের জুটেছিল উত্তম মধ্যমও। কিন্তু এইসব ছেলেমানুষী বদমায়েশির মাধ্যমে তাদের জানা ছিল যে কিভাবে এইসব অপারেট করতে হয়। ছেলেমেয়েদের বড় হওয়ার সময়ে এসব দামালপনারও প্রয়োজন আছে। অথচ আজকের শহুরে বাচ্চাদের এসব করার কোনো স্কোপ নেই। তাই যেখানে যেটুকু আছে, সেসবই যদি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আগামী প্রজন্মের অবস্থা হবে “কানে গুঁজেছি তুলো আর পিঠে বেঁধেছি কুলো”। দীপাবলীতে বাজি ফাটবে বছরে মাত্র একবার। কুকুরদের ভয় কাটিয়ে দেওয়ার প্রয়াস করলে সরমা’র পুত্ররাও অটোমেটিক্যালি তাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে, বিশেষতঃ সারমেয়রা যেখানে প্রবল বুঝদার প্রাণী এবং মানুষের সব কথা তারা আদতে বোঝে।

শেষ করার আগে বলা প্রয়োজন যে হিন্দু বাঙালী পলায়নরত সেই 1947 সাল থেকে, কারণ তাদের পিছনে সাপোর্ট হিসেবে ভারত সরকারও ছিল না, পাকিস্তান সরকারও না। তারা অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ুক এইটি ভারত সরকারও চেয়েছিল আবার পাকিস্তান সরকারও। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়েছিল তাহলে কারা? উত্তর হল, কলকাতার সাধারণ মানুষ। পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে তাঁরা পথে নেমে হেনেছিলেন retaliatory আঘাত এবং মেরে তাড়িয়েছিলেন কলকাতার মুসলমানদের। একবার নয়। একাধিকবার। এই ইতিহাসগুলো বলা হয় না। কারণ হিন্দু বাঙালীর বীরত্বের গল্প চেপে দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনামাফিক যারই ফলশ্রুতিতে বাঙালীর আজ এই নপুংসক দশা।

এই সময় তাই শক্তি পূজার সবরকম এক্সপ্রেশনকে ধারণ করার, শস্ত্র ও শাস্ত্র চর্চার এবং হিন্দু বাঙালীর বীরত্বের ইতিহাস পুনঃস্মরণ করার। অন্যকে “আবাল” বলে গাল পাড়ার আগে জয়দীপ সেন, সুবর্ণা ভট্টাচার্য্যদেরকে এই প্রেক্ষিতগুলি বিবেচনার মধ্যে আনতে হবে।


Comments

Popular posts from this blog

রথযাত্রা: কুমুদরঞ্জন মল্লিক

কোভিশিল্ড কাহিনী

নব্য কথামালা: শেয়াল ও সারসের গল্প

SSC চাকরি বাতিল: যোগ্য - অযোগ্য বিভাজন আদৌ সম্ভব?