রাজ্যে ইসলাম আগ্রাসনে বাংলাপক্ষের ভূমিকা: পর্ব ৩

ইসলামপুরের ঘটনা নিয়ে এই সিরিজ যাঁরা পড়ছেন এবং শেয়ার বা কপি পেস্টের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন, তাঁরা জানেন যে সিরিজের ২য় পর্বে লিখেছিলাম যে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রুলিং পার্টির একাংশ এমন আছেন, যাঁরা বাংলা ও বাঙালী সেন্টিমেন্টকে স্টিমুলেট করে আসলে একটা বৃহত্তর ভাষা আগ্রাসন ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকে আড়াল করছেন বলে সন্দেহ হয়।

এই পর্বটি ফেসবুকে দিয়েছিলাম 29th সেপ্টেম্বর।

https://www.facebook.com/story.php?story_fbid=338550050044749&id=100016692693608

ইসলামপুরে চুপিসাড়ে বাংলা শিক্ষকের জায়গায় উর্দু শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যখন পশ্চিমবঙ্গ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, তখন নিম্নোক্ত সংবাদ অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের একশ্রেণীর মানুষ বাংলা ও বাঙালী প্রীতিপ্রদর্শন করার উদ্দেশ্যে দুর্গাপুজোর একটি প্যাণ্ডেল জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছেন।

কেন?

কারণ প্যাণ্ডেলটিকে "হলুদের প্যাণ্ডেল" না বলে বলা হয়েছে "হলদি কা প্যাণ্ডাল"। তাঁদের মতে এ হল দুর্গাপুজোয় হিন্দি আগ্রাসন।

এবার দয়া করে ভাবুন, যাঁরা বাঙালী, খাঁটি বাঙালীয়ানা যাঁদের আত্মায় অবস্থান করে, তাঁরা কি কস্মিনকালেও, কোনো কারণেই, পৃথিবীর কোনো প্রান্তেই দুর্গাপুজোর কোনো প্যাণ্ডেল জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা ভাবতে পারেন?

দুর্গাপুজোর প্যাণ্ডেল জ্বালিয়ে দেওয়ার আওয়াজ তোলামাত্র তাঁদের বাঙালীত্ব নিয়েই কি প্রশ্ন উঠে যায় না?

হিন্দি আগ্রাসনের অজুহাত দেখিয়ে যাঁরা কেবলমাত্র "হলদি কা প্যাণ্ডাল" বলা হয়েছে বলে সেই প্যাণ্ডাল জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা বলা তো দূর, ভাবতে পর্যন্ত পারেন, তাঁরা আর যা-ই হোন্ পশ্চিমবাংলার পক্ষে নন। তাঁরা বাঙালীর পক্ষেও নন। যতই তাঁরা নিজেদেরকে বাঙালীয়ানার ঠিকাদার বলে প্রজেক্ট করুন না কেন।

এই তথাকথিত বাঙালিদের মধ্যে একজন মন্তব্য করেছেন যে প্যাণ্ডেল থেকে মায়ের মূর্তি বের করে নিয়ে এসে প্যাণ্ডেল জ্বালিয়ে দেবেন (প্যাণ্ডেল-স্পনসরের আর্থিক ক্ষতি সুনিশ্চিত করার জন্য বোধ হয়)। অর্থাৎ মন্দির আর মূর্তিকে আলাদা করে দেখতে চান এঁরা।

প্যাণ্ডেল হল ঐ চার দিন মায়ের মন্দির। মন্দির থেকে তার আত্মাকে আলাদা করার কথা ভাবতে বা বলতে যাঁরা পারেন, তাঁদের শুধু বাঙালীয়ানা নয়, হিন্দুত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠে যায় না কি? এঁরা কারা?

যাঁরা মায়ের পূজোর প্যাণ্ডেল থেকে আজ মা'কে বের করে আনতে চাইছেন, তাঁরা যে কাল (বাংলাদেশে বা পশ্চিমবঙ্গের বহু জায়গায় যেভাবে মায়ের মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা হয়, সেইভাবে) মূর্তি তৈরিতে হিন্দিওয়ালাদের পয়সা ব্যবহৃত হয়েছে এই অজুহাতে মায়ের সেই মূর্তিও ভেঙ্গে ফেলতে চাইবেন না, তার কি গ্যারান্টি আছে?

অনেকেই আন্দাজ করতে পেরেছেন যে এ হেন ধুয়ো তোলার পিছনে ওঁদের আসল উদ্দেশ্য ছিল ইসলামপুরের উর্দুবিরোধিতার আবহে একটা পাল্টা হিন্দিবিরোধিতার হাওয়া তৈরি করা। অর্থাৎ ইসলামপুরে জোর করে উর্দু চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ তথাকথিত বাংলা ও বাঙালী পক্ষের পছন্দ হয়ত হয় নি।

যদি কেউ প্রশ্ন করেন যে কলকাতায় দুর্গাপুজোর প্যাণ্ডেলকে "হলুদের প্যাণ্ডেল" না বলে  "হলদি কা প্যাণ্ডাল" বলা হবেই বা কেন?

তার উত্তর হল, কলকাতা ভারতবর্ষের একটি কসমোপলিটান মেট্রো সিটি এবং নবরাত্রি পুরো ভারতবর্ষ পালন করে। অর্থাৎ মহালয়া থেকে শুরু করে বিজয়া দশমী পর্যন্ত শারদীয়া নবরাত্রি বা দুর্গাপুজো প্রায় গোটা ভারতবর্ষের উৎসব। এক একটা রাজ্য এক এক ভাবে, এক এক extent এ তা উদযাপন করে। "হলুদ"কে যাঁরা "হলদি" বলে দুর্গাপুজো তাঁদেরও ততটাই উৎসব, যতটা আমাদের, বাঙালীদের।

অর্থাৎ এক্ষেত্রে "হলুদ"কে "হলদি" বলনেওয়ালাদের সাথে আমরা এক সাংস্কৃতিক সূত্রে বাঁধা, কিন্তু উর্দু ভাষা বা উর্দুভাষীদের সাথে আমাদের কোনো সাংস্কৃতিক মিলই নেই। আগ্রাসনের আসল চেহারাটি দেখা ও বোঝার জন্য নীচের সংবাদটি এবং সংবাদের সঙ্গে পরিবেশিত সমস্ত কমেন্ট ইত্যাদিগুলি পড়া উচিত। https://www.sangbadpratidin.in/kolkata/teaser-controversy-jolts-kolkatas-santoshpur-lake-pally-puja/ (ক্রমশঃ)

Comments

Popular posts from this blog

রথযাত্রা: কুমুদরঞ্জন মল্লিক

মমতার সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতির শিকড় দুর্নীতি ও ভ্রষ্টাচারের স্পৃহার মধ্যে

SSC চাকরি বাতিল: যোগ্য - অযোগ্য বিভাজন আদৌ সম্ভব?

Radical Forces Spreading Tentacles: Bangladesh to West Bengal to Jharkhand